প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে আফগানিস্তান!

তালেবান সরকার নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও আফগানিস্তানে অর্থ প্রবাহ বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাগিদ দিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, তা না হলে দেশটি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে পড়বে। একইসঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তালেবানের সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বিবিসি ও এএফপির।

এক সাক্ষাৎকারে বৃহস্পতিবার আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই তালেবানের সঙ্গে সংলাপ বজায় রাখতে হবে। আফগান জনগোষ্ঠীর প্রতি সংহতির মানসিকতা নিয়ে সংলাপে সরাসরিভাবে আমাদের নীতিগুলো নিশ্চিত করতে হবে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যুর মুখে পড়া আফগান জনগণের প্রতি আমাদের সংহতির হাত বাড়িয়ে দেওয়া।’ বিশ্ববাসীর উদ্দেশে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আফগানিস্তানে ‘অর্থনৈতিক ধস’ অবশ্যই এড়াতে হবে।’

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বা বিশ্বব্যাপী জব্দ করে রাখা আফগান তহবিল ছাড়ের আহ্বান জানানো ছাড়াই জাতিসংঘের প্রধান দাবি করেন যে ‘আর্থিক সামগ্রী’ আফগানিস্তানের অর্থনীতির ‘দম নেওয়ার’ সুযোগ করে দেবে।

তবে, তালেবান তাদের গঠিত সরকারের স্বীকৃতি, আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বলেছে বলে উল্লেখ করেন আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘আর এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য সাধনের নিশ্চিত সুযোগ করে দেবে।’

আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় এক হাজার কোটি ডলারের সম্পদ বর্তমানে বিদেশে আটকা পড়েছে। এসব সম্পদ আটকে রেখে দেশটির নতুন প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়াতে চাইছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তবে জাতিসংঘের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত দেবোরাহ লিওন বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, দেশটিতে এসব অর্থ প্রবাহের একটি উপায় খুঁজে বের করা দরকার। না হলে দেশটির অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ার পাশাপাশি সামাজিক শৃঙ্খলাও নষ্ট হতে পারে।

আফগানিস্তানে নানাবিধ সংকটের মধ্যে রয়েছে মুদ্রা সংকট ও খাবারের দাম বৃদ্ধি। মুদ্রা সংকটের কারণে অনেক বেসরকারি ব্যাংকেই নগদ অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার অর্থ সংকটের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানই কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না।

জাতিসংঘ দূত ডেবরাহ লিওন বলেন, কয়েকটি মাস অর্থনীতিকে সচল থাকতে দিতে হবে, তালেবানকে নমনীয়তা প্রদর্শনের সুযোগ দিতে হবে তবে এবার নিশ্চিয়ই ভিন্নভাবে এগুলো করতে হবে। অর্থের অপব্যবহার ঠেকাতে তদারকির ব্যবস্থাও রাখতে হবে বলে জানান তিনি।

আফগানিস্তানের সরকারি ব্যয়ের ৭৫ শতাংশই আসত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিদেশি দাতাদের থেকে। তবে ২০ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহারের পাশাপাশি অর্থ সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আফগানিস্তানে মানবিক ত্রাণ দিতে প্রস্তুত রয়েছেন তারা। তবে অর্থনীতি সচল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ ছাড় বা অন্য পদক্ষেপগুলো নির্ভর করবে তালেবানের কর্মকা-ের ওপর।

এদিকে আফগানিস্তানে ৩ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। এই সহায়তার আওতায় আফগানিস্তানকে খাদ্যসামগ্রী ও করোনার টিকা দেওয়া হবে। তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের আগে থেকে সংগঠনটির সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে চীন। সে সময় থেকেই তালেবানকে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দিয়ে আসছে দেশটি। চীনকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আখ্যায়িত করে আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে দেশটিকে পাশে চেয়েছে তালেবানও। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার ঘোষিত আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে দেশটি। বুধবার আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে পাকিস্তান, ইরান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। সেখানেই তিনি আফগানিস্তানকে সহায়তার ঘোষণা দেন। দেশটিকে ৩০ লাখ ডোজ করোনা টিকা দেওয়ার কথাও জানান তিনি। এ সময় এসব দেশকে আফগানিস্তানের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close