প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৮ জুন, ২০২৩

পাকিস্তানে চরম মন্দা, সেনা কর্মকর্তাদের বিলাসী জীবন

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটের কথা কারো অজানা নয়। একদিকে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল, অন্যদিকে জীবিকা নির্বাহের জন্য সেখানে নিত্যসংগ্রাম লেগেই আছে। কিন্তু এই অর্থসংকটের কোনো প্রভাবই দেশের সেনাবাহিনীর ওপর পড়েনি। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিলাসিতায় কমতি দেখা যায় না।

কয়েক সপ্তাহ আগেও জীবিকার হাহাকার দেখা গেছে পাকিস্তানে। বিনা মূল্যে ময়দা পাওয়ার জন্য ট্রাকের পেছনে দৌড়েছিলেন সাধারণ মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গিয়েছিল। পাকিস্তানে বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার তলানিতে ঠেকেছে। আইএমএফ ঋণ দিতে অস্বীকার করায় অর্থনৈতিক সংকট আরো তীব্র হয়েছে দেশটিতে। এ কারণে চাপ সামলাতে আমদানি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। খবর এবিপির।

সেই পাকিস্তানেরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেপ্তার নিয়ে নতুন করে দেশটিতে অশান্তি শুরু হয়। ইমরানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পথে নামেন তার সমর্থকরা। ইতিহাসে প্রথমবার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা যায় পাকিস্তানের রাস্তায়। যে দেশে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন টালমাটাল, সেখানেই কিন্তু দেখা যায় সম্পূর্ণ উল্টো চিত্রও। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ওপর এই অর্থসংকটের কোনো প্রভাবই পড়ে না। তাদের বিলাসিতায়ও কোনো কমতি নেই।

জিডিপির বিচারে পাকিস্তান বিশ্বে ৪২তম স্থান অধিকার করে আছে। অথচ সামরিক শক্তির দিক থেকে বৈশ্বিক তালিকায় এই দেশ প্রথম সারিতে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সপ্তম স্থানে রয়েছে ওই তালিকায়, যা ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ইসরায়েলের মতো দেশের চেয়েও ওপরে।

পাকিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন হলো সেই দেশের সেনাবাহিনী। তাদের অধীনে রয়েছে স্কুল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা। রয়েছে রাজস্ব আদায়ের বহু মাধ্যম।

দেশটির সেনাবাহিনীতে এ মুহূর্তে কর্মরত আছে ৫ লাখ ৬০ হাজার জওয়ান। দুই হাজার ট্যাংক, চার হাজারের বেশি অত্যাধুনিক কামান, ৪২৫টি যুদ্ধবিমান এবং সাবমেরিন রয়েছে পাকিস্তানি সেনার হাতে।

এ ছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে রয়েছে চীনা সেনাবাহিনীর সমর্থন, যা তার শক্তি বৃদ্ধি করেছে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে চীনের সেনাবাহিনী পাকিস্তান বা ভারতের চেয়ে উন্নত। পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যায় ভারতের চেয়েও এগিয়ে পাকিস্তান। সে দেশের সেনাবাহিনীর কাছে ১৫০টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। ভারতের কাছে রয়েছে ১৪০টি।

১৯৯৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে পাকিস্তান সরকার যত অর্থ খরচ করেছে, তার ২০ শতাংশ খরচ হয়েছে সেনাবাহিনীর উন্নয়নের স্বার্থে, যা দেশের বাজেটের এক-পঞ্চমাংশ। সরকারের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ ছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে দেশটির সেনাবাহিনীর রোজগার আকাশছোঁয়া। তাদের অধীনে স্কুল থেকে শুরু করে চাষযোগ্য বিপুল জমি রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অধীনে রয়েছে সে দেশের ভূখণ্ডের ১২ শতাংশ জমি।

দেশটিতে সেনাবাহিনীই সর্বেসর্বা। গণতান্ত্রিক দেশ হলেও এখানে সেনাবাহিনীর আদেশই শেষ কথা। দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, জনগণ দ্বারা নির্বাচিত কোনো সরকারই পাকিস্তানে আজ পর্যন্ত পাঁচ বছর টিকতে পারেনি। বারবার এ দেশ দেখেছে সামরিক শাসন।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ৫০টিরও বেশি আলাদা আলাদা সংস্থার মালিক। যেখান থেকে সারা বছরে ২,৬৫০ কোটি ডলার আয় হয়। এই পরিসংখ্যান ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি কিংবা মুকেশ আম্বানিদের আয়ের চেয়েও বেশি। ২০০৭ সালে জানা গেছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সম্পত্তি হচ্ছে এক হাজার কোটি পাউন্ড।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close