প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

সিবিএস নিউজের সাক্ষাৎকারে বাইডেন

তাইওয়ানকে রক্ষা করবে মার্কিন বাহিনী

চীন তাইওয়ানে হামলা চালালে মার্কিন বাহিনী ভূখণ্ডটিকে রক্ষা করবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাইওয়ান নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যেই এই মন্তব্য করলেন তিনি।

রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর উত্তেজনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ই এ বিষয়ে বেশ কড়া বক্তব্য দিয়েছে। তবে তাইওয়ান ইস্যুতে এটিই জো বাইডেনের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে স্পষ্ট বক্তব্য এবং এটি বেইজিংকে নিশ্চিতভাবেই ক্ষুব্ধ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

রবিবার সিবিএস নিউজের প্রকাশিত সাক্ষাৎকার ‘৬০ মিনিটস’-এ বাইডেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়- মার্কিন বাহিনী চীনের দাবিকৃত স্ব-শাসিত দ্বীপটিকে রক্ষা করবে কি-না। বাইডেন উত্তর দেন- হ্যাঁ, যদি বাস্তবে সেখানে (তাইওয়ানে) অভূতপূর্ব কোনো আক্রমণ হয়, তাহলে (রক্ষা করবে)। বাইডেন ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন সেটি আরো স্পষ্ট করতে মার্কিন বাহিনী চীনা আক্রমণের ক্ষেত্রে তাইওয়ানকে রক্ষা করবে কি-না তা জিজ্ঞাসা করা হলে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তর দেন- ‘হ্যাঁ’।

সাক্ষাৎকারে দেওয়া বাইডেনের স্পষ্ট এমন মন্তব্যের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত তাইওয়ান ইস্যুতে তাদের দীর্ঘদিনের নীতি থেকে বেরিয়ে এসেছে বলে মনে হয়েছে। এছাড়া এই দ্বীপ ভূখণ্ডটি রক্ষায় মার্কিন সেনাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিষয়ে তার সর্বশেষ এই বক্তব্যও ছিল আগের অন্যান্য বিবৃতির চেয়ে স্পষ্ট।

রয়টার্স বলছে, তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ‘কৌশলগত অস্পষ্টতার’ নীতিতে আটকে আছে এবং তাইওয়ানের ওপর চীনা আক্রমণ হলে ওয়াশিংটন সামরিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে কি-না তা স্পষ্ট করেনি।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তাইওয়ানের প্রতি মার্কিন নীতির পরিবর্তন হয়নি। মুখপাত্র বলেছেন, প্রেসিডেন্ট আগেও এই কথা বলেছিলেন। এমনকি এই বছরের শুরুর দিকে টোকিও সফরের সময়ও তিনি এমনটি বলেছেন। তিনি তখনো স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে আমাদের তাইওয়ানের নীতি পরিবর্তন হয়নি। সেটাই এখনো সত্য।

সিবিএস নিউজকে জো বাইডেন এই সাক্ষাৎকারটি গত সপ্তাহে দিয়েছিলেন। আর প্রয়াত ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে অংশ নিতে এখন ব্রিটেনে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এর আগে গত মে মাসে জো বাইডেনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তাইওয়ানকে রক্ষা করার জন্য তিনি সামরিকভাবে সংশ্লিষ্ট হতে ইচ্ছুক কি-না এবং উত্তর দিয়েছিলেন- ‘হ্যাঁ ... এটাই আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’

সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিট সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট বাইডেন অবশ্য পুনর্ব্যক্ত করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না এবং আমরা ‘এক-চীন’ নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়া ওয়াশিংটন আনুষ্ঠানিকভাবে তাইপেইকে নয় বেইজিংকে স্বীকৃতি দেয়।

রয়টার্স বলছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সর্বশেষ এই মন্তব্য নিশ্চিতভাবে বেইজিংকে ক্ষুব্ধ করবে। এশিয়ার পরাশক্তি এই দেশটি গত আগস্টে মার্কিন হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের সময়ও ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছিল। ওয়াশিংটনে চীনের দূতাবাস অবশ্য বাইডেনের সর্বশেষ এই মন্তব্যের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালির পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।

গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাইওয়ানের পুনঃএকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।

অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সে সময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।

তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি গত বছরের মতো চলতি বছরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close