প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ৩১ জুলাই, ২০২১

ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরুর আশঙ্কা

ভারতে করোনা মহামারির সংক্রমণ ফের বাড়ছে। গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ হাজার ২৩০ জন নতুন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই সংখ্যা গত তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশটিতে সংক্রমণের নতুন ঊর্ধ্বগতি উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, হয়তো সংক্রমণের তৃতীয় ধাক্কা আসতে চলেছে। নতুন ঢেউ শুরু হতে পারে আশঙ্কায় কেরালায় লকডাউন দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে আংশিক লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। খবর এনডিটিভি ও রয়টার্সের।

মহামারি শুরুর পর এখন পর্যন্ত ভারতে সরকারি হিসাবেই ৩ কোটি ১৫ লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে; সর্বশেষ এক দিনে ৫৫৫ মৃত্যু নিয়ে দেশটিতে কোভিডে মৃত্যু পৌঁছেছে ৪ লাখ ২৩ হাজার ২১৭ জনে।

অতিসংক্রামক ডেল্টা ধরনের দাপটে চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে ভারতে দৈনিক শনাক্ত রোগী ও মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও পরে তা কমতে শুরু করে। গত কিছুদিন ধরে এ হারকে খানিকটা ঊর্ধ্বমুখী দেখা যাচ্ছে, সর্বশেষ আট দিনের মধ্যে সাত দিনই শনাক্ত রোগী আগের দিনের সংখ্যা টপকে গেছে।

জুনের শেষ দিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অক্টোবরের মধ্যে ভারতে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন; নতুন ওই ঢেউ এপ্রিল-মে’র প্রাদুর্ভাবের মতো এত মারাত্মক হবে না বলে অনুমানও ছিল তাদের।

ভারতে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে আনতে টিকাদান কর্মসূচি দ্রুত করতেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন। দেশটির ১৩৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৬৭ দশমিক ৬০ শতাংশেরই করোনাভাইরাসবিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে এক গবেষণায় ধারণা দেওয়া হয়েছে; দেশটির ৯৪ কোটি ৪০ লাখ প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৮ শতাংশ টিকার অন্তত একটি ডোজ পেয়েছে।

সংক্রমণের হার বাড়তে দেখে বৃহস্পতিবার থেকে নতুন লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে কেরালা; উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অনেক রাজ্য দিয়েছে বিধিনিষেধ।

বর্তমানে করোনার হটস্পট হয়ে উঠেছে কেরালা। রাজ্যের পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বিশেষজ্ঞদের একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। অতিরিক্ত সংক্রমণের কারণ ও বিস্তার রোধে করণীয় অনুসন্ধানে সেখানে কাজ করবেন তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে অস্থায়ীভাবে দুদিনের এ লকডাউনের সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের। তবে শনিবার থেকে পুরোপুরি লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ভারতে দৈনিক শনাক্ত নিম্নমুখী হলেও রাজ্য হিসেবে কেরালার পরিস্থিতি বেশ শোচনীয়। ভারতের মোট সক্রিয় রোগীর ৩৭ শতাংশই এই রাজ্যের। যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি, সেসব জায়গায় জারি করা রয়েছে বিশেষ বিধিনিষেধ।

পশ্চিমবঙ্গে আংশিক লকডাউনের মেয়াদ ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাজ্য সচিবালয় নবান্নের মুখ্যসচিব স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে রাতে চলাচলের ওপর কড়াকড়ি বহাল রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কেউ বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হতে পারবে না।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই লকডাউন পুরোপুরি তুলে না নিয়ে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে আংশিক লকডাউনের মেয়াদ ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আংশিক লকডাউনে গণপরিবহন ও মেট্রোরেল চালু থাকলেও লোকাল ট্রেন চলাচলের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়নি রাজ্য সরকার। এ সময় আগের মতো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে চালাতে পারবে। ব্যাংক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও রাজ্যের সব স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।

এদিকে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রকাশিত সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৮১৫ জনের, আর মারা গেছেন ১৪ জন। এ নিয়ে রাজ্যে মোট ১৫ লাখ ২৫ হাজার ৭৭৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, আর মৃত্যু হয়েছে ১৮ হাজার ১০৯ জনের। এর আগের ঘোষণায় রাজ্যে আংশিক লকডাউনের মেয়াদ ছিল ৩১ জুলাই পর্যন্ত, আজ তা বাড়িয়ে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত করা হলো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close