প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০২ জুন, ২০২৩

যুদ্ধে যেতে সৈনিকদের অস্বীকৃতি সেনাবাহিনী থেকে পলায়ন

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ছেড়ে লোকজন চলে যাচ্ছে এবং এই বাহিনীর জন্য নতুন সৈন্য নিয়োগ দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। সেনাবাহিনী ত্যাগ করে চলে আসা সৈন্যরা বিবিসিকে বলছেন, দুবছর আগে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নেওয়া সামরিক জান্তা বর্তমানে গণতন্ত্রপন্থি সশস্ত্র আন্দোলন দমন করতে হিমশিম খাচ্ছে।

কেউ সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে চায় না। তাদের নিষ্ঠুরতা এবং অন্যায় কর্মকাণ্ডকে লোকরা ঘৃণা করে, বলেন নে অং। প্রথমবার তিনি যখন তার ঘাঁটি থেকে পালানোর চেষ্টা করেন, সে সময় তাকে রাইফেলের বাঁট দিয়ে মারাত্মকভাবে পেটানো হয়। তাকে বলা হয় বিশ্বাসঘাতক। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন এবং বিরোধী গ্রুপগুলোর সহযোগিতায় সীমান্ত পার হয়ে চলে যান থাইল্যান্ডে। প্রতিরোধ বাহিনীতে আমার একজন বন্ধু আছে। আমি তাকে ফোন করলাম এবং সে থাইল্যান্ডের লোকজনকে আমার কথা বলল। তাদের সাহায্য নিয়ে আমি এখানে এসে পৌঁছাই, বলেন তিনি। এখন সে আরো ১০০ জন সৈন্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গোপন একটি বাড়িতে থাকে যারা সম্প্রতি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ছেড়ে পালিয়ে এসেছে।

এই সৈন্যরা, যারা তাদের নিজেদের দেশের লোকজনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তারা আত্মগোপন করে আছে। এ কারণে তাদের আসল নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যারা প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছে তারাই তাদের আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিচ্ছে।

সৈন্য ও পুলিশের পক্ষত্যাগ : নির্বাসিত জাতীয় ঐক্যের সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে সামরিক বাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নেওয়ার পর থেকে ১৩ হাজার সৈন্য ও পুলিশ তাদের বাহিনী ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

আরো সৈন্য ও পুলিশ কর্মকর্তা যাতে পক্ষ বদল করে সেজন্য নির্বাসিত সরকার নগদ অর্থ এবং আরো কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। থাইল্যান্ডের নিরাপদ আশ্রয়ে যারা অবস্থান করছে তাদের একজন ১৯ বছর বয়সি মং সেইন। সেখানে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন।

আমি সামরিক বাহিনীর ভক্ত ছিলাম, বলেন মং সেইন। তিনি ভেবেছিলেন এই বাহিনীতে যোগ দিলে তার পরিবার গর্বিত হবে। তবে গণতন্ত্রকামী আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনী যেভাবে সহিংস হয়ে উঠল, তাতে সৈন্যদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি নাটকীয়ভাবে বদলে গেল। অনলাইনে দেখলাম লোকজন আমাদের ‘সামরিক কুকুর’ বলছে, বলেন তিনি। মিয়ানমারে কাউকে এই প্রাণীর নাম ধরে ডাকা অপমানজনক। এতে আমার খুব খারাপ লাগল। মং সেইন বলেন, ওপরের মহল থেকে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা ও গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার যে নির্দেশ দেওয়া হতো তার মতো একজন সৈন্যের সেসব অমান্য করার কোনো উপায় ছিল না। তিনি মনে করেন সামরিক বাহিনীর অবস্থান এখন দুর্বল এবং তিনি যে সেখান থেকে চলে এসেছেন এটাও তার একটা কারণ।

সীমান্ত এলাকায় লড়াই : মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন বেসামরিক মিলিশিয়া গ্রুপের নেটওয়ার্ক পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস বা পিডিএফের পাশাপাশি আরো যেসব জাতিগত সশস্ত্র গ্রুপ সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সেগুলোও এখন অনেক বেশি শক্তিশালী বাহিনী হয়ে উঠেছে এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশের অনেক জায়গাতেই তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close