নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারিতে বাড়বে বিদ্যুতের চাহিদা, শঙ্কা ভোগান্তির

আগামী গ্রীষ্মে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার সম্ভাব্য প্রক্ষেপণ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। আসন্ন ফেব্রুয়ারি থেকেই বাড়তে থাকবে বিদ্যুতের চাহিদা। প্রতিবছরই গ্রীষ্মের সঙ্গে সেচ এবং রমজানের বাড়তি চাহিদা যোগ হয়। এ বছরও তাই হবে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে সারা দেশে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গেল বছর গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে দেশের বিতরণব্যবস্থার বাস্তব চিত্র বলছে, গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহে বেকায়দা অবস্থা ছিল বিগত সরকারের সময়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, গত বছরের ১৬ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা পূরণ করতেই হিমশিম দশা ছিল। এবার সেখানে ১৮ হাজার মেগাওয়াটে কী করবে বিদ্যুৎ বিভাগ, তাই এখন দেখার বিষয়। রয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা। এ ক্ষেত্রে সরকারের আগেভাগেই দরকারি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
গত বছর কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সংকটের কারণে গ্রীষ্মেই বন্ধ রাখতে হয়েছে কোনো কোনো কেন্দ্র। কয়লা ও ডলার সংকটে বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। সরকার ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট, ডলার পরিস্থিতিতে নাজুক অবস্থার কথা তুলে ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ার কথাও জানিয়েছিল। তবে এবারও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম একই অবস্থায় রয়েছে। ফলে গ্রীষ্মের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে বলে জানা গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে একটু একটু করে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে শুরু করবে। ফেব্রুয়ারিতে সেচের জন্য অতিরিক্ত এক হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। এর বাইরে মার্চের শুরু থেকেই পবিত্র রমজান শুরু হবে। এ সময়েও বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হবে।
অর্থাৎ মার্চ থেকে বিদ্যুতের চাহিদা একধাপে অনেকটা বেড়ে যাবে। মার্চ থেকে টানা আগস্ট পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা একই রকম থাকে। এর মধ্যে এপ্রিল, মে ও জুনে সর্বোচ্চ চাহিদা তৈরি হয়, যা সামাল দেওয়া বরাবরই কঠিন হয়ে পড়ে।
গত বছর মার্চ মাসের শুরুর দিন অর্থাৎ ১ মার্চ ওই মাসের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৩ হাজার ৩৩৭ মেগাওয়াট। একই বছর এপ্রিলে ওই মাসের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ২৩ এপ্রিল ১৬ হাজার ২২৫ মেগাওয়াট। মে মাসে ওই মাসের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১ মে ১৬ হাজার ৪৩৫ মেগাওয়াট, জুন মাসে ওই মাসের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১২ জুন ১৫ হাজার ৭৭৮ মেগাওয়াট, জুলাই মাসে ওই মাসের সর্বোচ্চ ২৯ জুলাই উৎপাদন ছিল ১৫ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট এবং আগস্টে ওই মাসের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১ আগস্ট ১৪ হাজার ৬৮০ মেগাওয়াট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতবারের মতো এবারও বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি প্রায় একই রকম রয়েছে। কেবল পটুয়াখালীতে একটি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র পরীক্ষামূলক উৎপাদনে এসেছে। গ্রীষ্মের মধ্যে কেন্দ্রটি তার বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করবে। কিন্তু মূল সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি। সাবেক সরকার দেশীয় জ্বালানি অনুসন্ধানে মনোযোগ না দিয়ে একতরফা আমদানিনির্ভর জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করায় প্রতি মাসে গ্রীষ্মে অন্তত এক বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি প্রয়োজন হয়। যে ব্যয় বহন করা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমরা বাড়তি চাহিদার কথা চিন্তা করে পরিকল্পনা করেছি। গ্রীষ্মের বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে হলে আমাদের যে পরিমাণ জ্বালানি অর্থাৎ গ্যাস, তেলের প্রয়োজন হবে সেসব আমরা ইতোমধ্যে জানিয়েছি। এখন জ্বালানির চাহিদা পূরণ হলে আমরা আশা করি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারব।
এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, আগের সরকারের সময় থেকেই জনগণের মধ্যে এ নিয়ে চরম অসন্তোষ আছে। এবারও এ অসন্তোষ থেকে বের হওয়ার কোনো কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সরকার পরিবর্তনের ফলে আমরা আশা করেছিলাম, এ খাতে যে অন্যায়ভাবে ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে সেটি বের করা হবে। সরকার সেদিকে না গিয়ে তারা দাম বাড়ানোর দিকে এগোচ্ছে। তিনি বলেন, এখনকার অর্থনীতির একটি বড় অংশ নির্ভর করছে জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি করা এবং তার ওপর জনগণের স্বত্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করার ওপরে। যাতে মানুষ তার প্রয়োজনীয় পণ্য, জ্বালানি এবং জ্বালানিজাত পণ্য কিনতে পারে, সে ব্যবস্থা তো আমরা তৈরি করতে পারছি না।
"