করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে টালমাটাল ভারত। গত কয়েকদিন ধরেই দেশটিতে প্রতিদিন সংক্রমণের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। করোনার সংক্রমণে গত সাত দিনে ছয়বার নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছে ভারত। দেশটিতে সর্বশেষ গত রবিবার সকাল থেকে গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে প্রায় পৌণে দুই লাখ মানুষের দেহে। আর এতে বৈশ্বিক সংক্রমণ তালিকায় ব্রাজিলকে ছাড়িয়ে তিন থেকে দুই নম্বর স্থানে উঠে এসেছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ এই দেশটি। আর তালিকায় তিনে নেমে গেছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল সকালে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯১২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৯০৪ জনের। বর্তমানে অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যা ১২ লাখ পেরিয়েছে। সংক্রমণের তুলনায় সুস্থতার হার অনেক কম। এক দিনে করোনা থেকে মুক্ত হয়েছেন ৭৫ হাজার ৮৬ জন।

সংক্রমণের নিরিখে দেশের রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা মহারাষ্ট্রের। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩ হাজার ২৯৪ জন। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এক দিনে সে রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৪৯ জনের। গতকাল সোমবার সকাল ৭টা থেকে মহারাষ্ট্রে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ছত্তিশগড়, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও ভয়াবহ। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বেশির ভাগ রাজ্যেই রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন।

নতুন বিধিনিষেধ জারি করেছে দিল্লি সরকার। সেখানে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। এ ছাড়া রেস্টুরেন্ট, থিয়েটার, গণপরিবহন, বিয়ে এবং শেষকৃত্যের মতো অনুষ্ঠানে লোকজনের অংশগ্রহণে সীমিত করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

বর্তমানে ১ কোটি ৩৫ লাখ আক্রান্ত নিয়ে বিশ্বের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। প্রথম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তৃতীয় স্থানে চলে গেছে ব্রাজিল। তবে যেভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে আগামীদিনে প্রথম স্থানেও ভারত উঠে আসতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসক-গবেষকদের। তবে সংক্রমণ বাড়তেই দেশে টিকাকরণের ওপর আরো জোর দেওয়া হয়েছে। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া টিকাদান কর্মসূচিতে এরই মধ্যে ১০ কোটি ৪৫ লাখের বেশি মানুষ করোনার টিকা পেয়েছেন। তবে মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, দিল্লি, তেলেঙ্গানা, রাজস্থানসহ একাধিক রাজ্য টিকার ঘাটতির অভিযোগ জানিয়েছে। শিগগিরই কেন্দ্র টিকা না পাঠালে আগামী এক-দুদিনের মধ্যেই টিকাকরণ কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাবে বলে তারা জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১৩ কোটি ৬৭ লাখ ৩৪ হাজার ৮৬ জন। আর মারা গেছেন ৩০ লাখ ৭৩ হাজার। সংক্রমণ-মৃত্যুর দিক থেকে এখনো শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৮ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া শনাক্ত হয়েছে ৩ কোটি ১৯ লাখ ১৫ হাজার ১৭৯ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ২ কোটি ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯২ জন।

সংক্রমণ তালিকায় তৃতীয় স্থানে নেমে গেলেও মৃত্যুর দিক থেকে এখনো দুইয়ে রয়েছে ব্রাজিল। লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৩৪ লাখ ৮২ হাজার ২৩ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৩ লাখ ৫৩ হাজার ১৩৭ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬৪ জন।

সংক্রমণের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ফ্রান্স, পঞ্চম স্থানে রাশিয়া, ষষ্ঠ স্থানে যুক্তরাজ্য, সপ্তম স্থানে তুরস্ক, অষ্টম স্থানে ইতালি, নবম স্থানে স্পেন এবং দশম স্থানে রয়েছে জার্মানি।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। করোনা প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ওই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

"