প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২২ নভেম্বর, ২০২১

ভারতে বিক্ষোভ-আন্দোলনে ৭৫০ কৃষক নিহত

প্রতিটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেবে তেলেঙ্গানা সরকার

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ-আন্দোলনে গত ১১ মাসে ৭৫০ কৃষক নিহত হয়েছেন। এসব পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তেলেঙ্গানা সরকার। রাজধানী নয়াদিল্লির সীমান্তে নিহত এই কৃষকদের প্রত্যেকের পরিবারকে তিন লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। শনিবার রাজ্যটির সরকারের কাছ থেকে এমন ঘোষণা আসে। খবর এনডিটিভির।

কৃষকদের টানা আন্দোলনের মুখে গত শুক্রবার তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আইন তিনটি প্রণয়নের পর থেকে শুরু করে প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলন করেন কৃষকরা। এই আন্দোলনের একপর্যায়ে কৃষকরা রাজধানী নয়াদিল্লিও অবরুদ্ধ করেন। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর আন্দোলন শুরু করেছিলেন কৃষকরা। গত এক বছরের আন্দোলনকালে পুলিশের গুলি, হামলা ও সংঘর্ষে ৭৫০ কৃষক মারা যান।

কৃষক আন্দোলনের নেতা রাকেশ টিকাইত জানান, ১১ মাসের আন্দোলনে ৭৫০ কৃষক নিহত হয়েছেন। এদিকে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও দাবি তুলেছেন, রাজ্য সরকারের তিন লাখ রুপির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার যাতে নিহত কৃষকদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেয়, সেই আহ্বান করবেন তিনি। এ ছাড়া আন্দোলনকারী কৃষকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাও প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

চন্দ্রশেখর রাও জানান, ৭৫০ কৃষকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজ্য সরকারের ২২ কোটি ৫০ লাখ রুপি ব্যয় হবে। বিক্ষোভে নিহত কৃষকদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে কৃষক নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তেলেঙ্গানা রাজ্যের ধানচাষিদের পক্ষে গত বৃহস্পতিবার হায়দরাবাদে ধরনায় অংশ নেন চন্দ্রশেখর রাও। সেখানে তিনি ঘোষণা দেন কৃষক ইস্যুতে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিতে পিছপা হবেন না। সবকিছুর আগে দেশের কৃষকদের আত্মনির্ভর করে তোলার দাবি করেন তিনি। সেদিনের সেই প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় তিনি নিহত কৃষকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেন।

বছর দেড়েক আগে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে তিনটি কৃষি আইন প্রণয়নে কেন্দ্রীয় সরকার অধ্যাদেশ জারি করে। তারপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে পার্লামেন্টের খ-কালীন অধিবেশনে প্রায় বিনা আলোচনায় বিরোধীদের দাবি উপেক্ষা করে তিনটি আইন পাস করানো হয়। আইনগুলোর মধ্যে প্রথমটি ‘অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) আইন’ বা ‘দ্য অ্যাসেনশিয়াল কমোডিটিজ (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট’। দ্বিতীয়টি ‘কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন আইন’ বা ‘ফারমার্স প্রডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রমোশন অ্যান্ড ফ্যাসিলিয়েশন) অ্যাক্ট’। তৃতীয়টি ‘কৃষক সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন (মূল্য এবং কৃষি পরিষেবাসংক্রান্ত) আইন’ বা ‘ফারমার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন) অ্যাগ্রিমেন্ট অন প্রাইস অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস অ্যাক্ট’।

অবশেষে গত শুক্রবার কৃষকদের তীব্র আন্দোলনের মুখে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানকের জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে এমন ঘোষণা দেন তিনি। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মোদি বলেন, ‘হয়তো আমাদের তপস্যায় কিছুর ঘাটতি ছিল, যে কারণে আমরা কিছু কৃষককে আইনটি সম্পর্কে বোঝাতে পারিনি। কিন্তু আজ প্রকাশ পর্ব, কাউকে দোষারোপ করার সময় নয়। আজ আমি দেশবাসীর উদ্দেশে বলতে চাই, আমরা তিনটি কৃষি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি যা করেছি তা কৃষকদের জন্য। আমি যা করছি তা দেশের জন্য।’ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থানের হাজার হাজার কৃষক এই তিনটি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে দিল্লির বাইরে তাবু খাটিয়ে অবস্থান করছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close