প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

শস্য আমদানি বন্ধ রাখা ৩ দেশের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের মামলা

কিয়েভ থেকে খাদ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রতিবেশী তিনটি দেশের বিরুদ্ধে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে মামলা করেছে ইউক্রেন। ওই তিনটি দেশ হচ্ছে- স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরি। রুশ আগ্রসনের শিকার এই দেশটির অভিযোগ, ইউক্রেনের ইইউ প্রতিবেশীদের এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। অবশ্য এসব দেশ বলছে, সস্তায় শস্য আমদানির প্রভাব থেকে নিজেদের কৃষকদের রক্ষা করতে এই নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসনের পর থেকে কৃষ্ণসাগরে জাহাজ চলাচলের প্রধান লেন বন্ধ হয়ে যায় এবং এর জেরে স্থলপথে বিকল্প রুট খুঁজতে বাধ্য হয় ইউক্রেন। এর ফলে মধ্য ইউরোপে প্রচুর পরিমাণে শস্য ঢুকতে থাকে।

আর এর জেরে সেসব দেশের কৃষকরা তখন থেকেই প্রতিবাদণ্ডসমাবেশ করে আসছেন। তাদের অভিযোগ, ইউক্রেনীয় শস্যের চালান তাদের ক্ষতি করছে এবং স্থানীয় বাজারকে ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে।

আর সেই চাপের ফলে ২৭ সদস্যের ইইউ ব্লক চলতি বছরের শুরুতে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও সেই সঙ্গে বুলগেরিয়া এবং রোমানিয়াতে ইউক্রেনের শস্য আমদানির ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে সম্মত হয়েছিল।

সময়সীমার শেষ হওয়ার দিনে ইইউয়ের নির্বাহী সংস্থা হিসেবে ইউরোপীয় কমিশন এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বুদাপেস্ট, ওয়ারশ এবং ব্রাতিস্লাভার সরকার ইউরোপীয় কমিশনের এই পদক্ষেপ মানতে অস্বীকার করে এবং শস্য আমদানির বিষয়ে তাদের নিজস্ব বিধিনিষেধ ঘোষণা করে। পরে সোমবার এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় ইউক্রেন। এদিন ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া সিভরিডেনকো এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের জন্য এটি প্রমাণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, (ইউরোপীয় কমিশনের সিদ্ধান্তের বাইরে) ব্লকের সদস্য রাষ্ট্রগুলো পৃথকভাবে ইউক্রেনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, তাই আমরা তাদের (স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরি) বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) মামলা করছি। সিভরিডেনকো আরো বলেছেন, একতরফা নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউক্রেনীয় রপ্তানিকারকরা ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং তারা উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

অবশ্য পোল্যান্ড বলেছে, তারা সবকিছু অগ্রাহ্য করে শস্য আমদানির বিষয়ে আরোপিত এই নিষেধাজ্ঞা তারা বজায় রাখবে। পোল্যান্ড সরকারের মুখপাত্র পিওর মুলার বলেছেন, আমরা আমাদের অবস্থান বজায় রাখছি, আমরা মনে করি এটিই সঠিক। অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ এবং ইইউ ও আন্তর্জাতিক আইন থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতার ভিত্তিতেই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এমনকি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় করা এই মামলা পোল্যান্ডকে প্রভাবিত করতে পারবে না বলেও জানান তিনি।

এদিকে নিজেরা আমদানি না করলেও পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়া এখনো ইউক্রেনীয় শস্য তাদের দেশের ভেতর দিয়ে অন্যান্য বাজারে পরিবহনের অনুমতি দিচ্ছে। মূলত রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনের মূল মিত্র হিসেবে রয়েছে পোল্যান্ড এবং স্লোভাকিয়া। কিন্তু শস্য আমদানি ঘিরে কিয়েভের সঙ্গে এই দুদেশের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্ববাজারে সূর্যমুখী তেল, গম, বার্লি এবং ভুট্টার মতো ফসলের বিশ্বের বৃহত্তম সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে ইউক্রেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগর বন্দর অবরোধের ফলে দেশটির রপ্তানিযোগ্য প্রায় ২০ মিলিয়ন টন শস্য আটকে যায়। এর ফলে বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম বেড়ে যায়। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close