নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫

কুয়াশা কমে বাড়বে শীত

মাঘের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তাপমাত্রা কমেছে। দুই জেলায় বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। দুটি জেলাই উত্তরবঙ্গের। আজ শনিবার থেকে তাপমাত্রা আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীতে, ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী বিভাগের বেশিরভাগ অঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির আশপাশে ছিল। গত বৃহস্পতিবার বাঘাবাড়ীতে সর্বনিম্ন ১০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। তবে শীতের অঞ্চল হিসেবে খ্যাত রংপুর বিভাগের শুধুমাত্র পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাকি জেলায় তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে।

এ দিকে ঢাকা বিভাগে শুধুমাত্র টাঙ্গাইলে তাপমাত্রা ১০ এর ঘরে। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল ছিল ১৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বৃহস্পতিবার তা ছিল ১৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কক্সবাজারের টেকনাফে, ৩০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর মতে, যদি কোনো এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.১ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তবে সেই এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে বলে ধরা হয়। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬.১ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটিকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৪.১ থেকে ৬ ডিগ্রি হলে তা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আর অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ তখনই হয়, যখন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে হয়।

আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, আগামীকাল (আজ) থেকে দেশের তাপমাত্রা কমে শীতের প্রকোপ বাড়তে পারে। এই অবস্থাটি আগামী চার দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সেইসঙ্গে সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ ও পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে যে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

কুয়াশা ও শীতে লালমনিরহাটে বেড়েছে জনদুর্ভোগ : লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, কয়েকদিন থেকে সূর্যের দেখা না থাকায় হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে শীতের অনুভূতি বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডায় বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। সব থেকে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে শিশু, বয়বৃদ্ধ, নদীপাড় ও চরাঞ্চলের মানুষজন। কুয়াশার চাদরে সারা দিন ঢাকা থাকছে চারদিক। ফলে রাতের পাশাপাশি দিনভর অনুভূত হয় শীত। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হওয়ার তথ্যটি জানিয়েছেন রাজারহাট আবহাওয়া অফিস।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় হেডলাইট জ্বালিয়ে সড়কে ধীর গতিতে চলাচল করছে যানবাহন। কনেকনে ঠাণ্ডায় শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে আছেন হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষজন। দেখা গেছে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন তেমন বাইরে বের হচ্ছেন না। শীতের দাপটে গ্রামাঞ্চলের অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাস এবং বৃষ্টির মতো কুয়াশায় বেশি কষ্টে পড়েছে মানুষসহ গৃহপালিত পশুপাখিরাও।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা রাজপুর ইউনিয়নের শিক্ষক রেজাউল করিম জানান কয়েকদিন থেকে কুয়াশার সঙ্গে ঠাণ্ডা অনেকটাই বেশি পড়েছে। বর্তমানে দিনেরবেলা তাপমাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে তাপমাত্রা ব্যাপক হারে কমতে থাকে। ফলে দিন ও রাতে সমান শীত অনুভূত হয়।

মোগলহাট ইউনিয়নের ধরলাচরের দিনমজুর করিম হাওলাদার বলেন, ঠাণ্ডায় সকাল সকাল কাজে যোগ দিতে কষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে দিনে ও রাতে একই পরিমাণ শীতের তীব্রতা। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলেও প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে কাজে যেতে পারছি না।

লালমনিরহাট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সামিরা হোসেন চৌধুরী বলেন, শীতের কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রোগীর সংখ্যা একটু বেশিই আসছে হাসপাতালে। বিশেষ করে বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। যেসব রোগীর অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল আমরা শুধু তাদেরকেই ভর্তি নিচ্ছি। এখানে যারা ভর্তি রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই সর্দি-জ্বর, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত। এ ছাড়াও অনেকের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও খিঁচুনি রয়েছে। সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এ ঠাণ্ডায় যথাসম্ভব গরম পানি পান করতে হবে। আর অসুস্থ হলে তাজা ফলমুলের রস, শাকসবজি ও পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি করে খেতে হবে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ঠাণ্ডার কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিন্নমূল মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ চলমান রয়েছে।

সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাপছে সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জে শীতের তীব্রতা ও উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে ঘন কুয়াশা ও প্রচণ্ড শীতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গত বুধবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত শীত আর ঘন কুয়াশা একত্রিত হয়ে দুর্ভোগ বয়ে এনেছে এখানকার মানুষের। সারা দিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। তীব্র শীতে কর্মরত কৃষকদের স্বাভাবিক কাজকর্ম থমকে গেছে। দিনমজুর, ক্ষেত-খামাররে ইরি-বোরো ধান লাগানো ও আলু উত্তোলনে কৃষকরা পড়েছে বিপাকে। শীতের কারণে কৃষিশ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন তাদের পারিশ্রমিক দিতে হয় ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা বলে জানান, মাহমুদপুরের কৃষক আবদুল আলিম।

ঘন কুয়াশা কাজিপুরের নাটুয়াপাড়া, চরগিরিশ, মেছড়াচর, চৌহালি ও শাহজাদপুরের বিভিন্ন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা শীতে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এদিকে শীতের তীব্রতায় শহরের ফুটপাতের কাঁচামালের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকলেও প্রতিটি জিনিসের দামই বৃদ্ধি পেয়েছে। মাছের বাজারগুলোতে মাছের আমদানি খুবই কম।

মাছ ব্যবসায়ী সামাদ জানান, তীব্র শীতে মাছ শিকার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রাতে ঘন কুয়াশার কারণে মাছ শিকার বন্ধ প্রায়। তাই মাছের দাম কিছুটা বেশি।

সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতিকুন নাহার ও শহরের মডিনোভা হাসপাতের পরিচালক ডা. আকরামুজ্জামান বলেন, শীতজনিত কারণে সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন ঠাণ্ডা রোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জাহেদুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সিরাজগঞ্জে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি সে.। এ ছাড়াও বাঘাবাড়ীতে তাপমাত্রা ৯.৬ ডিগ্রি সে. হলেও উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে ঘন কুয়াশা ও প্রচণ্ড শীতের সৃষ্টি হয়েছে।

তেঁতুলিয়ায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ : তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়া। সেইসঙ্গে অঞ্চলটিতে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের।

প্রয়োজনের বাইরে ঘর থেকে অনেকে বের না হলেও জীবিকার তাগিদে ছোট যানবাহনগুলোকে শীতে ঝুঁকি নিয়ে কাজে যেতে দেখা গেছে। কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন ভ্যানচালক, পাথরশ্রমিক, চা-শ্রমিক, দিনমজুর থেকে নিম্নআয়ের মানুষরা। তারা বলছেন, শীতের কারণে পরিবারে কারো না কারো জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য রোগ লেগেই আছে। এদিকে আয়রোজগার কম, আন্যদিকে রোগের চিকিৎসা, সব মিলিয়ে আমরা বিপাকে আছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close