আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৯ অক্টোবর, ২০২০

আজারবাইজান-আর্মেনিয়া আবার যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ

নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মাত্র চার মিনিটের মাথায় সেটি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সময় শনিবার মধ্যরাত থেকে ওই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে সমঝোতা হয়েছিল। তবে আর্মেনিয়ার দাবি, এটি কার্যকর হওয়ার মাত্র চার মিনিটের মাথায় আর্টিলারি শেল ও রকেট ছুড়ে তা লঙ্ঘন করেছে আজারবাইজান। এই অভিযোগের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত আজেরি কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে শনিবার সকালে আর্মেনিয়ার ছোড়া গোলার আঘাতে আজারবাইজানের অন্তত ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। পরে উভয় পক্ষ চুক্তিতে সম্মত হলেও সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে।

দুই দেশই মানবিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়, যদিও এ বিষয়ে তেমন বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। আজারবাইজানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টদের দেওয়া বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাগোরনো-কারাবাখ সংঘাতে মধ্যস্থতা করার জন্য ওই তিন দেশের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে ওএসসিই মিনস্ক গ্রুপ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়। আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আন্না নাঘদালিয়ান-ও এক টুইট বার্তায় একই রকম বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, তার দেশ ‘যুদ্ধবিরতি ও উত্তেজনা’ প্রশমনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ যিনি এর আগের সপ্তাহে হওয়া চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিলেন তিনি দুই দেশেরই পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি তাদের বলেছেন যে, দুই দেশেরই আগের চুক্তিটির শর্ত কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত।

আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শুশান স্টিপানিয়ান টুইটারে লেখেন, ‘শত্রুপক্ষ স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১২টা ৪ মিনিটে উত্তর দিকে আর্টিলারি শেল নিক্ষেপ করে। রাত ২টা ২০ থেকে ২টা ৪৫ মিনিটের সময় দক্ষিণ দিকে রকেট নিক্ষেপ করে।’ আজারবাইজান জানিয়েছে, আর্মেনিয়া শনিবার সকালে গ্যাঞ্জা শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছালিয়েছে। এতে ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ৪৫ জন। যুদ্ধাঞ্চলের বাইরে হওয়া সত্ত্বেও সেখানে হামলা চালিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে আর্মেনিয়া।

আজেরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আর্মেনিয়া নির্বিচারে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে তা-ব চালাচ্ছে।

নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের পুরোনো সংঘাত গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে আবার শুরু হয়। গত কয়েক দিনের সংঘাতে ৩ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এই সংঘাতে নিজ দেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে আর্মেনিয়া। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে এ বাস্তবতা স্বীকার করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান। তিনি বলেন, আর্মেনিয়ার বহু হতাহত হয়েছে। তবে এখনো সেনাবাহিনী কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে। নিকোল পাশিনিয়ান বলেন, ‘আমাদের সবার জানা প্রয়োজন যে, আমরা একটা কঠিন পরিস্থিতি পার করছি। জনশক্তি ও উপকরণের ক্ষয়ক্ষতি হলেও আর্মেনিয়ার সেনারা এখনো নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। তারা প্রতিপক্ষের জনশক্তি ও উপকরণের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি করেছে।’

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ অভিযোগ তুলেছেন, আর্মেনিয়া তাদের গ্যাস ও তেলের পাইপলাইনে আক্রমণ করেছে। তুরস্কের প্রচার মাধ্যম হেবারতুর্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আর্মেনিয়া আমাদের পাইপলাইন আক্রমণ করে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। তার যদি এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে, তাহলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।’ অন্যদিকে সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের সঙ্গে আলাপকালে আজারবাইজানের সঙ্গে তার দেশের চলমান সংঘাতের জন্য তুরস্ককে দায়ী করেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী। রয়টার্সকে তিনি বলেন, তার বিশ্বাস তুরস্ক অবস্থান বদলালেই আজারবাইজান কারাবাখে সামরিক পদক্ষেপ স্থগিত করবে। নিকোল পাশিনিয়ান বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তুরস্কের অবস্থান পরিবর্তন না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আজারবাইজান থামবে না। তারা সংঘাত থামাবে না।

সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোর সামরিক জোটের সদস্য আর্মেনিয়া, যার নেতৃত্বে রয়েছে রাশিয়া। আবার আজারবাইজানের ঘনিষ্ঠ মিত্র তুরস্ক। তুর্কি ও আজেরি রাজনীতিকরা দুই দেশের সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করতে একটি বাক্য ব্যবহার করে থাকেন। এটি হচ্ছে, ‘এক জাতি, দুই দেশ।’ দুই দেশের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মের মিল রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close