প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৭ মে, ২০২২

দনবাসের ৪০ শহরে হামলা

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চলের ৪০টির বেশি শহরে হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী এ কথা জানিয়েছে। রুশ গোলাবর্ষণের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছেন আরো ১২ জন। খবর বিবিসির।

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জয়েন্ট টাস্কফোর্স ফেসবুকে বলেছে, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের ৪০টির বেশি শহরে গোলাবর্ষণ করেছে রুশ বাহিনী। এতে ৩৮টি ঘরবাড়ি, স্কুলসহ ৪৭টি বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোলাবর্ষণে ৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন।

আজভ সাগর ইউক্রেনের হাতছাড়া: রাশিয়ার অধিকৃত ক্রিমিয়ার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী জর্জি মুরাদোভ বলেছেন, আজভ সাগর চিরজীবনের জন্য ইউক্রেনের হাত থেকে চলে গেছে। খবর আরআইএ নভোস্তির।

এ ব্যাপারে ক্রিমিয়ার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী জর্জি বলেন, আজভ সাগর চিরজীবনের জন্য ইউক্রেনের হাত থেকে চলে গেছে। জাপোরিঝজিয়া ও খেরসনের বন্দরগুলো কখনো আর ইউক্রেনীয় হবে না। আমি নিশ্চিত রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের অঞ্চল যুক্ত হওয়ার পর, আজভ সাগর আবারো এটি যে রকম ছিল, রাশিয়া ফেডারেশনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিণত হবে।

ভ্লাদিমির রোগোভ নামে জাপোরিঝজিয়ার রাশিয়ার বসানো প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার বরাত সংবাদ সংস্থা আরআইএ নভোস্তি দিয়ে আরো জানিয়েছে, ভ্লাদিমির রোগোভ বলেছেন, জাপোরিঝজিয়া ও খেরসন আর কখনো কিয়েভের অধীনে যাবে না।

এদিকে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ার হামলা চালিয়ে সেটিকে ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে রাশিয়া। ইউক্রেন বারবার জানিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়া তাদের সব অঞ্চল ছেড়ে না দেবে ততক্ষণ তাদের সঙ্গে কোনো শান্তিচুক্তি করবে না।

অন্যদিকে পুতিনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে তারা কখনো কোনো চুক্তিতে সম্মত হবেন না। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

বিবিসি জানায়, দনবাস অঞ্চলের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে গত মাস থেকেই ওই অঞ্চলে অভিযান জোরদার করেছে রাশিয়া। দেশটি সেখানে হাজারো সেনা পাঠিয়েছে। সেভেরোদোনেৎস্ক ও লিসিচানস্ক শহরে থাকা ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘিরে ফেলার চেষ্টায় তিন দিক থেকে হামলা করছেন তারা।

শহর দুটির পতন হলে গোটা লুহানস্ক প্রদেশ রাশিয়ার পুরো নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এটি ইউক্রেনে ক্রেমলিনের চলমান সামরিক অভিযানের অন্যতম লক্ষ্যগুলোর একটি। রুশ সেনারা যদি সেভেরোদোনেৎস্ক থেকে বাখমুটের রাস্তাটি দখল করতে পারেন তবে পুরো শহরকে ঘিরে ফেলতে সক্ষম হবেন তারা।

সেভেরোদোনেৎস্ক দখলে রাশিয়া ‘পোড়ামাটি নীতি’ গ্রহণ করেছে বলে গত রবিবার লুহানস্কের গভর্নর সেরহি গাইদাই অভিযোগ করেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, দোনেৎস নদীর ওপর একটি ছাড়া সব সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে রুশ বাহিনী। শহরটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ জানিয়েছে, ইজিউম, সেভেরোদোনেৎস্ক ও আভদিভকায় রুশ বাহিনী তাদের কৌশলগত অবস্থান জোরদার করছে। পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুট ও আভদিভকা শহরের কাছে হামলায় ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার কাজে লাগাচ্ছে রুশ বাহিনী।

এদিকে, ডনবাস অঞ্চলে রুশ আক্রমণের মুখে ইউক্রেনের সৈন্যরা প্রচণ্ড চাপের মুখে আছে বলে স্বীকার করেছে কিয়েভের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউক্রেনের পূর্বদিকের ডনবাস অঞ্চলের সেভারোডোনেৎস্ক এবং লিসিচানস্ক- এই দুটি শহরকে ঘিরে ফেলার চেষ্টায় এগুলোর ওপর রুশ বাহিনী প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ করছে।

লুহানস্কের অধিকাংশ এলাকাই এখন রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। যে এলাকাগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই সেগুলোই দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে রুশ সেনারা।

ডনবাস অঞ্চলের অর্ধেক এলাকাই লুহানস্কের অন্তর্গত এবং রাশিয়া এখন এই জায়গাটিকেই তাদের যুদ্ধপ্রয়াসের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত করেছে। বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, রাশিয়া যদি ডনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে তাহলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হয়তো ইউক্রেন যুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করতে পারেন। কিয়েভ থেকে বিবিসির জো ইনউড জানাচ্ছেন, পূর্ব ডনবাসে রাশিয়া এরই মধ্যেই বেশ কয়েকটি শহর ও গ্রাম দখল করেছে এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীকে আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে। তারা এটা করতে পারছে কারণ সৈন্য, কামান, সাঁজোয়া যান এবং বিমানবাহিনীর শক্তি সব ক্ষেত্রেই সংখ্যার দিক থেকে ইউক্রেনকে পেছনে ফেলেছে রুশরা, বলেন জো ইনউড। পুতিনের বাহিনী অবশেষে কিছু সাফল্য পাচ্ছে, বলেন তিনি।

ইস্পাত কারখানার দখল নেয়ার পর মারিউপোলে রাশিয়ার বিজয় ঘোষণা পশ্চিমা উসকানিই ইউক্রেন অভিযানের কারণ, বললেন পুতিন।

কিয়েভে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ওলেক্সান্দর মোতুজিয়ানিক বলছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী এখনো ওই দুটো শহরে যাবার প্রধান রাস্তাটি নিয়ন্ত্রণ করছে তবে যুদ্ধ এখনো চলছে।

লুহানস্ক প্রদেশের গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেন, ওই রাস্তাটি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ চলছে কিন্তু এটি এখনো সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়নি। তিনি বলেন, দিনরাত গোলাবর্ষণ, মিসাইল নিক্ষেপ ও বিমান থেকে বোমা ফেলে সেভারোডোনেৎস্ক শহরটিকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। হাইদাই আরো জানান, রুশ বাহিনী এখন এতটাই কাছে চলে এসেছে যে তারা রকেটের পাশাপাশি মর্টারও ব্যবহার করছে।

এছাড়া এখান থেকে অনেকটা দূরে ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া এবং ক্রিভি রিহ শহর দুটির ওপরও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্টে এতে লোক হতাহত হয়েছে বলেও জানা গেছে।

রাশিয়া বলেছে, তাদের ওপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে তারা ইউক্রেনের অবরুদ্ধ বন্দরগুলো থেকে খাদ্যশস্যবাহী জাহাজ বেরুতে দেবে। ইউক্রেন হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এরই মধ্যে রাশিয়া বিরুদ্ধে ‘খাদ্যকে একটি অস্ত্রে পরিণত করার’ অভিযোগ এনেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close