প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৯ জুন, ২০২২

ইউক্রেনে ৬৪ দেশের ভাড়াটে যোদ্ধা

ইউক্রেনে চলমান সংঘাতে ৬৪টি দেশ থেকে আসা ভাড়াটে যোদ্ধা ও সামরিক বিশেষজ্ঞরা যুক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় দুই হাজার বিদেশি ভাড়াটে যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেঙ্কভ এ দাবি করেন। খবর তাস ও আনাদোলু এজেন্সির।

ইগর কোনাশেঙ্কভ বলেন, ‘১৭ জুন নাগাদ ৬৪টি দেশ থেকে আসা ভাড়াটে যোদ্ধা ও অস্ত্র পরিচালনা বিশেষজ্ঞদের তালিকা আমাদের কাছে আছে। বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনে এ ধরনের ৬ হাজার ৯৫৬ জন সেনা পৌঁছেছেন।’

ইগর কোনাশেঙ্কভ বলেন, এই সেনাদের ১ হাজার ৯৫৬ জন এরই মধ্যে নিহত হয়েছেন। ১ হাজার ৭৭৯ জন ইউক্রেন ছেড়ে গেছেন। এখন ৩ হাজার ২২১ জন ভাড়াটে যোদ্ধা জীবিত আছেন।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে আনাদোলু এজেন্সি বলেছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ভাড়াটে যোদ্ধা প্রেরণ ও নিহত ব্যক্তির সংখ্যায় ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে পোল্যান্ড শীর্ষে রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৩১ জন পোলিশ যোদ্ধা ইউক্রেনে এসেছেন। তাদের মধ্যে ৩৭৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন আর ২৭২ জন দেশে ফিরে গেছেন। ইউক্রেনে ভাড়াটে যোদ্ধা প্রেরণে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রোমানিয়া। ইউক্রেনের সেনাদের সঙ্গে ৫০৪ জন রোমানিয়ান ভাড়াটে যোদ্ধা যোগ দিয়েছেন। তাদের ১০২ জন নিহত হয়েছেন আর দেশে ফিরেছেন ৯৮ জন। ৪২২ জন ভাড়াটে যোদ্ধা পাঠিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। তাদের ১০১ জন মারা গেছেন আর ইউক্রেন ছেড়েছেন ৯৫ জন। উত্তর আমেরিকা মহাদেশ থেকে প্রধান ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী হিসেবে রয়েছে কানাডা। ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটির ৬০১ জন নাগরিক ইউক্রেনে প্রবেশে করেছেন। তাদের ১৬২ জন নিহত হয়েছেন আর ১৬৯ জন ইউক্রেন ছেড়েছেন। এই অঞ্চল থেকে ভাড়াটে যোদ্ধা প্রেরণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে ৫৩০ জন ইউক্রেনে এসেছেন। তাদের ২১৪ জন নিহত হয়েছেন আর ২২৭ জন ইউক্রেন ছেড়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চল ও এশিয়া থেকেও ভাড়াটে যোদ্ধা গেছেন। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি জর্জিয়া থেকে ৩৫৫ জন ভাড়াটে যোদ্ধা ইউক্রেনে যান। তাদের ১২০ জন নিহত হয়েছেন আর ৯০ জন ইউক্রেন ছেড়েছেন।

কোনাশেঙ্কভ বলেন, সিরিয়ার ইউফ্রেতিসের যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে ২০০ জনকে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮০ জন নিহত হয়েছেন এবং ৬৬ জন ইউক্রেন ছেড়েছেন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে প্রতিবেশী রাশিয়া। এরপর থেকে ইউক্রেনকে অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের দেশগুলো।

হঠাৎ কিয়েভ সফরে বরিস: ইউক্রেনীয় নিরাপত্তাবাহিনীগুলোর জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। শুক্রবার ইউক্রেনের কিয়েভ সফরে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এ প্রস্তাব দেন তিনি। কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কিয়েভ সফরে যান বরিস জনসন। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এটি তার দ্বিতীয়বারের মতো কিয়েভ সফর। বরিসকে ‘বড় বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে স্বাগত জানান জেলেনস্কি। এরই মধ্যে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তোলা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির, আবারও কিয়েভে আসতে পেরে ভালো লাগছে।’

জনসনের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনীগুলোর জন্য বড় ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। প্রতি ১২০ দিনে ১০ হাজার সেনাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

জনসন বলেন, ‘যুদ্ধের এ গভীরতম সময়ে আমি ইউক্রেনীয় জনগণের জন্য একটি স্পষ্ট ও সাধারণ বার্তা নিয়ে এসেছি। তা হলো- যুক্তরাজ্য আপনাদের পাশে আছে এবং আপনাদের চূড়ান্ত মুক্তি না মেলা পর্যন্ত পাশে থাকব। এ কারণে আমি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে বড় ধরনের নতুন সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছি, যা এ যুদ্ধের সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে।’

বাহিনীগুলোকে সর্বোচ্চ শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের সংকল্পের জয় হবে বলে মনে করেন বরিস জনসন।

ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও রোমানিয়ার নেতারা কিয়েভ সফর করার এক দিনের মাথায় শহরটিতে গেলেন বরিস।

বরিসের কিয়েভ সফর প্রসঙ্গে জেলেনস্কি বলেন, ‘এ যুদ্ধের অনেকগুলো দিন কেটে গেছে। এ সময়ের মধ্যে প্রমাণ হয়েছে, ইউক্রেনের জন্য গ্রেট ব্রিটেনের সমর্থন দৃঢ় এবং অটল। আমাদের দেশের বড় বন্ধু বরিস জনসন আবারও কিয়েভ সফরে আসায় আমরা আনন্দিত।’

এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জেলেনস্কি বলেন, তিনি এবং জনসন যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। ভারী অস্ত্রের সরবরাহ বাড়ানো এবং ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা নিয়ে দুই নেতা কথা বলেছেন। এ সময় তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বরিস জনসন।

জেলেনস্কি বলেন, ‘কীভাবে আমরা বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাব, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কারণ এটিই ইউক্রেনের জন্য প্রয়োজন, আমাদের রাষ্ট্রের বিজয়।’

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, জেলেনস্কি ও জনসন নিহত ইউক্রেনীয় সেনাদের স্মৃতিফলকে শ্রদ্ধা জানান। যুদ্ধে রুশ সেনাবাহিনীর ধ্বংস হওয়া সামরিক যন্ত্রাংশগুলো সাজিয়ে রাখার জায়গাটিও পরিদর্শন করেছেন তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close