প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৬ জুন, ২০২২

শিন্ডেদের বিদ্রোহের নেপথ্যে কোটি রুপির খেলা

মহারাষ্ট্রে শিবসেনার জোট সরকারের কয়েকজন বিধায়ক গিয়ে উঠেছেন আসামের গুয়াহাটির র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে। এ হোটেলে আছেন শিবসেনার বিদ্রোহী নেতা একনাথ শিন্ডে। তার সঙ্গে শিবসেনা ও স্বতন্ত্র কয়েকজন সদস্য আছেন। একনাথ শিন্ডের দাবি, তার সঙ্গে ৪০ জনের বেশি বিধায়ক আছেন। আর এতে মহারাষ্ট্র সরকারও পতনের মুখে পড়েছে। বিদ্রোহের কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, গত আড়াই বছরে শিবসেনার নেতাণ্ডকর্মীরা মহারাষ্ট্রে বঞ্চিত হয়েছেন। খবর এনডিটিভির।

শিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়কদের নেতৃত্বে থাকা একনাথ শিন্ডের দাবি, শিবসেনার ৫৫ জন বিধায়কের মধ্যে ৪২ জনের সমর্থন আছে তাঁর দিকে। আর মাত্র একজনের সমর্থন পেলেই সরকার গঠনের মতো অবস্থায় যাবেন তাঁরা। বিজেপির ১০৫ বিধায়ক ও শিন্ডের ৪২ হলে সরকার গঠন সম্ভব।

একনাথ শিন্ডের নাটকের শুরু গত মঙ্গলবার থেকে। ওই রাতেই একঝাঁক বিদ্রোহী বিধায়ককে নিয়ে মহারাষ্ট্র থেকে বিজেপিশাসিত গুজরাটে চলে গিয়েছিলেন একনাথ শিন্ডে। তিনি সেখানে গুজরাটের সুরাটের হোটেলে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় ছিলেন। ওই দিন রাতে সুরাট বিমানবন্দরে একটি চার্টার্ড বিমান প্রস্থত ছিল। এ বিমানে নেওয়া হয় আসামে। এ বিমানের ভাড়া ৫০ লাখ রুপি। অন্য খরচ তো আছে।

বিলাসবহুল চার্টার্ড এই বিমানে চাপিয়ে শিবসেনা বিধায়কদের আসামে নেন দলনেতা একনাথ শিন্ডে। যাঁদের ইঙ্গিতে তিনি মহারাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তনের খেলায় মেতেছেন, এ অর্থ তাঁদের পকেট থেকেই এসেছে। সুরাট থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত চার্টার্ড ফাইটে আসতে খরচ ৫০ লাখ রুপির বেশি। এ বিমানে ৩০ জনেরও বেশি যাত্রী বসতে পারেন। যাঁদের চার্টার্ড বিমানে জায়গা হয়নি, তাঁরা বিলাসবহুল তিনটি বাসে চড়ে আসামে গেছেন। তাঁরা সবাই ছিলেন সুরাট বিমানবন্দর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের একটি হোটেলে।

গুয়াহাটির পাঁচতারকা হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু এক সপ্তাহের জন্য বুকিং করেছে শিন্ডেপক্ষ। এই হোটেল এখন তাদের সদর দপ্তর। এ হোটেল থেকেই যাবতীয় ছবি, ভিডিও, ঘোষণা প্রচার করা হচ্ছে। রেডিসন হোটেলে বিলাসবহুল কক্ষ আছে মোট ১৯৬টি। এ হোটেলে ৭ দিনের জন্য মোট ৭০টি কক্ষ ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ রুপি। এ ছাড়া খাবার ও অন্যান্য জিনিসের জন্য প্রতিদিন খরচ হচ্ছে প্রায় ৪ লাখ রুপি।

এর আগে কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশে বিদ্রোহ করিয়ে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি। এবার মহারাষ্ট্রে এমনটাই ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তবে এত খরচের পর যদি মহারাষ্ট্রে সরকার না পড়ে, তবে বড় ধাক্কাই খাবে বিরোধীরা।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন তিনি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এভাবে আসলে বিক্ষুব্ধদের একটা বার্তা দিতে চেয়েছেন তিনি। বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, বালসাহেব ঠাকরের ব্যাটন তাঁর হাতেই। ছেলে হিসেবে তাঁর নীতি মেনে চলার দায়িত্বও নিজের কাঁধেই তুলে নিতে চান।

এদিকে শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত শুক্রবার মুম্বাইয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, প্রয়োজনে শিবসেনার সদস্যরা লড়াইয়ে নামবেন রাস্তায়। তাঁর কথা, ‘আমরা মোটেই পরাজয় বরণ করার জন্য বসে নেই। এই সরকার পাঁচ বছর চলবে।’

বিজেপির কাছে বর্তমানে ১০৫ জন বিধায়ক আছে। ২৮৭ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ১৪৫ আসন। শিন্ডের দাবি, তাঁর সঙ্গে বর্তমানে অন্তত ৪২ জন বিধায়ক আছেন। এর মধ্যে শিবসেনার ৩৪ জন আছেন।

মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বর্তমানে বিজেপির ১০৫, শিবসেনা ৫৬, ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি (এসসিপি) ৫৪, কংগ্রেস ৪৪ আসন আছে। বাকিরা অন্য দল ও স্বতন্ত্র সদস্য। এখন সেখানে শিবসেনা, এসসিপি ও কংগ্রেসের জোট সরকার রয়েছে।

একনাথ শিন্ডেকে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিজেপি। আড়াই বছর আগে এই একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এনসিপির অজিত পাওয়ারকেও। নতুন সরকার গঠন হলে শিন্ডের পক্ষকে নয়টি মন্ত্রণালয় দিতে পারে বিজেপি। আগেরবার অজিত পাওয়ারকেও এই একইসংখ্যক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close