প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

বাল্যবিয়েতে জড়িত থাকায় আসামে গ্রেপ্তার ২ হাজার

বাল্যবিয়ে রোধে আইন রয়েছে। কিন্তু এটি পুরোপুরি কার্যকর করা যাচ্ছে না। ফলে এমন বিয়েতে জড়িত থাকার অভিযোগ ব্যাপক গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়ে দুই হাজার নারী-পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটি ঘটেছে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে

বিবিসি শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানায়, পুলিশ বাল্যবিবাহ ঠেকাতে এ পর্যন্ত দুই হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। বাল্য বিবাহ করেছে, এমন কম বয়সি ছেলেরা যেমন এর মধ্যে আছে, তেমনই ধরা হয়েছে তাদের পরিবার আর কাজি ও পুরোহিত- যারা ওইসব বিয়ে দিয়েছেন, তাদেরও।

যেসব জেলায় অভিযান চলছে, তার মধ্যে মুসলমানপ্রধান জেলাগুলোও আছে। রাজ্যের একটি মুসলিম সংগঠন বাল্যবিবাহ রোধে এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে, কিন্তু তারা বলছে শুধু পুলিশ দিয়ে নয়, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। তবে আসামের এক মুসলিম রাজনীতিবিদ ও সংসদসদস্য এসব গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করছেন।

অন্যদিকে যেসব পরিবারের পুরুষ বা কমবয়সি ছেলেদের পুলিশ নিয়ে গেছে, সেসব পরিবারের নারীরা বা কমবয়সি স্ত্রীরা পড়েছেন বিপদে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বিয়ের বয়স এবং কম বয়সে মাতৃত্বের বিপদ নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সে সূত্রেই তিনি এই সপ্তাহের গোড়ার দিকে ঘোষণা করেন, বাল্যবিবাহের অপরাধে যুক্তদের একটা তালিকা করা হয়েছে। আসাম পুলিশ বলছে, ৪০০৪টি বাল্যবিবাহের মামলা রুজু হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত আট হাজারেরও বেশি মানুষ। সেসব মামলার ভিত্তিতে শুক্রবার থেকে পুলিশ ধরপাকড় শুরু করে। শনিবার দুপুরে টুইট করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, ‘২২১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই অভিযান ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত চলবে।’

শনিবার সন্ধ্যায় আসাম পুলিশকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৫৮। যাদের ধরা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে বাল্যবিবাহ রোধ আইনে মামলা হয়েছে, কিন্তু যেসব ঘটনায় বিয়ে হওয়া কিশোরীর বয়স ১৪-এর কম, সেইসব ক্ষেত্রে শিশুদের ওপরে যৌন নির্যাতনরোধ আইনেও মামলা করা হচ্ছে।

আসাম পুলিশের মহা নির্দেশক জি পি সিং বলছেন, ‘ধৃতদের মধ্যে ৫২ জন হলেন কাজী এবং পুরোহিত, যারা বাল্যবিবাহ দিয়েছিলেন। যত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার মধ্যে সবথেকে বেশি সংখ্যক ধরা পড়েছে বিশ্বনাথ, বাকসা, বরপেটা, ধুবরি, হোজাই আর কোকরাঝাড় জেলাগুলি থেকে।’

বরপেটা জেলার হাউলি শহর লাগোয়া নগরজার গ্রামের এক বাবা আর ছেলেকে শুক্রবার ভোররাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বাবা নওশের আলি আর তার ছেলে লালচাঁদ বাদশার বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক একটি মেয়েকে পুত্রবধূ করে সংসারে নিয়ে এসেছে।

লালচাঁদ বাদশার মা কোহিনূর বেগম টেলিফোনে বলেছেন, ‘ছেলের বয়স ২১ হয়ে গেছে, আর বউয়ের বয়স এখন ১৯। ১৬ মাস আগে ছেলের বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু বউয়ের বয়স কম বলে তাকে এখনও ঘরে আনি নি। এটা পুলিশ এসেও দেখেছে যে ঘরে বউ নাই। কিন্তু তাও স্বামী আর ছেলেকে থানায় নিয়ে গেল। স্বামী বিকলাঙ্গ, কোনো রোজগারপাতি নাই। ছেলে হাজিরা দিয়ে কামাত আর আমি সুপারি কাটার কাজ করে কিছু পয়সা পাই। এখন আমাদের সংসার কী করে চলবে তাই বুঝছি না। ঘরে কোনো গার্জেন নাই।’

ভারতে বাল্যবিবাহ রোধ আইনটি ১৯২৯ সালের। তা সংশোধন করা হয় ২০০৬ সালে। সর্বশেষ আইন অনুযায়ী ছেলেরা ২১ বছরের আগে আর মেয়েরা ১৮ বছরের আগে বিয়ে করতে পারে না। তবে ইউনিসেফের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি বছর প্রায় দেড় লক্ষ বাল্যবিবাহ হয়ে থাকে ভারতে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close