প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০২ জুলাই, ২০২২

ইউক্রেন যুদ্ধ

সোভিয়েত আমলের ক্ষেপণাস্ত্রে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া

এলোপাতাড়ি হামলায় বেসামরিক হতাহত ঘটছে বেশি

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর এক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দাবি করেছেন, সোভিয়েত আমলের নির্ভুলভাবে আঘাতে সক্ষম নয় এমন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। চলমান যুদ্ধে ৫০ শতাংশের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এসব পুরনো অস্ত্র ব্যবহার করেছে রুশ বাহিনী। খবর আলজাজিরার।

সম্প্রতি ইউক্রেনে বিচ্ছিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র। এর মধ্যে মধ্যাঞ্চলীয় শহর ক্রেমেনচুকে একটি শপিং সেন্টারে হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার ভোরে দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরশহর ওডেসার একটি আবাসিক ভবনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৯ জন নিহত হয়েছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেনীয় সশস্ত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওলেক্সি হরোমভ বলেছেন, রাশিয়া চেষ্টা করছে সামরিক ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আঘাত হানতে। কিন্তু সোভিয়েত আমলের নির্ভুলভাবে আঘাতে অক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের কারণে উল্লেখযোগ্য বেসামরিকের প্রাণহানি হচ্ছে।

ইউক্রেনীয় সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, জুনের দ্বিতীয়ার্ধ্বে ইউক্রেনের ওপর ২০২ টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে রাশিয়া। মাসের প্রথমার্ধ্বের তুলনায় ১২০টি বেশি। মাসের দ্বিতীয়ার্ধ্বে অন্তত ৬৮টি বেসামরিক স্থাপনায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের এই পরিসংখ্যান বেশ কয়েকজন ইউক্রেনীয় রাজনীতিকের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ওই রাজনীতিকরা অভিযোগ করে আসছেন, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে আতঙ্ক ছড়াতে। ওলেক্সি হরোমভ বলেন, শত্রুদের নিশানায় রয়েছে সামরিক স্থাপনা, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, শিল্প, পরিবহন নেটওয়ার্ক। একইসময়ে হামলা নির্ভুল না হওয়ার কারণে গুরুতর বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। রকেট হামলা চালাতে ৫০ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে শত্রুরা সোভিয়েত মজুত ব্যবহার করছে। যেগুলো নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতে সক্ষম না। এর ফলে বেসামরিক ভবনে হামলা হচ্ছে।

সোমবার ক্রেমেনচুকে শপিং সেন্টারে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ইচ্ছাকৃত সন্ত্রাসী হামলা বলে উল্লেখ করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। পশ্চিমা নেতা ও ক্যাথলিক ধর্ম্বালম্বীদের সর্বোচ্চ নেতা পোপ ফ্রান্সিসও হামলার সমালোচনা করেছেন।

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণ চালানো রাশিয়া বেসামরিক স্থাপনায় হামলার কথা অস্বীকার করে আসছে। তারা দাবি করেছে, রুশ সেনারা শুধু সামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে।

ওডেসায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ১৯ : ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর ওডেসাতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার ভোরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। দেশটির আঞ্চলিক এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কৃষ্ণ সাগরের কৌশলগত ফাঁড়ি স্ন্যাক আইল্যান্ড থেকে রুশ সেনাদের প্রত্যাহার করার একদিন পরই এ হামলা চালানো হলো। যদিও ইউক্রেনের দাবি, তাদের বিতাড়িত করা হয়েছে। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৯ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন ধসে যায়। এতে নিহত হন ১৯ জন এবং আরও ৩০ জনের মতো মানুষ আহত হয়েছেন।

এদিকে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রথম দিকে কৃষ্ণসাগরের বুকে স্নেক আইল্যান্ড নামে যে ক্ষুদ্র দ্বীপটি দখল করে নিয়েছিল রাশিয়া সেটি থেকে সেনাদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

মস্কো বলেছে, স্নেক আইল্যান্ড থেকে তাদের এই প্রত্যাহার হচ্ছে একটা ‘শুভেচ্ছাসূচক পদক্ষেপ’ এবং এর মাধ্যমে তারা দেখাতে চাইছে যে ইউক্রেন থেকে কৃষিপণ্য পরিবহনের পথে রাশিয়া কোনো বাধা সৃষ্টি করছে না।

তেল শোধনাগার নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার : ইউক্রেনের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর লিসিচানস্কে তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে একটি বৃহৎ তেল শোধনাগার দখলের দাবি করেছে রাশিয়া। কিন্তু ইউক্রেন বলছে, এটির আংশিক নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছে দেশটি।

রুশ সমর্থিত লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক (এলপিআর)-এর সহকারী মন্ত্রী ভিটালি কিসেলেভ ঘোষণা করেছেন, রাশিয়ান সেনারা পূর্ব ইউক্রেনের লিসিচানস্ক শহরের একটি তেল শোধনাগার ‘পুরোপুরি দখলে নিয়েছে’।

তিনি বলেন, আজ আমাদের সেনারা এটি একেবারেই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আমাদের সেনারা শোধনাগারের ভেতরে প্রবেশ করেছে। লিসিচানস্কের ৫০ শতাংশ জায়গায় নিয়ন্ত্রণ করছে রাশিয়ান বাহিনী।

এদিকে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাশিয়া এখনও শহরের তেল শোধনাগার এলাকায় হামলা চালাচ্ছে। এতে আংশিক সাফল্য পেয়েছে। প্ল্যান্টের উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব অংশ নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।

বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলের সামরিক প্রশাসনের প্রধান সের্হি হাইদাই লিসিচানস্কের পরিস্থিতিকে অত্যন্ত কঠিন বলে বর্ণনা করেছেন। তবে ডনবাসের এই গুরুত্বপূর্ণ শহরটি রাশিয়া অর্ধেক নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তা প্রত্যাখান করেছেন তিনি। ইউক্রেনের লুহানস্ক ও ডনেস্কে মিলে ডনবাস। অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী। এতে ভেঙে পড়েছে সেখানকার স্বাভাবিক কার্যক্রম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close