কনক দেব, শিবগঞ্জ (বগুড়া)
বগুড়ার আলু রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ উপজেলা থেকে আলু ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং জাপানে রপ্তানি হচ্ছে। সবকিছু মিলে আলুর দাম ভালো পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন স্থানীয় চাষিরা। দেশের আলু সহজে বিদেশে রপ্তানি করতে পেরে খুশি আড়তদার ও রপ্তানিকারকরা। গত পাঁচ বছর ধরে দেশের আলু বিদেশে রপ্তানি করছেন ৫ থেকে ৬টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, শিবগঞ্জে চলতি মৌসুমে প্রায় ১৮ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবার অতিরিক্ত জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উফশী জাতের আলুর মধ্যে মিউজিকা, ডায়মন্ড, গ্র্যানুলা, অ্যাসটিক, কার্ডিনাল, রোজেটা, ক্যারেজ। নতুন জাত ১২-১৩ আর লাল পাকড়ি জাতের আলুর মধ্যে রয়েছে তেলপাকড়ি, পাহাড়িপাকড়ি, বটপাকড়ি ও ফাটাপাকড়ি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাম্পার ফলনও হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার চাহিদা বেশি থাকায় রপ্তানিকারকরা মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকের কাছ থেকে বিভিন্ন জাতের আলু ক্রয় শুরু করেছেন। মাঠ থেকেই বিক্রি করতে পেরে খুশি স্থানীয় চাষিরা।
সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষেতে আলু উত্তোলনের কাজ সবেমাত্র শুরু। বাজারে আলুর চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় উত্তোলন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। উপজেলার বিভিন্নস্থানে আলু বেচাকেনা চলছে।
উপজেলার ভাগকোলা গ্রামের চাষি মোত্তালিব হোসেন, রহুল আমিন, খালিদ মিয়ারা বলেন, এবার প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘাতে আলু পেয়েছি প্রায় ৯০ মণ। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘায় লাভ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। প্রতি বছর যদি এমন দাম হয় তাহলে আগামীতে আলুর চাষ আরো বাড়বে।
আমার জমির সব আলু মালেশিয়ার ফার্মার্স এগ্রো লিমিটেডের লোকজনের কাছে ৫২০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। লাভও হয়েছে। আমার ক্ষেতের আলু বিদেশে যাচ্ছে বলে আমি গর্বিত।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মাসওয়া এগ্রো কোম্পানির বগুড়ার প্রতিনিধি ও শিবগঞ্জের মেসার্স সাগর ট্রেডার্সের সাগর হোসেন জানান, তালিকাভুক্ত চাষির কাছে থেকে তারা ভালোমানের আলু ক্রয় করে।
বাংলাদেশের আলুর মান ভালো। সহজেই বিদেশে বিক্রি করা যায়। গত বছর ৭৫ টন আলুর চাহিদা ছিল। এবার ১০০ টনেরও বেশি আলু পাঠাতে হবে শুধু মালেশিয়াতেই। অন্য দেশ তো আছেই।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিতোশ চন্দ্র রায় জানান, এ উপজেলার মাটি খুব উর্বর আবহাওয়া অনুকূলে এবং এলাকায় কোনো বন্যা হয় না। যার কারণে যেকোনো ফসল চাষ করলে খুব ভালো ফলন দেয়। প্রতি বছরই এ অঞ্চলের চাষিরা শীতের সবজিসহ আলু চাষে ঝুঁকে পড়েন। তবে এবার টানা বর্ষা না হওয়াই বীজতলা সুরক্ষিত রয়েছে। যার জন্য এবার এ উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ীর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইং সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মধ্যপ্রাচের বিভিন্ন দেশসহ ৩০টি দেশে ৭৮ হাজার টন আলু, বাঁধাকপিসহ অন্যান্য সবজি ১ লাখ ৬ হাজার ২৬২ টন রপ্তানি হয়েছে। এবার আলু মৌসুমে রাশিয়ায় আলু রপ্তানি হবে।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল হান্নান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, কৃষি বিপ্লব শস্যভান্ডার এলাকা শিবগঞ্জ। এ এলাকার মাটি খুবই উর্বর সব ফসল সকল আবহাওয়ায় মানিয়ে নেয়। উপজেলা থেকে বিদেশে বেশ কয়েক বছর থেকে আলু রপ্তানি হচ্ছে। এতে কৃষক উপকৃত হচ্ছে। এবার এ উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ দেখা না দিলে গতবারের মতো এবারেও আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা অনেক ছাড়িয়ে যাবে।
"