প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০২ জুলাই, ২০২২

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনার শীর্ষে ইউরোপ

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হয় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। দেশ দুটির যুদ্ধ গড়িয়েছে পঞ্চম মাসে। এখনো চলছে লড়াই। ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার পাহাড় জমেছে। তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে মূল্যছাড়ে জ্বালানি কিনছে বিভিন্ন দেশ। এরমধ্যে ইউরোপীয় দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি কিনছে। খবর রয়টার্সের।

ইউক্রেন আগ্রাসনের শুরু থেকে গত ৪ জুন পর্যন্ত একশ দিনে ৯ হাজার ৭৭০ কোটি ডলারের জীবাশ্ম জ্বালানি বিক্রি করেছে রাশিয়া। সে হিসেবে দেশটি প্রতিদিন গড়ে ৯৭ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের জ্বালানি বিক্রি করেছে। এসব জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে রয়েছে অপোরিশোধিত তেল, পাইপলাইনে গ্যাস নেওয়া, তেলজাত পণ্য, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এবং কয়লা।

চলুন দেখা যাক, রাশিয়া তাহলে, কোন জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানি করছে এবং কারা এই জ্বালানি আমদানি করছে?

সেন্টার ফর রিসার্চ অন অ্যানার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) তথ্যের ভিত্তিতে যুদ্ধের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানির সবচেয়ে বড় আমদানিকারকদের নাম জানা যাচ্ছে।

ইউক্রেন আগ্রাসনের কয়েক বছর আগে বৈশ্বিক জ্বালানির বাজার বেশ কয়েকবার চক্রাকারভাবে ধাক্কা খেয়েছে। বিশেষ করে করোনা মহামারিতেও। রাশিয়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল উৎপাদনকারী দেশ ও তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক। ইউক্রেন আগ্রাসনের পর থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে রাশিয়া তেল থেকেই সবচেয়ে বেশি আয় করেছে। এ খাত থেকে দেশটি ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার আয় করে, যা সব জ্বালানির মধ্যে এটি অর্ধেক।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে রাশিয়া থেকেই ৪১ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি হয়। কিছু দেশ ব্যাপকভাবে রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। রাশিয়া এই সময়ের মধ্যে যে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পাইপলাইন গ্যাস রপ্তানি করেছে, তার মধ্যে ৮৫ শতাংশই গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে।

জার্মানি, ইতালি ও নেদারল্যান্ডসসহ ইইউ এবং ন্যাটো উভয়ের সদস্যই আছে বৃহত্তম আমদানিকারকদের মধ্যে। শুধু চীন তাদের ছাড়িয়ে গেছে আমদানিতে। চীন মে মাসে প্রতিদিন গড়ে ২০ লাখ ব্যারেল করে তেল আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি। চীনের কাছে তেল বিক্রিতে সৌদি আরবকে পেছনে ফেলেছে রাশিয়া।

আমদানিতে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত। ১০০ দিনে রাশিয়ার মোট তেল রপ্তানির ১৮ শতাংশই হয়েছে ভারতে। এই তেলের একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পরিশোধিত পণ্য হিসাবে পুনরায় রপ্তানি করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেনসহ আরও কয়েকটি দেশ তেল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়ার কাছ থেকে। গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও সুইডেনের প্রতি মাসের আমদানির পরিমাণ ১০০ থেকে ৯৯ শতাংশ কমে গেছে।

বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনায় রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির পরিমাণ এ মাসে ১৫ শতাংশ কমেছে। ইইউ নিষেধাজ্ঞার নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সম্প্রতি। এ নিষেধাজ্ঞা রাশিয়া থেকে আনা ৯০ শতাংশ তেলের ওপরই কার্যকর হবে। কিছু দেশ রুবল পেমেন্ট স্কিম প্রত্যাখ্যান করেছে, যার ফলে আমদানি কমে গেছে।

আমদানি নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। ইইউ সম্প্রতি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ষষ্ঠ নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাশিয়ান সমুদ্রজাত অপরিশোধিত তেলে ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইইউ। যা রাশিয়া থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তেল আমদানির ৯০ শতাংশ পূরণ করে। সম্ভবত ছয় থেকে আট মাস পর সেটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন যখন রাশিয়ার তেল নেওয়া পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করছে, তখন বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ রাশিয়ান গ্যাসের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর পূর্ণ বয়কট ইউরোপীয় অর্থনীতিকে আরও ক্ষতিগ্রস্থ করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close