প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
খেরসনে বাঁধ উড়িয়ে দিল রুশ বাহিনী
* ভয়াবহ পানির তোড়, মানবিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা * জরুরি বৈঠকে জেলেনস্কি, নিরাপত্তা সতর্কতা * নিচু এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি
ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলে আবারও বড় ধরনের একটি আক্রমণ নস্যাৎ করে দেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া। একই সঙ্গে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে ফেলার দাবিও করেছে দেশটি।
অন্যদিকে দক্ষিণ ইউক্রেনে অবস্থিত একটি বাঁধ রাশিয়া উড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। বাঁধটি রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে অবস্থিত। মঙ্গলবার (৬ জুন) পৃথক দুই প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দোনেৎস্ক অঞ্চলে আরেকটি বড় ধরনের ইউক্রেনীয় আক্রমণ ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার দাবি করেছে রাশিয়া। একই সঙ্গে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করারও দাবি করেছে তারা। অন্যদিকে পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে কিয়েভ অগ্রগতি লাভ করেছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। যদিও রাশিয়ার দখলে যাওয়া ভূমি পুনরুদ্ধারে ইউক্রেনের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়েছে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। এর আগে সোমবার রাশিয়া বলেছিল, সপ্তাহান্তে ইউক্রেনীয় বাহিনী দোনেৎস্ক অঞ্চলের দক্ষিণ অংশে বড় আক্রমণ শুরু করেছিল, সেটি তারা ব্যর্থ করে দিয়েছে।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা অবশ্য এ বিষয়ে বিস্তৃত কোনো তথ্য সামনে আনেননি। তবে সোমবার নিজের রাত্রিকালীন ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কিছুটা রহস্য রেখে বলেন, বাখমুত থেকে এমন খবর এসেছে- যে খবরের জন্য তারা সবাই অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় দোনেৎস্কের বাখমুতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর অগ্রসরের প্রশংসাও করেন তিনি।
অবশ্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি যখন ইউক্রেনে সৈন্য পাঠিয়েছিলেন তখন ক্রেমলিন ইউক্রেনে দ্রুত বিজয়ের প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু রুশ বাহিনী ইউক্রেনে ব্যর্থতার মুখে পড়েছে এবং অনেক স্থানে ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাল্টা প্রতিরোধের মুখে পিছুও হটেছে।
এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সর্বশেষ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আক্রমণ চালানোর সময় ইউক্রেনীয় বাহিনীর সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে ফেলেছে রাশিয়ান বাহিনী। এসব হামলায় আটটি লিওপার্ড যুদ্ধ ট্যাংকসহ ২৮টি ট্যাংক এবং ১০৯টি সাঁজোয়া যান ধ্বংস করেছে রুশ সেনারা। এতে আরো বলা হয়, রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেন ১৫০০ সেনা হারিয়েছে। রুশ এই মন্ত্রণালয় টেলিগ্রামে বলেছে, আগের দিন বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পরও কিয়েভ সরকার ২৩তম এবং ৩১তম যান্ত্রিক ব্রিগেডের অবশিষ্টাংশকে পৃথক একত্র ইউনিটে পুনর্গঠিত করেছে এবং তারা আক্রমণাত্মক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
রয়টার্স অবশ্য স্বাধীনভাবে এসব রিপোর্ট যাচাই করতে পারেনি। অন্যদিকে রাশিয়ার সর্বশেষ এই দাবি সম্পর্কে কিয়েভের কাছ থেকেও তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া রাশিয়া এবং ইউক্রেন প্রায়ই একে অপরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করার দাবি করে থাকে, যা স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায় না।
এদিকে পৃথক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, দক্ষিণ ইউক্রেনের একটি পানির বাঁধ উড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনীয় ও রাশিয়ান উভয় বাহিনীই জানিয়েছে, দক্ষিণ ইউক্রেনের রাশিয়ান নিয়ন্ত্রিত অংশে সোভিয়েত যুগের সুবিশাল বাঁধ মঙ্গলবার উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে যুদ্ধপীড়িত অঞ্চলজুড়ে পানি ছড়িয়ে পড়েছে। অবশ্য বাঁধ ধ্বংসের জন্য উভয় পক্ষই অপরকে দোষারোপ করেছে।
রয়টার্স বলছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ভিডিওতে কাখোভকা বাঁধের চারপাশে একের পর এক তীব্র বিস্ফোরণ হতে দেখা যাচ্ছে। আবার অন্যান্য ভিডিওতে দেখা গেছে, বাঁধের অবশিষ্টাংশের মধ্য দিয়ে পানির ঢেউ বয়ে যাচ্ছে এবং পাশে থাকা ব্যক্তিরা তাদের দুঃখ প্রকাশ করছেন। তবে এসব ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা হয়নি। ৩০ মিটার উঁচু এবং ৩.২ কিমি (২ মাইল) লম্বা এই বাঁধটি ১৯৫৬ সালে কাখোভকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অংশ হিসেবে ডিনিপ্রো নদীর ওপর নির্মিত হয়েছিল। এই বাঁধটি রাশিয়ায় সংযুক্ত ক্রিমিয়ান উপদ্বীপে এবং জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রে পানি সরবরাহ করে থাকে।
"