জান্নাতুন নিসা
বঙ্গাব্দ, নববর্ষ ও বৈশাখ উদযাপন
মরমি শেকলে বাঁধা আদিম পিপাসার বিস্তৃত লুটোপুটি যখন অপূর্ব রাহুর নিপুণ দাপাদাপিতে উত্তাল বাতাসের গায়ে চন্ডাল গয়না হয়ে প্রকৃতিকে সাজিয়ে নেয়, তখনই আমরা দেখা পাই বৈশাখী হাওয়ার। আর এই যে বৈশাখ মাস কিংবা পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন নিয়ে আমাদের এত ব্যস্ততা কিংবা ছুটে চলা অথচ নামকরণ থেকে শুরু করে এর উদযাপন এবং আধুনিক অবস্থান পর্যন্ত এর রয়েছে সুবিশাল ইতিহাস। তবে চলুন, ইতিহাসের উঠন্ত ভেলায় সংক্ষিপ্তসারে ঘুরে আসা যাক। ব্যুৎপত্তিগতভাবে ‘বৈশাখ’ শব্দটি এসেছে বিশাখা নামক নক্ষত্রের নাম থেকে। বলা হয়ে থাকে এই মাসে বিশাখা নক্ষত্রটিকে সূর্যের কাছে দেখা যায়। আর মাসের হিসেবে বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনের প্রথম মাস এবং শকাব্দ বা ভারতীয় রাষ্ট্রীয় পঞ্চাঙ্গের দ্বিতীয় মাস এই বৈশাখ। এদিকে বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটি হলো বাংলা নববর্ষ। এই দিনটি বাংলাদেশে ‘পহেলা বৈশাখ’ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে ‘পয়লা বৈশাখ’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ ও ভারতে এই দিনটি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হয়। কেবল তাই নয়, নেপালি পঞ্জিকা বিক্রম সম্বৎ ও পাঞ্জাবি নানকশাহী পঞ্জিকার প্রথম মাসও বৈশাখ। অন্যদিকে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিতে এপ্রিল মাসের শেষার্ধ ও মে মাসের প্রথমার্ধ নিয়ে বৈশাখ মাস। নামের ক্ষেত্রেও এ মাসের রয়েছে বিভিন্ন নামকরণ। বৈদিক পঞ্জিকায় বৈশাখ মাসকে মাধব মাস এবং বৈষ্ণব পঞ্জিকায় একে মধুসূদন মাস বলে।
প্রথাগত দিক থেকে বৈশাখ মাস থেকে গ্রীষ্ম ঋতুর শুরু ধরা হয়। তবে সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বারো মাসের অনেক উৎসব অনেক কাল আগে থেকেই পালিত হতো। এই সৌর পঞ্জিকার শুরু হতো গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে। সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, বঙ্গ, কেরালা, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু, ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পালিত হতো। এদিকে বাংলা দিনপঞ্জিকার সঙ্গে হিজরি এবং খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্যটি হচ্ছে হিজরি সাল চাঁদের হিসেবে এবং খ্রিস্টীয় সাল আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এ কারণে হিজরি সালে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায়, আকাশে নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার পর আর খ্রিস্টীয় সালে নতুন দিন শুরু হয় ইউটিসিক্ট ০০:০০ অনুযায়ী। পহেলা বৈশাখ রাত ১২টা থেকে শুরু না হয়ে সূর্যোদয় থেকে শুরুর বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে, তবে ঐতিহ্যগতভাবে সূর্যোদয় থেকে বাংলা দিন গণনার রীতি থাকলেও ১৪০২ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ থেকে বাংলা একাডেমি এই নিয়ম বাতিল করে আন্তর্জাতিক রীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে রাত ১২টায় দিন গণনা শুরুর নিয়ম চালু করে। এখন যেমন নববর্ষ নতুন বছরের সূচনার নিমিত্তে পালিত একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় এমনটি ছিল না। তখন নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ ‘আর্তব উৎসব’ তথা ‘ঋতুধর্মী উৎসব’ হিসেবে পালিত হতো। তখন এর মূল তাৎপর্য ছিল কৃষিকাজ, কারণ প্রযুক্তি প্রয়োগের যুগ শুরুর আগ পর্যন্ত কৃষকদের ঋতুর ওপরই নির্ভর করতে হতো।
কবে, কখন পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয়েছে তা বলা দুষ্কর, তবে ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পরে হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষিপণ্যের খাজনা আদায় হতো বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু হিজরি সাল চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সঙ্গে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদের খাজনা পরিশোধের ঝামেলায় পরতে হতো। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন বলে উল্লিখিত আছে। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। তার আদেশে রাজকীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরি সালের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ‘ফসলি সন’, পরে ‘বঙ্গাব্দ’ বা ‘বাংলা বর্ষ’ নামে পরিচিত হয়। সে সময় বাংলা সনের মূল নাম ছিল তারিখ-এ-এলাহী। মুঘল সম্রাট আকবর ১৫৮৫ সালে তার রাজত্বকালের ২৯তম বর্ষের ১০ কিংবা ১১ মার্চ তারিখে এক ডিক্রি জারির মাধ্যমে তারিখ-এ-এলাহী প্রবর্তন করেন। সিংহাসনে আরোহণের পরপরই তিনি একটি বৈজ্ঞানিক, কর্মপোযোগী ও গ্রহণযোগ্য বর্ষপঞ্জি প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন, যেখানে দিন ও মাসের হিসাবটা যথাযথ থাকবে। সে অর্থে আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয়। তারিখ-এ-এলাহীর বারো মাসের নাম ছিল কারবাদিন, আর্দি, বিসুয়া, কোর্দাদ, তীর, আমার্দাদ, শাহরিয়ার, আবান, আজুর, বাহাম ও ইস্কান্দার মিজ। তবে কখন এবং কীভাবে এসব নাম পরিবর্তিত হয়ে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র হয় তা বলা মুশকিল। অনুমান করা হয়, বারোটি নক্ষত্রের নাম নিয়ে পরবর্তীকালে নামকরণ করা হয় বাংলা মাসের। বিশাখা নক্ষত্র থেকে বৈশাখ, জায়ীস্থা থেকে জ্যৈষ্ঠ, শার থেকে আষাঢ়, শ্রাবণী থেকে শ্রাবণ, ভদ্রপদ থেকে ভাদ্র, আশ্বায়িনী থেকে আশ্বিন, কার্তিকা থেকে কার্তিক, আগ্রায়হন থেকে অগ্রহায়ণ, পউস্যা থেকে পৌষ, ফাল্গুনী থেকে ফাল্গুন এবং চিত্রা নক্ষত্র থেকে চৈত্র। আবার অনেক ঐতিহাসিকদের মতে, পহেলা বৈশাখ উৎসবটি ঐতিহ্যগত হিন্দু নববর্ষ উৎসবের সঙ্গে সম্পর্কিত, হিন্দু ও শিখগণ এই উৎসব পালন করে। ভারতের পূর্বাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নববর্ষের উৎসবগুলো হিন্দু বিক্রমী দিনপঞ্জির সঙ্গে সম্পর্কিত। এই দিনপঞ্জির নামকরণ করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ অব্দে বিক্রমাদিত্যের নামানুসারে। কিন্তু বাংলায় বঙ্গাব্দের সূচনা ৫৭ খ্রিস্টপূর্বে হয়নি বরং ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়েছিল, যা নির্দেশ করছে বঙ্গাব্দের সূচনা প্রমাণ সময়কে কোনো একসময় পরিবর্তিত করা হয়েছে। মনে করা হয়, শশাঙ্কের শাসনামলেই এই পরিবর্তন হয়।
‘পুন্যাহ’ (ভূমি রাজস্ব আদায়ের উৎসবের দিন) এবং বাংলা দিনপঞ্জির সূচনা করার জন্য বাংলার মুঘল সুবেদার মুর্শিদ কুলি খান, আকবরের রাজস্বের নীতি ব্যবহার করেন বলে মত প্রকাশ করেন বিশিষ্ট লোকগবেষক শামসুজ্জামান খান। তাঁর এবং নীতিশ সেনগুপ্তের মতে বাংলা দিনপঞ্জির উদ্ভব পরিষ্কার নয়। শামসুজ্জামান খানের মতে, ‘একে বাংলা সন বা সাল বলা হতো, যা যথাক্রমে আরবি ও ফারসি শব্দ। যা নির্দেশ করছে যে এই এটি প্রথম কোনো মুসলিম রাজা বা সুলতানের দ্বারা প্রচলিত হয়েছে।’ অন্যদিকে নীতিশ সেনগুপ্তের মতে, ‘এর ঐতিহ্যগত নাম হচ্ছে বঙ্গাব্দ। বঙ্গাব্দ শব্দটি (বাংলা বছর) আকবরের সময়কালের কয়েক শত বছর পূর্বে দুটো শিব মন্দিরেও পাওয়া যায়, যা বলছে বাংলা দিনপঞ্জির অস্তিত্ব আকবরের সময়ের পূর্বেও ছিল।’ অন্যদিকে এ বিষয়টিও অস্পষ্ট যে আকবর বা হুসেন শাহর দ্বারা বাংলা মাস কিংবা নববর্ষ গৃহীত হয়েছিল কি না! তবে আধুনিক নববর্ষ উদ্যাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম/গৃহ কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ বিষয়ের উল্লেখ পাওযা যায়। বাংলাদেশে ১৯৬৬ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে গঠিত হওয়া একটি কমিটিতে পুরোনো বাংলা দিনপঞ্জিকে সংশোধিত করা হয়। যেখানে প্রথম পাঁচ মাসকে ৩১ দিন, আর বাকি মাসগুলো ৩০ দিন ধরা হয়। প্রতি অধিবর্ষের ফাল্গুন মাসে ৩১ দিন ধার্য করা হয়। ১৯৮৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে এই দিনপঞ্জি গ্রহণ করা হয়। এরপর জাতীয় দিনপঞ্জির সূচনা ও প্রতি বছর নববর্ষ ১৪ এপ্রিলেই হয়ে থাকে। ১৪২৬ বঙ্গাব্দে দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধনী আনা হয়। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির সঙ্গে বাংলা বর্ষপঞ্জির বিশেষ দিনগুলোর সমন্বয় আনতে বাংলা একাডেমি এই পরিবর্তন আনে। নতুন বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন এই ছয় মাস ৩১ দিনে হবে। ফাল্গুন মাস ছাড়া অন্য পাঁচ মাস ৩০ দিনে পালন করা হবে। ফাল্গুন মাস হবে ২৯ দিনের, কেবল অধিবর্ষের বছর ফাল্গুন মাস ৩০ দিনের হবে। বঙ্গাব্দ শব্দটি (বাংলা বছর) আকবরের সময়কালের কয়েক শত বছর পূর্বে দুটো শিব মন্দিরেও পাওয়া যায়, যা বলছে বাংলা দিনপঞ্জির অস্তিত্ব আকবরের সময়ের পূর্বেও ছিল। অন্যদিকে এ বিষয়টিও অস্পষ্ট যে আকবর বা হুসেন শাহর দ্বারা বাংলা মাস কিংবা নববর্ষ গৃহীত হয়েছিল কি না! তবে আধুনিক নববর্ষ উদ্যাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম/গৃহ কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ বিষয়ের উল্লেখ পাওযা যায়। বাংলাদেশে ১৯৬৬ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র নেতৃত্বে গঠিত হওয়া একটি কমিটিতে পুরোনো বাংলা দিনপঞ্জিকে সংশোধিত করা হয়। যেখানে প্রথম পাঁচ মাসকে ৩১ দিন, আর বাকি মাসগুলো ৩০ দিন ধরা হয়। প্রতি অধিবর্ষের ফাল্গুন মাসে ৩১ দিন ধার্য করা হয়। ১৯৮৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে এই দিনপঞ্জি গ্রহণ করা হয়। এরপর, জাতীয় দিনপঞ্জির সূচনা ও প্রতি বছর নববর্ষ ১৪ এপ্রিলেই হয়ে থাকে। ১৪২৬ বঙ্গাব্দে দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধনী আনা হয়। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির সঙ্গে বাংলা বর্ষপঞ্জির বিশেষ দিনগুলোর সমন্বয় আনতে বাংলা একাডেমি এ পরিবর্তন আনে। নতুন বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন এই ছয় মাস ৩১ দিনে হবে। ফাল্গুন মাস ছাড়া অন্য পাঁচ মাস ৩০ দিনে পালন করা হবে। ফাল্গুন মাস হবে ২৯ দিনের, কেবল অধিবর্ষের বছর ফাল্গুন মাস ৩০ দিনের হবে। বৈশাখের প্রথম দিনটিতে যাবতীয় ব্যবসায়িক কাজকর্ম শুরু হয়। ব্যবসায়ীরা এদিন নতুন হালখাতা শুরু করেন। নতুন হালখাতা শুরু উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা খদ্দের বা ক্রেতাদের মিষ্টিসহ বিভিন্ন উপহার ও বাংলা পঞ্জিকা বিতরণ করেন। কলকাতার কালীঘাট মন্দির ও দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে এই দিন প্রচুর পুণ্যার্থী পূজা দেন এবং ব্যবসায়ীরা লক্ষ্মী-গণেশ ও হালখাতা পূজা করেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে চান্দ্রসৌর বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৫ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। আর বাংলাদেশে বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক বাংলা পঞ্জিকা এবং গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ এপ্রিল ‘পহেলা বৈশাখ’ পালিত হয়। শোভাযাত্রা, মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে নববর্ষের দিনটি উদ্যাপন করে থাকি আমরা। নববর্ষের সময় বাংলাদেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এই উৎসব শোভাযাত্রাকে ইউনেস্কো ‘মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষণা করে। নববর্ষের দিনটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ছুটির দিন।
বাঙালিদের সর্বজনীন লোকউৎসব নববর্ষ অর্থাৎ ‘পহেলা বৈশাখ’ উদ্যাপন। এসব আয়োজনের সুবাদে বৈশাখী হাওয়ার মৌতাতভাঙা নিভৃত মুঠোয় আমরা বাঙালি খুঁজে পাই দ্রিমি দ্রিমি উন্মাতাল মাদলে বেজে ওঠা ত্রিকালজয়ী ভোর, কিংবা স্বপ্নশহর ছোঁয়া নতুন জীবনের পেখমমেলা অবিনাশী কানাকানি। মৌসুমি ঐশ্বর্যের অঙ্কুরিত অভিযাত্রায় শামিল হতে আমরা মেতে উঠি বৈশাখ উদ্যাপনের শত আয়োজনে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব আজ আতঙ্কিত-স্তব্ধ, লকডাউনের অভিমানী আল্পনায় উদাসী একতারার মতো বিষণœ। তাইতো ২০২০ সালের এবং এ বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের বৈশাখ উদ্যাপন থমকে গিয়ে বাংলার আকাশে হয়ে উঠেছে ক্ষত্রিয় চাঁদের সীমান্তভেদী দেরাজের একান্ত রক্তক্ষরণ। আমাদের জাতীয় জীবনে বৈশাখ উদযাপন যেন লকডাউনের তীক্ষèভেলায় আলপথছোঁয়া বন্দনায় মহামারি মুক্ত সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশায় হয়ে উঠছে অন্তঃলীন।
"