প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৪ আগস্ট, ২০২২

রাশিয়ার ‘ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার’

ইউক্রেনের যুদ্ধ ময়দানে শক্তির ব্যবধান বাড়ছে

ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরুর এক মাসের মাথায় কিয়েভের বাইরে একটি পরিত্যক্ত রাশিয়ান কমান্ড পোস্টে অজ্ঞাতনামা একটি শিপিং কনটেইনার খুঁজে পান ইউক্রেনীয় সেনারা। এর ভেতরে কী আছে, তা তখন তাঁরা জানতেন না। কিন্তু ওই কনটেইনার খোলার পর যা জানা গেল, তাতে সহসা বিস্ময়ের ঘোর কাটার কথা নয়। রুশ সেনাদের ফেলে যাওয়া ওই কনটেইনারটির ভেতরে ছিল রাশিয়ার অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক যুদ্ধব্যবস্থাগুলোর একটি। তখন যুদ্ধ সবে অল্প কয়েক দিনে গড়িয়েছিল। সে সময়ে এমন একটি অস্ত্র হাতে পাওয়াকে সবচেয়ে বড় গোয়েন্দা সাফল্য বলে দাবি করেন ইউক্রেনের সেনারা।

রুশ বাহিনীর ফেলে যাওয়া কনটেইনারটির ভেতরে ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (ইডব্লিউ) সিস্টেমগুলোর মধ্যে অন্যতম ক্রাসুকা৪। এই ইলেকট্রনিক যুদ্ধাস্ত্র ২০১৪ সাল থেকে ব্যবহার করছে রাশিয়া। ‘ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার’ বা ইডব্লিউ সিস্টেম মানে হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বিত ব্যবহার। ক্রাসুকাণ্ড৪–কে রাশিয়ার কৌশলগত ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারে প্রধান সরঞ্জাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি এক্স ও কেইউ ব্যান্ডের আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ও কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক রাডারকে জ্যাম করে দেওয়ার জন্য তৈরি করা। এটি মূলত ক্রাসুকা২ নামের আরেকটি ইডব্লিউ সিস্টেমের পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়। ক্রাসুকা২ মূলত স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্যের এস–ব্যান্ডের অনুসন্ধানী রাডারগুলো নিষ্ক্রিয় করতে কাজ করে। এ ধরনের রাডার যুক্তরাষ্ট্রের ই৮ জয়েন্ট সার্ভিলেন্স টার্গেট অ্যাটাক রাডার সিস্টেমের (জেএসটিএআরএস) রাডার ও এয়ারবর্ন ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম বা এডব্লিউএসিএস যুদ্ধবিমানের রাডার নিষ্ক্রিয় করতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরেই ধারণা করা হয়, রাশিয়ার কাছে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক সমরাস্ত্র রয়েছে। গত মার্চে ইউক্রেন ও তাদের মিত্র পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর হাতে ক্রাসুকা–৪ চলে আসায় তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করার সুযোগ মেলে। বিদ্যুৎ প্রকৌশলীদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইইইই) প্রকাশনা ‘স্পেকট্রাম’-এ সম্প্রতি রুশ সেনাদের ইলেকট্রনিক সমরাস্ত্র ও ইউক্রেন যুদ্ধে এর প্রভাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ সেনাদের হামলার প্রথম দিকে ইডব্লিউ সিস্টেমগুলো তেমন কোনো কাজে লাগেনি। কিন্তু এখন যুদ্ধের মোড় রাশিয়ার দিকেই ঘুরিয়ে দিচ্ছে এই প্রযুক্তি।

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার হামলার মুখে ইউক্রেনের সেনারা শক্ত প্রতিরোধ গড়লেও অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক সমরাস্ত্রের কারণে তাঁরা ঠিকভাবে পেরে উঠছেন না। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ যতই দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ইলেকট্রনিক যুদ্ধের নানা কৌশলের সুবাদে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ক্ষেত্রবিশেষে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। যুদ্ধের একাধিক পর্যবেক্ষক বলছেন, আগ্রাসনের শুরুর দিনগুলোর চেয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে এখন বড় ভূমিকা পালন করছে রাশিয়ার ‘ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (ইডব্লিউ)’ সিস্টেমগুলো।

রুশ সেনারা ক্রাসুকা৪ এর মতো এত মূল্যবান ইডব্লিউ সিস্টেম ফেলে যাবেন, গত মার্চের আগে তা কারও ধারণায় ছিল না। ওই সময় ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকা দখলে বেশ সফলতা অর্জন করেছিলেন রুশ সেনারা। এমনকি ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলের হুমকিও দিচ্ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধের পাঁচ মাস পরে এসে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার প্রাথমিক ওই অগ্রগতির বিষয়টি বড় ধাক্কা খেয়েছে। ক্রাসুকা৪ এর মতো সিস্টেম রাস্তার পাশে ফেলে যাওয়াই তার প্রমাণ। পরিত্যক্ত ক্রাসুকা৪ সিস্টেম আক্রমণের প্রথম কয়েক মাসে রুশ সেনাদের বিস্ময়কর ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে উঠেছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close