প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৪ আগস্ট, ২০২১

কৃষক থেকে প্রেসিডেন্ট

কৃষক, শিক্ষক, সংগঠক, প্রেসিডেন্ট। ব্যক্তি একজন। কিন্তু পরিচয় চারটি। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্তিলিওর পরিচয় তাই। কৃষক থেকেই দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তিনি।

অন্যতম দরিদ্র এলাকার ছোট্ট এক গ্রামে ১৯৬৯ সালে পেদ্রোর জন্ম। ৯ ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। মা-বাবা দুজনই অক্ষরজ্ঞানহীন। পেশা তাদের কৃষি। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান হলে যেমনটা হয়, ছোটবেলা থেকেই মা-বাবার সঙ্গে কৃষি কাজ করে বেড়ে উঠেছেন পেদ্রো। তবে কৃষি কাজ করলেও পড়াশোনায় ছাড় দেননি পেদ্রো। কিন্তু তার স্কুল ছিল অনেক দূরে। বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে দুই ঘণ্টার বেশি সময় হেঁটে তবেই স্কুলে পৌঁছাতে হতো পেদ্রোকে।

পড়াশোনার খরচ জোগাতে কিশোর ও তরুণ বয়সে পেদ্রোকে কফিখেতে কাজ করতে হয়েছে। আইসক্রিম বিক্রি করেছেন। রাজধানীতে গিয়ে বিক্রি করেছেন সংবাদপত্র। এমনকি হোটেলের টয়লেটও পরিষ্কার করেছেন। এভাবে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হন তিনি।

শিক্ষাজীবন শেষে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হন পেদ্রো। ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল। ২৫ বছর এ পেশায় নিজেকে নিযুক্ত রাখেন তিনি। শিক্ষকতা করার একপর্যায়ে পেশাগত ইউনিয়নে যুক্ত হন তিনি।

২০০২ সালে রাজনীতিতে নাম লেখান পেদ্রো। তখন তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে হেরে যান তিনি।

পেদ্রো আলোচনায় আসেন ২০১৭ সালে। স্কুলশিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধিসহ অন্যান্য দাবিতে ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেন তিনি। এ আন্দোলন তাকে পরিচিতির পাশাপাশি জনপ্রিয়তা এনে দেয়। সেই হলো তার শুরু। তারপর পেদ্রো যে মিশনে নামেন, এর গল্প অনেকটা এমন- ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’।

এলাকায় স্বর্ণের বৃহৎ খনি আছে। কিন্তু সেখানকার মানুষের জীবনে এর ন্যূনতম প্রভাবও নেই। তারা গরিবের মধ্যেও গরিব। ধনী-গরিব, গ্রাম-শহরের মধ্যকার বৈষম্য বিস্তর। বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রামীণ ও গরিব জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নেই। নেই স্বীকৃতি। এসব বিষয় পেদ্রোকে মূলধারার রাজনীতিতে নামতে প্রভাবিত করে।

২০২১ সালে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ান পেদ্রো। প্রথম দফার নির্বাচনে অখ্যাত এ প্রার্থীকে কেউ হিসাবের খাতায় রাখেনি। কিন্তু রাজনীতিতে নবিশ পেদ্রোই দেখান চমক। প্রায় দেড় ডজন প্রার্থীকে পেছনে ফেলে প্রথম দফায় প্রথম হন তিনি।

দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে পেদ্রোর প্রতিপক্ষ কিকো ফুজিমোরি। এবার কঠিন লড়াই। বামপন্থি বনাম ডানপন্থি। পেদ্রো বামপন্থি। কিকো ডানপন্থি।

ক্ষমতার রাজনীতির কেন্দ্রসহ শহরাঞ্চলে পেদ্রো অচেনা। আগন্তুক। ‘আউটসাইডার’। তবে গ্রামীণ এলাকায় তিনি এরই মধ্যে পরিচিত মুখ। সেখানে তিনি ‘আমি তোমাদেরই লোক’। নির্বাচনী প্রচারে পেদ্রো তার গ্রামীণ পরিচয়ই তুলে ধরেন। তিনি কৃষকের মতো মাথায় গোল হ্যাট পরে প্রচারে অংশ নেন। তিনি তার প্রচারে দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনের কথা বলেন। সবার জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কথা বলেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেন। তার প্রচারের কেন্দ্রে ছিল জনগণ। তিনি বলেন, ধনী দেশে কোনো গরিব থাকবে না।

অন্যদিকে পেদ্রোর প্রতিপক্ষ কিকোর জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক পরিবারে। তার বাবা দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। একসময় কিকো ফার্স্ট লেডির দায়িত্বও পালন করেছেন। পরে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে নামেন। একাধিকবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। শহুরে, ধনিক, এলিট ও ব্যবসায়ী শ্রেণির মধ্যে তার পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা আছে। রাজনীতির মারপ্যাঁচও তিনি ভালো জানেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি পেদ্রোকে ধরাশায়ী করার সব চেষ্টাই করেন। তার অংশ হিসেবে পেদ্রোকে উগ্রবাদী বামপন্থি হিসেবে অভিহিত করা হয়। বলা হয়, সশস্ত্র কমিউনিস্ট গেরিলা গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তার যোগসূত্র আছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন পেদ্রো। গত ৬ জুন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। ১৫ জুন ভোট গণনা শেষ হয়। পেদ্রো পান ৫০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট। কিকো পান ৪৯ শতাংশের কিছু বেশি।

ভোট গণনা শেষ হতেই পেদ্রো নিজেকে জয়ী দাবি করেন। পরাজয় মানতে অস্বীকৃতি জানান কিকো। তিনি নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন। শুরু হয় অভিযোগ পর্যালোচনা। পর্যালোচনায় প্রায় দেড় মাস সময় লেগে যায়। গত ১৯ জুলাই ঘোষণা করা হয় চূড়ান্ত ফলাফল। কিকোকে ৪৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেন পেদ্রো।

জীবনে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েই জয় পান পেদ্রো। তার এ জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন গ্রামীণ ভোটাররা। গ্রামীণ এমন অনেক কেন্দ্র আছে, যেখানে কিকো ভোটই পাননি।

গত ২৮ জুলাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন পেদ্রো। চারটির (কৃষক, শিক্ষক, সংগঠক, প্রেসিডেন্ট) মধ্যে তিনি নিজেকে কোনো পরিচয় দিতে পছন্দ করেন, এর উত্তর পাওয়া গেল শপথের দিন। অভিষেক ভাষণে পেদ্রো সগৌরবে জানিয়ে দেন, এই প্রথম তার দেশ পেরু একজন কৃষক দ্বারা পরিচালিত হবে। সূত্র : বিবিসি

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close