প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
ইরাকে যুদ্ধ সমাপ্তির ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
ইরাকে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের সমাপ্তি টানতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সেনারা দেশটিতে পা রাখার দেড় যুগ পর চলতি বছরের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযান গুটিয়ে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় সোমবার হোয়াইট হাউসে সফররত ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল খাদেমির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এ বিষয়ে চুক্তিও হয়ে গেছে। বর্তমানে ইরাকে আড়াই হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে, যারা মূলত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে অভিযানেই ব্যস্ত। পূর্বসূরী জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে ইরাক ও আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পরই বাইডেন এই দুই বড় রণাঙ্গনের একটি আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারে উদ্যোগী হন। আগস্টের শেষ দিকে পুরোপুরি আফগান ভূখ- ত্যাগ করার কথা মার্কিন সেনাদের। আর এখন ইরাক যুদ্ধ সমাপ্তির ঘোষণা এলো। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
হোয়াইট হাউসে স্থানীয় সময় সোমবার ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল-খাদেমির সঙ্গে বৈঠকে বসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। দুই দেশের কৌশলগত আলোচনার অংশ হিসেবে হোয়াইট হাউসে এটাই তাদের প্রথম কোনো মুখোমুখি বৈঠক। এ বৈঠকের পরই ইরাকে যুদ্ধ মিশন সমাপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, এ বছরের শেষের দিকে মার্কিন বাহিনী ইরাকে তাদের যুদ্ধ মিশন শেষ করবে। তবে তারা ইরাকি সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া অব্যাহত রাখবে। বাইডেন বলেন, ইরাকে আমাদের সহায়তা, প্রশিক্ষণ, আইএসকে প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে। তবে এ বছরের শেষ নাগাদ সেখানকার যুদ্ধে আমরা আর থাকছি না।
ইরাকের তৎকালীন নেতা সাদ্দাম হোসেনের সরকার ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলেছে, এমন অভিযোগ তুলে ২০০৩ সালে দেশটিতে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী। এরপর সাদ্দামকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হলেও সেসব অস্ত্রের হদিস আজ পর্যন্ত মেলেনি। ইরাকে বর্তমানে আড়াই হাজার মার্কিন সেনা স্থানীয় বাহিনীকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের অবশিষ্টাংশের মোকাবিলায় সহায়তা করছে।
বৈঠকের আগে ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা জানান, বৈঠকে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের মিশন শেষ করতে একটি চুক্তি সম্পাদিত হবে। এর ফলে ১৮ বছর ধরে চলা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরবে তাদের সব সেনা।
বাইডেন প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সোমবারের বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মিশন সমাপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই অঞ্চলে মার্কিন সেনাদের ভূমিকা ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়েছে।
খাদেমির সফরের আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেছিলেন, অভিযান সফল হয়েছে এমন ঘোষণা কেউই দিতে যাচ্ছেন না, কারণ লক্ষ্য হচ্ছে আইএসকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা। তিনি বলেন, ‘আমরা কোথায় ছিলাম, অ্যাপাচি হেলিকপ্টারগুলো কিভাবে লড়েছে, কোন সময়টাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালিয়েছে, সেদিকে দৃষ্টি দিলেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চোখে পড়বে। তাই আমরা মনে করি এ বছরের শেষ নাগাদ সত্যিকার অর্থেই ভালো একটা অবস্থানে থাকব, যেখান থেকে আমরা পরামর্শমূলক এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ শুরু করতে পারব।’
এর একদিন আগে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী খাদেমি বলেন, দেশে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের এখন আর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে আইএসবিরোধী যুদ্ধ ও আমাদের সেনাদের প্রস্তুতির বিষয়ের জন্য একটি বিশেষ সময়সীমা প্রয়োজন।
গত এপ্রিলে ওয়াশিংটন ও বাগদাদের আলোচনায় ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহারের সম্ভাবনা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে সোমবারের বৈঠকে।
এদিকে ইরাকে আইএসের বড় ধরনের বোমা হামলার এক সপ্তাহ পরই তাদের এ বৈঠক হয়েছে। যদিও বাগদাদ প্রায় তিন বছর আগেই ঘোষণা দিয়েছে, ইরাকে আইএস পরাজিত হয়েছে। তবে বাস্তবে দেশটিতে এখনও আইএস সক্রিয়।
ইরাকে টিকা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : এদিকে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ফাইজার-বায়োএনটেকের কেরানাভাইরাসের টিকার পাঁচ লাখ ডোজ ইরাকে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। বাইডেন জানিয়েছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এসব টিকা ইরাকে পৌঁছাবে। এছাড়া অক্টোবরে ইরাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘের তহবিলে ৫২ লাখ ডলার দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
"