প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ৩০ জুন, ২০২২

ভারতকে তালেবানি মুলুক হতে দেব না

মুসলিম নেতাদের শপথ

রাজস্থানের উদয়পুরে দুজন সন্ত্রাসী যুবকের হাতে একজন হিন্দু দর্জির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দলমত নির্বিশেষে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারা অঙ্গীকার করছেন, ভারতে কিছুতেই তালেবানি সংস্কৃতিকে বাড়তে দেওয়া যাবে না। ওই হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও ভারতে কোথাও কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হয়নি, এটাকেও অত্যন্ত ইতিবাচক লক্ষণ বলে মনে করছেন অনেক পর্যবেক্ষক।

গত মঙ্গলবার বিকালে উদয়পুরের ব্যস্ত ধান মান্ডি বাজারে প্রায় প্রকাশ্য দিবালোকে কানহাইলাল তেলি নামে এক দর্জিকে কুপিয়ে খুন করে দুজন যুবক। কানহাইয়ালালের দোকানে তারা খরিদ্দার সেজে এসেছিল, তিনি যখন তাদের একজনের পোশাকের মাপ নিচ্ছেন তখনই তার ওপর অতর্কিতে ভোজালির কোপ মারে সেই ব্যক্তি। দর্জি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, রক্তে ভেসে যায় দোকান। অন্যজন গোটা ঘটনাটি মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করে। পরে ওই দুই যুবক আরো একটি ভিডিও পোস্ট করে জানায়, কানহাইয়ালাল কিছুদিন আগে সাবেক বিজেপি নেত্রী নুপূর শর্মার মন্তব্যের সমর্থনে ফেসবুকে যে মন্তব্য করেছিলেন- তার বদলা নিতেই তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপরও হামলা চালাবে বলে হুশিয়ারি দেয়- যদিও এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা উভয়েই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সরিয়ে ফেলার আগে এরই মধ্যে ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে সারা ভারতের কোটি কোটি মানুষ দেখে ফেলেছেন, আর ওদিকে গোটা রাজস্থানজুড়েই জারি করা হয়েছে কারফিউ। প্রতিটি জেলাতেই পুলিশ রয়েছে হাই অ্যালার্টে- তবে কোথাও এখনো বড় কোনো অশান্তির খবর নেই, এটাই স্বস্তির কথা। এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে রাজস্থানেরই পবিত্র আজমির শরিফ দরগার দেওয়ান জইনুল আবেদিন আলি খান বুধবার এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকে কোনো ধর্মই সমর্থন করে না। বিশেষ করে ইসলাম তো সব সময়ই শান্তির কথা বলে।’

সেইসঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে আমি সরকারকে আর্জি জানাব। আর এটাও বলব, ভারতের মুসলিমরা কখনোই তাদের মাতৃভূমির তালেবানিকরণ মেনে নেবে না।’

জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের মহাসচিব মহাসচিব হাকিমউদ্দিন কাশমিও বলেছেন, ‘কোনোভাবেই এই হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করা যায় না, আর ইসলাম তো করেই না। ভারতে একটা আইনের শাসন আছে, আর সেই আইন হাতে তুলে নেওয়ার এখতিয়ার কারোরই নেই।’ বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদরাও এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। কেরালার বামপন্থি মুখ্যমন্ত্রী পিন্নারি বিজয়ন যেমন টুইট করেছেন, ‘আমরা (হিন্দু-মুসলিম) যে শান্তিতে একসঙ্গে বসবাস করছি, এই ধরনের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড শুধু সেই পরিবেশকেই বিনষ্ট করবে- আর কোনো কাজে আসবে না। সবাইকে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ জানাব এবং বলব আইনকে তার কাজ করতে দিন।’

হায়দরাবাদভিত্তিক দল এআইএমআইএমের নেতা ও এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, ‘এটা একটা জঘন্য আপরাধ। আইনকে কিছুতেই নিজের হাতে নেওয়া চলবে না, দোষীদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে বলব, নূপুর শর্মাকেও গ্রেপ্তার করা হোক।’

উদয়পুরের হত্যাকাণ্ডের নিন্দায় সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বুধবার এক টুইট বার্তায় তিনি লেখেন, ‘উদয়পুরে যা ঘটেছে তার তীব্র বিরোধিতা করছি।’ একই সঙ্গে তার বার্তা, ‘হিংসা এবং চরমপন্থা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়, তা যে কারণেই ঘটুক না কেন।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close