প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ভাঙার পাঁয়তারা বিজেপির
বলা চলে শান্তই আছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক ব্যবধানে পরাজয়ের পর এখন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নতুন খেলা শুরু করেছে বিজেপি। সর্বশেষ পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের সাতটি জেলা নিয়ে কেন্দ্রশাসিত একটি রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার দাবি তুলেছে বিজেপি। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাই তারা উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য দাবি তুলেছেন ‘উত্তরবঙ্গ’ নামে পৃথক একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার। এই সাতটি জেলা হলো কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং ও মালদহ জেলা।
এই দাবি প্রথম ওঠে ১৪ জুন। বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলার সহসভাপতি অলোক চক্রবর্তী একটি বৈঠকের পর ওই দিন বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে নিরাপত্তার অভাব চরমে। ঢালাও অনুপ্রবেশ হচ্ছে। সার্বিক উন্নয়ন হচ্ছে না, পিছিয়ে পড়ছে উত্তরবঙ্গ। তাই আমরা দাবি তুলেছি উত্তরবঙ্গকে একটি রাজ্য হিসেবে বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার। যাতে উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।’
এই লক্ষ্যে বিজেপি শিগগিরই শুরু করছে গণস্বাক্ষর অভিযান। লোকসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরুর আগেই এই দাবি নিয়ে স্মারকলিপি পৌঁছে দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। বিজেপির আরো অভিযোগ, বাংলাদেশ, নেপালসহ একাধিক দেশ থেকে উত্তরবঙ্গে ঢুকছে দুষ্কৃতকারীরা, এমনকি রোহিঙ্গারাও। তারা ‘সেফ প্যাসেজ’ হিসেবে ব্যবহার করছে উত্তরবঙ্গকে।
এদিকে কোচবিহারে একটি হোটেলে গত শনিবার এক বৈঠক হয় বিজেপি নেতাদের। সেই বৈঠকে যোগ দেন কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের দুই বিজেপি সংসদ সদস্য নিশীথ প্রমাণিক ও জন বারলা এবং চারজন বিজেপি বিধায়ক। এই বৈঠকের পর সংসদ সদস্য জন বারলা জানিয়ে দেন, পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা হোক উত্তরবঙ্গকে। এটাই জনগণের চাওয়া। জন বারলা বলেন, ‘আমি এখানকার সংসদ সদস্য। এখানের মাটির সঙ্গে যুক্ত। আমি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এই দাবি তুলে ধরব। জনতাই এখন আওয়াজ তুলেছে উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য গড়ার।’
যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন এ ব্যাপারে দলীয় কোনো আনুষ্ঠানিক অবস্থান নেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শাসকদলের হামলাকে প্রতিহত করা। নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষে এই রাজ্য থেকে আমাদের ১১ হাজার কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। বাড়িঘর ছাড়া হয়েছেন। আমরা ২০ জুন রাজ্যজুড়ে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করেছি।’
ওদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা বাংলাকে ভাঙতে দেব না। পরাধীন হতে দেব না। যারা বাংলাকে ভাগ করতে চায়, তাদের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।’ মমতা প্রশ্ন করে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার মানে কী? এবার কি জম্মু-কাশ্মীরের মতো মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে? এটা করা এত সহজ নয় এই বাংলায়। রাজ্য কি অনুমতি দেবে বিজেপিকে বঙ্গভঙ্গে? বিজেপি চাইলেই আমরা জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারকে বিক্রি করতে দেব না। বাংলার মানুষ বিজেপির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।’
মমতা বলেছেন, এর আগে দার্জিলিংকে নিয়ে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য, কোচবিহারকে নিয়ে বৃহত্তর কোচবিহার রাজ্য, কামতাপুরি রাজ্য গড়ার আন্দোলন হলেও বাংলার মানুষের প্রতিবাদের মুখে সেসব আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে। এবারও উত্তরবঙ্গ নিয়ে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার আন্দোলনও শেষ হবে। কারণ এই বাংলার মানুষ কোনো দিনই বঙ্গভঙ্গ হতে দেবে না।
এই নতুন দাবি প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গের সিপিএম নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী ও শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, বিজেপি এখন বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মানুষ তাদের স্বেচ্ছাচারিতার জবাব দেবে।
দার্জিলিং জেলার কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেছেন, অনেক দিন ধরেই বিজেপি এই খেলার চেষ্টা করছে। কখনো গোর্খাল্যান্ড, আবার কখনো কামতাপুরি রাজ্য। এবার আবার উত্তরবঙ্গ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার কথা উঠেছে। বাংলার মানুষ তা মানবে না বলেই মনে করেন শঙ্কর।
"