ফেনী প্রতিনিধি

  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

চাঁদাবাজি করার জন্য শহীদরা রক্ত দেয়নি

জামায়াত আমীর

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘চাঁদাবাজি করার জন্য শহীদরা রক্ত দেয়নি। রাষ্ট্রকে ভালো জায়গায় নিতে হলে দুর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত দেশ গড়তে হবে। ভবিষ্যতে এমন সরকার হবে, যারা গ্রাম থেকে পার্লামেন্ট- সব জায়গায় দুর্নীতিমুক্ত থাকবে।’ ভারত সীমান্তবর্তী ফেনীর বল্লামুখা বাঁধ নিয়ে আলোচনা করতে সরকারের সঙ্গে বসবেন বলেও জানান তিনি।

গতকাল সোমবার দুপুরে ভারত সীমান্তবর্তী ফেনীর পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের নিজকালিকাপুর এলাকায় বল্লামুখা বাঁধ পরিদর্শন করেন তিনি। বাঁধ পরিদর্শন শেষে তিনি পরশুরাম পৌর শহরে পথসভায় বক্তব্য দেন। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বল্লামুখার সমস্যার সমাধান অবশ্যই করতে হবে। বাঁধের ভাঙন অংশটা নোম্যান্সল্যান্ডে। তাদের ভাঙার কারণে আমার দেশের মানুষ ক্ষতির শিকার হয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে। আমরা চাই সরকার শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে এগিয়ে যাক। নদীতে স্লাব দেওয়া হলেও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ হয়নি। তার মানে দুর্নীতি হয়েছে।’

দেশে মানুষের সম্মান-নিরাপত্তা কোনোটিই নেই জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালার কোরআনের ভিত্তিতে শুধু এটা সম্ভব। কোরআনের আইন বাস্তবায়ন হলে দল-মত, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ সুবিচার পাবে। বৈষম্য থাকবে না। সমাজ থেকে অশান্তি দূর হবে। এদেশের মানুষ শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করবে।’ তিনি বলেন, ‘গত বর্ষা মৌসুমে একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল। ভারতীয় পানির চাপে বাঁধ ভেঙে যায় অথবা বাঁধ ভেঙে দেয়। সত্যিকার অর্থে এটি একটি লঙ্কাকাণ্ড। লাখ লাখ মানুষ অসহায় হয়ে গেছে। গবাদিপশু, ফসলের ক্ষতি হয়। ঘর-দুয়ার ভেঙে যায়, তৈষজপত্র নষ্ট হয়। বিছানা-বালিশ কিছুই রক্ষা করতে পারেনি। আমরা এর পরদিনই ঘুরে ঘুরে ফেনী দেখতে এসেছি। মনের কষ্ট নিয়ে যতটুকু পেরেছি, মনের কষ্ট নিয়ে হেঁটে হেঁটে মানুষকে সান্ত¡না দিয়েছি।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফেনী জেলা আমীর মুফতি আবদুল হান্নান ছাড়াও কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবু তাহের মোহাম্মদ মা’ছুম ও কুমিল্লা জেলা আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঞা, অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দীন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, সাবেক জেলা আমীর এ কে এম সামছুদ্দীন, নায়েবে আমীর আবু ইউসুফ, সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবদুর রহীম, সহকারী সেক্রেটারি জামাল উদ্দিন, প্রচার সম্পাদক আ ন ম আবদুর রহীম, পরশুরাম উপজেলা আমীর আবদুল হালিম, সেক্রেটারি মাঈনুল করিম প্রমুখ।

এর আগে ডা. শফিকুর রহমান উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামে সহায়-সম্বলহীন অসহায় নারীকে জামায়াতের পক্ষ থেকে দেওয়া ঘর উদ্বোধন করেন। এদিন ফেনী পৌরসভার সুলতানপুর এলাকায় বন্যায় ঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া মিতুল চন্দ্র দাস, মনোয়ারা বেগম ও মো. মানিককে নতুন ঘর উপহার দেন। পরশুরাম যাওয়ার পথে পথিমধ্যে ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুরে ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ইসতিয়াক অহামেদ শ্রাবণের কবর জিয়ারত করেন তিনি। এদিকে ফেনীতে ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলমীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল সোমবার বিকেলে ফেনী শহরের গ্র্যান্ড সুলতান কনভেনশন হলে জেলা জামায়াতের আয়োজনে এ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান হয়েছে।

এ সময় ডা. শফিকুর রহমান বলেন, শহীদরা জাতীয় সম্পদ, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। তাদের কাছে আমরাসহ পুরো জাতি চির ঋণী। সরকারকে বর্তমানে সবকিছু বাদ দিয়ে আহতদের চিকিৎসায় হাত দেওয়া উচিত। আমরা চাই না আমাদের আর কোনো ভাই পঙ্গু হোক। এছাড়া প্রত্যেকটি গণহত্যার বিচার কার্যকর করতে হবে। কোনো মহল জামায়াতের ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েন না, তাহলে বাংলাদেশ বিস্ফোরিত হবে। ৯১ ভাগ মুসলমানের দেশে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা হলে সবাই মর্যাদা পাবে এবং মানবিক বাংলাদেশ গঠন হবে। একটি সাম্য এবং মানবিক বাংলাদেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা বিশ্রাম নেব না। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ফেনীতে চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে জামায়াত আমীর বলেন, শহীদরা কি অনিয়ম-চাঁদাবাজির জন্য রক্ত দিয়েছে। বর্তমানে যা শুনছি তা যদি সত্যি হয়, তাহলে এটি শহীদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি ও বেইমানির সমান। আল্লাহ ছাড় দেন, ছেড়ে দেন না।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সীমিত সামর্থ্যানুযায়ী শুরু থেকে আন্দোলন আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। জামায়াত নেতা (সাবেক ভারপ্রাপ্ত জেনারেল সেক্রেটারি) আজহারের মুক্তি প্রসঙ্গে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা মজলুম সংগঠন, স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের আমলে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হয়েছিল। জামায়াত নেতা আজহারকে ধুঁকে ধুঁকে কারাগারে মরার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল হাসিনা সরকার। এ সময় ফেনীর ছাত্র আন্দোলনে ১২ জন নিহতের পরিবার ও প্রায় ৩৫০ আহতের হাতে জামায়াত আমীর নগদ অনুদান তুলে দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close