প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৫ জুন, ২০২২

সিএনএনের বিশ্লেষণ

ব্রিকস সম্মেলনে পশ্চিমাদের আক্রমণ পুতিনের

বেইজিং আয়োজিত ভার্চুয়াল ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার যোগ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি কার্যত বিশ্বমঞ্চে ফিরে এলেন। পুতিনের নির্দেশে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর এই প্রথম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ একটি জোটের শীর্ষ নেতাদের সম্মেলনে যোগ দিলেন পুতিন।

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অবস্থিত গ্রেট হল অব দ্য পিপলে স্থাপিত সম্মেলনের জায়ান্ট স্ক্রিনে হাজির হয়ে পুতিন তার ভাষণে পশ্চিমাদের আক্রমণ করেন। একটি বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টির জন্য তিনি পশ্চিমাদের দায়ী করেন। পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে স্বার্থপর কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ তুলে রাশিয়াকে সহযোগিতার জন্য ব্রিকস জোটের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান পুতিন।

ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো হলো- ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। জোটের ১৪তম এই শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ছাড়াও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা অংশ নেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়, ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন পশ্চিমাদের একটি বার্তা দিয়েছেন। সেই বার্তাটি হলো, ইউক্রেনে হামলার জেরে মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া ‘একা’ নয়। ইউক্রেনে হামলার জেরে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমারা। অভূতপূর্ব এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় খোদ পুতিনও পড়েছেন। পশ্চিমাদের এ নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য রাশিয়াকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করা। রাশিয়ার অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়া। রাশিয়াকে দুর্বল করে দেওয়া।

ইউক্রেনে রুশ হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে চীনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল যে, বেইজিং ও মস্কোর মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো ‘সীমা’ নেই। ব্রিকস জোটভুক্ত প্রতিটি দেশের নেতাই ইউক্রেনে রুশ হামলার ঘটনায় মস্কোর সরাসরি নিন্দা করা এড়িয়ে গেছেন।

এখন ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে পুতিন পশ্চিমাদের বার্তা দিলেন যে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি। উল্টো পুতিন ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নিয়ে পশ্চিমাদের একহাত নিয়েছেন।

বিশ্বের প্রধান উদীয়মান অর্থনীতির পাঁচ দেশের এই জোটের বয়স এক দশকের বেশি। কিছু সাধারণ স্বার্থ থাকা সত্ত্বেও এই জোট দীর্ঘদিন ধরে সংহতির প্রশ্নে জর্জরিত। জোটের সদস্যদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পার্থক্য আছে। আছে ভিন্ন ভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ। জোটের সদস্যদের মধ্যে অবিশ্বাসও লক্ষণীয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নানা অস্বস্তি সত্ত্বেও ইউক্রেন সংকটসহ বর্তমান পরিস্থিতিতে জোটের ১৪তম এই শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন বৈশ্বিক শৃঙ্খলা সম্পর্কে ব্রিকস দেশগুলোর একটি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটায়, যে দৃষ্টিভঙ্গিটি পশ্চিমাদের থেকে ভিন্ন।

দুই দিনব্যাপী চলমান ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন প্রসঙ্গে নয়াদিল্লিভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের (সিপিআর) সিনিয়র ফেলো সুশান্ত সিং বলেন, ‘আমরা এমন কিছু বড় অর্থনীতির দেশের কথা বলছি, যে দেশগুলোর নেতৃত্ব পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছুক, এমনকি তা যদি শুধু ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মেও হয়।’

সুশান্ত সিং আরও বলেন, এই সম্মেলনে পুতিনকে স্বাগত জানার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ এই দিক দিয়ে যে, বিশ্বে তিনি অচ্ছুত নন। তিনি সমাজচ্যুত নন। তাঁকে সমাজের বাইরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না। এটা পুতিনের জন্য একটি ইতিবাচক দিক।

কিছুদিন আগেই বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-৭-এর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জোট সদস্যদের সোচ্চার থাকতে দেখা যায়। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে রাশিয়া। ক্রিমিয়া দখলের জেরে এই জোট থেকে রাশিয়াকে বহিষ্কার করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close