প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
‘সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতী’ যুক্তরাজ্যে পাওয়া ধরন
যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি বেশি প্রাণঘাতী হতে পারে, প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণে এমন ইঙ্গিত মিলেছে। ডাউনিং স্ট্রিটের এক ব্রিফিংয়ে এমনটাই জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সংক্রমণের ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে স্বাস্থ্যসেবার ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্যও করেছেন।
জনসন বলেছেন, ‘দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি লন্ডন ও যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বে পাওয়া এ ধরনটিতে মৃত্যুহার বেশি হতে পারে বলে কিছু কিছু তথ্য-প্রমাণে মনে হচ্ছে।’ তবে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা প্যাট্রিক ভ্যালেন্স বলেছেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ক যত তথ্য পাওয়া গেছে তা ‘সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট নয়।’
নতুন এ ধরনটি এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। সংস্থাটি লিখেছে, নতুন ও পুরোনো ধরনগুলোতে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহারের তুলনা করে গণিতজ্ঞরা যুক্তরাজ্যে পাওয়া ধরনটি বেশি প্রাণঘাতী হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও এটি কতটা মারাত্মক, সে বিষয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া করোনাভাইরাসের বেশ কয়েকটি টিকাও ধরনটির বিরুদ্ধে কার্যকর হবে বলে অনেকে মনে করছেন।
পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড, ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডন, লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিন এবং ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটার নতুন ধরনটি কতটা প্রাণঘাতী তা খতিয়ে দেখছে। তাদের পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করছে নিউ অ্যান্ড ইমার্জিং রেসপিরেটরি ভাইরাস থ্রেটস অ্যাডভাইজরি গ্রুপের (এনইআরভিটিএজি) বিজ্ঞানীরা।
এনইআরভিটিএজি বলছে, ভাইরাসের নতুন ধরনটির বেশি প্রাণঘাতী হওয়ার ‘বাস্তব সম্ভাবনা’ আছে; যদিও এ বিষয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আগে করা কয়েকটি গবেষণায় নতুন ধরনটি অন্য ধরনগুলোর তুলনায় ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ দ্রুতগতিতে ছড়ায় বলে ধারণা দেওয়া হয়েছিল; এটি অন্যগুলোর তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি প্রাণঘাতী হতে পারে বলেও সামান্য ইঙ্গিত মিলেছিল।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছিল, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ৬০ বছর বয়সি এক হাজার ব্যক্তির মধ্যে পুরোনো ধরনে যেখানে ১০ জনের মৃত্যু হতে পারে বলে অনুমান করা হয়, নতুন ধরনে সেটি বেড়ে ১৩ তে দাঁড়াতে পারে। তবে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে তুলনায় মৃত্যুহার বৃদ্ধির কোনো তথ্য মেলেনি। মহামারির মধ্যে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা দিন দিন উন্নত এবং চিকিৎসকরা আরো অভিজ্ঞ হয়ে ওঠায় নতুন ধরনে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার আগের ধরনগুলোর তুলনায় বেশি দেখা যায়নি বলেও কেউ কেউ ধারণা করছেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেন্টে নতুন এ ধরনটি প্রথম শনাক্ত হয়। এখন ইংল্যান্ড ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে ‘তুলনামূলক দ্রুতগতিতে’ ছড়াতে সক্ষম এই ধরনটিই প্রাধান্য বিস্তার করছে। যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি আরো অর্ধশতাধিক দেশে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। ফাইজার এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন যুক্তরাজ্যে পাওয়া ধরনটির বিরুদ্ধে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা প্যাট্রিক এখন দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে পাওয়া ভাইরাসের অন্য দুই ধরন এবং ভ্যাকসিন সেগুলোর বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে বেশ চিন্তিত।
বরিস জনসন জানিয়েছেন, তার সরকার ভাইরাসের নতুন কোনো ধরনের দেশে প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত আরো সুরক্ষিত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেছেন, ‘ঢোকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারছি না আমি, তবে আমদের হয়তো আরো ব্যবস্থা নেওয়া লাগতে পারে।’
গত সপ্তাহে দক্ষিণ আমেরিকা, পর্তুগাল ও অনেক আফ্রিকান দেশগুলোতে নতুন স্ট্রেইন নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সমস্ত আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের এখন ইউরোপে যাওয়ার আগে করোনা নেগেটিভ পরীক্ষা করতে হবে এবং প্রবেশের পর কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
"