প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৪ মে, ২০২২

শ্রীলঙ্কা সংকট

বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা

জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনের কাজ গতকাল শুক্রবার শুরু করছেন শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। তবে তার নিয়োগও সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শান্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ও তার সহযোগীদের দায়ী করে তাদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

সপ্তাহ ধরে প্রাণঘাতী সহিংস বিক্ষোভে নয় জন নিহত এবং তিন শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে বৃহস্পতিবার বর্ষীয়াণ বিরোধী রাজনীতিবিদ রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন। প্রেসিডেন্টের বড় ভাই ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে গত সোমবার পদত্যাগ করেন। নিরাপত্তার খাতিরে এক নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।

কলম্বোর মূল একটি চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন হাজার হাজার মানুষ। এদেরই একজন চামালাগে শিবকুমার। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণ ন্যায়বিচার পাওয়ার পর এই সংগ্রাম থামবে। যাকেই প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন, মানুষ স্বস্তি না পাওয়া পর্যন্ত এই সংগ্রাম থামাবো না।’

রনিল বিক্রমাসিংহে তার দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির একমাত্র আইনপ্রণেতা। সরকার গঠনে তাকে নির্ভর করতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে প্রায় একশ’ আইনপ্রণেতার সমর্থন রয়েছে রাজাপাকসেদের ওপর। বিরোধীদের রয়েছে ৫৮ আসন। বাকি আইনপ্রণেতারা স্বতন্ত্র।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নিরসনে বিক্রমাসিংহের নিয়োগ খুব কম কাজে আসবে। তাদের দাবি শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের চূড়ান্ত দায় প্রেসিডেন্টের। সূত্র: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েই ধন্যবাদ দিলেন মোদিকে

শ্রীলঙ্কার ২৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ৭৩ বছর বয়সি রনিল বিক্রমাসিংহে দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন রনিল। অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতার পর বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করছে দেশটি।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিক্রমাসিংহে বলেন, আমি আরো সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক চাই এবং প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।

বিরোধী ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা রনিল বিক্রমাসিংহে জানান, আপাতত তিনি অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার দিকেই শুধু নজর দেবেন।

তিনি বলেছেন, আমি এই সমস্যা মিটিয়ে দেশের জনগণের জন্য পেট্রল, ডিজেল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে চাই।

১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর এবারই প্রথম শ্রীলঙ্কা এমন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। যথেষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ না থাকাকে এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিক্রমাসিংহে বলেন, যে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছি তা আমি পালন করব।

তিনি আরো বলেছেন, সময়মতো আমি সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন অর্জন করব। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সচিবালয়ের বাইরে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা বিক্ষোভে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। তারা চাইলে আমি তাদের (বিক্ষোভকারীদের) সঙ্গে কথা বলব।

তিনি আরো বলেন, যদি অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবেলা করতে পারি, তাহলে বিক্ষোভকারীদেরও মোকাবেলা করতে পারব।

অন্তর্র্বতী প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সরকারে সব দলের অংশগ্রহণের কথা আছে। পরবর্তী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই সরকার কাজ করবে। সূত্র : এনডিটিভি।

দুই পক্ষ থেকেই উসকানি ছিল: নামাল রাজাপাকসে

শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে এবং দেশটির সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নামাল রাজাপাকসে বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সহিংসতা কোনো সমাধান নয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ আহ্বান জানান তিনি।

গত বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রনিল বিক্রমাসিংহে নিয়োগ পেয়েছেন। সরকারি বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, তার ছেলে নামালসহ আরো ১৫ জনের ওপর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এমন অবস্থায় গতকাল এনডিটিভিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে নামাল রাজাপাকসে। তিনি দাবি করেছেন, দুই পক্ষ থেকেই উসকানি ছিল। এনডিটিভিকে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে কোনো আইনশৃঙ্খলা নেই।’

এদিকে গত সোমবার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশকে তদন্ত করতে বলেছেন শ্রীলঙ্কার আদালত। এ হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শ্রীলঙ্কাজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। এসব সহিংস ঘটনায় নয়জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় সেনা মোতায়েন করা হয়।

সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে নামাল বলেন, ‘রাতারাতি এমন ঘটনা ঘটেনি। দুই পক্ষ থেকেই উসকানি ছিল। পুলিশকে এখন অবশ্যই দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।

শ্রীলঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, আগামী এক-দুই সপ্তাহে কোনো সমাধানে পৌঁছাতে না পারলে দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হবে শ্রীলঙ্কাকে। তাঁর নিজেকেও পদত্যাগ করতে হবে।

ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়া শ্রীলঙ্কায় মাসখানেকের বেশি সময় সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। গত সোমবার সরকার সমর্থকদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ এবং দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে। জনরোষের মুখে কলম্বোর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে সেনা পাহারায় পালিয়ে একটি নৌঘাঁটিতে অবস্থান নেন তিনি।

এরপর বিক্ষোভ দমনে দেশজুড়ে কারফিউ জারির পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও পুলিশকে গুলি চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হলেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ চলছিল। নিজের গদি টেকাতে রনিল বিক্রমাসিংহেকে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর পদে বসিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।

ক্ষমতায় থাকাকালে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতিসহ নানা ঘটনায় সমালোচিত বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল। শ্রীলঙ্কায় প্রভাবশালী বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতারাও তার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close