প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৭ মে, ২০২৩

গাছের নিচে ফেলে যাওয়া হচ্ছে সিরিয়ান শিশুদের

এক শীতের রাতে সিরিয়ার ইব্রাহিম ওসমান নামাজ পড়তে বেরিয়েছিলেন। এরপর তিনি একটি পরিত্যক্ত মেয়ে শিশুকে কোলে নিয়ে বাড়িতে ফেরত আসেন। শিশুটিকে তার জন্মের কয়েক ঘন্টা পরে গ্রামের মসজিদের দরজায় ফেলে যাওয়া হয়। সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম এলাকার হাজানোতে বাস করেন ইব্রাহিম ওসমান। তিনি জানান, ওই পরিত্যক্ত শিশুটিকে পাওয়ার পর, তিনি তাকে বাড়িতে নিয়ে যান এবং তার স্ত্রীকে বলেন যে তার জন্য একটি উপহার নিয়ে আসা হয়েছে। ওসমান জানান, পরে তারা শিশুটির নাম রাখেন হাইবাতুল্লাহ। এটার অর্থ ‘আল্লাহর উপহার’। তারা শিশুটিকে নিজেদের সন্তানের মতো করে বড় করার সিদ্ধান্ত নেন। সিরিয়ায় শিশু দত্তক নেওয়া নিষিদ্ধ। এ কারণে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হাইবাতুল্লাহকে বড় করার অনুমতি চেয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে সিরিয়ান কর্মকর্তারা বলেন, ‘সিরিয়ায় দীর্ঘ ১২ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। যুদ্ধকবলিত এ দেশটিতে চরম দারিদ্র্য জেঁকে বসেছে। এ কারণে জলপাই গাছের নিচে, মসজিদ ও হাসপাতালের সামনে নবজাতকদের গোপনে ফেলে যাচ্ছেন সিরিয়ানরা।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান ফর ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস-এর (এসটিজে) মতে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়াতে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এভাবে শিশু ফেলে যাওয়ার ঘটনা ২০১১ সালে একবার আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত করা হয়। তবে গত দু-তিন বছরে দেশটিতে পরিত্যক্ত শিশু পাওয়ার ঘটনা আবার বেড়েছে। গত মার্চে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সিরিয়ান ফর ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস বলেছে, ২০২১ সালের শুরু থেকে ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১০০ জনেরও বেশি শিশু পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ৬২ জন ছিল মেয়ে শিশু। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হবে।

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে শিশু ফেলে যাওয়ার ঘটনা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছে এ মানবাধিকার সংস্থাটি। তারা বলছে, এসব ঘৃণ্য ঘটনার পেছনে রয়েছে দারিদ্র্য, অস্থিতিশীলতা, নিরাপত্তাহীনতা, বাল্যবিবাহ, যৌন নির্যাতন ও বিবাহবহির্ভূত গর্ভধারণ। সিরিয়ার যুদ্ধে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে হাজার হাজার অবকাঠামো।

এএফপিকে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা জাহের হাজ্জো বলেন, গত বছরের প্রথম ১০ মাসে সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ৫৩টি পরিত্যক্ত শিশু পাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৭টি ছেলে ও ২৫টি মেয়ে শিশু। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ চলতি বছরে একটি আইন জারি করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, পরিত্যক্ত শিশুদের যে এলাকায় পাওয়া যাবে, সেই এলাকার আরব, সিরিয়ান ও মুসলিম হিসেবে তাদের নিবন্ধিত করা হবে। সূত্র : আরব নিউজ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close