নজরুল ইসলাম জিসান, ইবি

  ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫

শিক্ষার্থীদের বরাদ্দের টাকায় ফের ছাউনি বানাচ্ছে ছাত্রদল

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে বরাদ্দ নিয়ে একটি ছাউনি (টেন্ট) তৈরি করছে শাখা ছাত্রদল। ‘কৌশলে’ প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমোদন ও আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের বসার জন্যই ছাউনিটি বানানো হচ্ছে। তবে সংগঠনটির শাখা আহ্বায়কের দাবি, তাদের দলীয় কোনো টেন্ট নেই। এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন সংলগ্ন এলাকায় সংগঠনটির একটি ছাউনি থাকলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, সাধারণের জন্য ছাউনি নির্মাণের বিষয়ে তারা জানে না। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ছাউনি আছে। এগুলোর অধিকাংশই অপরিষ্কার অবস্থায় থাকায় শিক্ষার্থীরা সেগুলোতে বসে না। নিয়মিত পরিষ্কার করলে সেটা শিক্ষার্থীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত। এছাড়া শিক্ষার্থীরা হলে পর্যাপ্ত ভর্তুকি পায় না। প্রয়োজনীয় পানির প্লান্টগুলো দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে। এসব দিকে প্রশাসনের কোনো নজর নেই।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী শরীফ উদ্দীন বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের বসার জন্য আমবাগানে টেন্ট বানাতে একটি আবেদন এসেছিল। আবেদনপত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ছাত্রদলের আহ্বায়কের সিগনেচার দেওয়া হয়েছে। পরে ক্যাম্পাসের আমবাগানে টেন্ট বানাতে বরাদ্দ হয়েছে।’ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৌশল অফিস নোট দিলে প্রশাসন তা অনুমোদন করে শিক্ষার্থীদের ফান্ড থেকে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের ঝালচত্বরের আমবাগানের বিপরীত পাশে বেশ কয়েকটি বড় গাছের মোটা শিকড় কেটে ছাউনি তৈরির কাজ চলছে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের জন্য যদি টেন্ট বানানো হয়, সেটা প্রথমত তাদের জানার কথা। কিন্তু তারা সেটা জানেই না। আর দলীয় ছাউনি কখনোই সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বানানো হয় না, সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরাই আড্ডা দেন। এমনকি এর আগে ছাত্রলীগের টেন্টে ডেকে র‌্যাগিংয়ের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

ছাত্রদলের সাবেক নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের গেটের বামপাশে ছাত্রদলের একটি টেন্ট রয়েছে। সেখানে বিএনপি আমলে দলটির নেতাকর্মীরা নিয়মিত আড্ডা দিতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় জায়গাটি অপরিচ্ছন্ন ও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ বলেন, ‘অনুষদ ভবনের সামনে যে টেন্টটি ছিল সেখানে আমরা বসতাম, আড্ডা দিতাম ও চা খেতাম। ছাত্রশিবির ভবনটির মাঝামাঝি জায়গায় আড্ডা দিত। তাই সঙ্গত কারণে ওটা আমাদের টেন্ট হিসাবে পরিচিত ছিল। মূলত শিক্ষার্থীদের বসার জন্য প্রশাসন এগুলো তৈরি করেছিল। যে যেখানে বসত সেটা তাদের টেন্ট নামে পরিচিত ছিল।’

জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ‘অনুষদ ভবনের সামনে ছাত্রদলের টেন্ট ছিল বলে আমার জানা নেই। আর ওটা তো টেন্টের আকৃতির মধ্যেই পড়ে না। তাই নতুন করে টেন্ট বানানো হচ্ছে। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যবর্ধন ও শিক্ষার্থীদের বসার জন্য আমি প্রশাসনের কাছে টেন্ট বানানোর জন্য আবেদন করেছিলাম। যেই সংগঠনই করুক, তার প্রথম পরিচয় তো ছাত্র। তাই টেন্টটি ছাত্রদল ও শিক্ষার্থীদের উভয়ের জন্য। প্রশাসন তাদের নিজস্ব টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ টেন্ট তৈরি করছে।’

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ভিসি অফিস থেকে এটির অনুমোদন হয়ে টেন্ডার হওয়া পর্যন্ত সব বিষয় কমপ্লিট ছিল। পরে আমি শুধু বরাদ্দকৃত অর্থটা ছাড় দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের জন্য যে ফান্ড রয়েছে সেখান থেকে অর্থটা দেওয়া হয়েছে। তবে কারা আবেদন করেছিল, কী আবেদন করেছিল তা আমি বলতে পারব না। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য স্যাররা বিষয়টা ভালো জানেন।’

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আর্থিক বিষয়গুলোর সঙ্গে আমি সংশ্লিষ্ট নই।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close