চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

মসজিদ-মন্দিরেও লুটপাট চালিয়েছে আ.লীগ

- ডা. শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের সবচেয়ে বড় মজলুম দল। সাড়ে ১৫ বছর জামায়াত নেতাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছে; হাজার নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। ক্রসফায়ারের নামেও হত্যা করা হয়েছে। হাট-ঘাট, মসজিদ-মাদরাসা; এমনকি মন্দিরেও লুটপাট চালিয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা। কিন্তু ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা চট্টিবাটি নিয়ে পালিয়ে গেছে। দুপুরে রান্না করা ভাত খেতে পারেনি তারা। দুর্নীতিবাজ সবাই পালিয়েছে। তাই বৈষম্যহীন, মানবিক, দুর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম না পর্যন্ত আমরা থামব না। অর্থাৎ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থামবে না।

গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের টাউন মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রতি ইঙ্গিত করে আমীরে জামায়াত বলেন, ‘ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তারা দেশের জ্ঞানী, শিক্ষিত, মার্জিত ও অভিজ্ঞ মানুষকে হত্যা করেছে। হাজারো মানুষকে নির্যাতন করেছে। তারা শত শত মানুষকে গুম করেছে, খুন করেছে। মানুষের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। তারা দেশের সম্পদও লুট করেছে। শুধুই তারা কথিত উন্নয়নের বুলি শুনিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘পরপর তিন তিনটি নির্বাচনে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। জুলাই-আগস্টে আমাদের সন্তানরা বিপ্লব ঘটিয়ে ২৪-এ স্বাধীনতা এনেছেন। ফলে স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশের মানুষের সামনে দাঁড়ানোর মতো সৎ সাহস শেখ হাসিনার ছিল না। যে কারণে তিনিসহ তার দোসররা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যারা আমাদের সন্তানদের ওপর গুলি চালিয়েছে, গণহত্যা চালিয়েছিল জনগণ তাদের এক দফা দিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে।

ছাত্র-জনতার অবদানকে স্মরণ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে এ জাতি দেশবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবে, ইনশাআল্লাহ। তরুণ-যুবসমাজ চাঁদাবাজমুক্ত, দখলবাজমুক্ত ও পেশিশক্তিমুক্ত নতুন দেশ চায়। আমরাও সাম্যের বাংলাদেশ চাই। এ প্রজন্ম বুকের রক্ত দিয়ে নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। প্রয়োজনে আমরাও রক্ত দিয়ে হলেও এ স্বাধীনতা ধরে রাখব, ইনশাআল্লাহ।

এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা কারো টাকার কাছে নিজেদের ভোট বিক্রি করব না। ষড়যন্ত্র চলছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। আগামী নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ। কালো টাকা ও পেশিশক্তির কাছে আমরা মাথানত করব না। যারা কালো টাকা দিয়ে ভোটের মাঠে আসবে, তাদের না বলে দিতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে ডা.শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা ২৬ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করেছে। এসব টাকা জাল ফেলে তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করে দেশে ফেরত আনতে হবে। আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের খুঁজে খুঁজে এনে ওই কাশিমপুর জেলে পাঠাতে হবে। তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আমীর অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন, যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের সাংগঠনিক টিমের সদস্য খন্দকার আলী মোহসিন, যশোর জেলা শাখার আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল, ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের আমীর আলী আজম, কুষ্টিয়া জেলা আমীর মাওলানা অধ্যাপক আবুল হাশেম, মেহেরপুর জেলা আমীর মাওলানা তাজ উদ্দীন খান, চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর আনোয়ারুল হক মালিক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক আসলাম অর্ক, জেলা জামায়াতের জয়েন্ট সেক্রেটারি এডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াত আমীর অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদা কীভাবে পূরণ করা যায় সেটা জাতির সামনে কিভাবে পেশ করা যায় তারই এক মাইলফলক হয়ে থাকবে জেলা জামায়াতের সম্মেলন। মানবতার কল্যাণে জামায়াত কাজ করবে এবং করে আসছে। জামায়াত ইসলামী মানুষের ভোটাধিকার ও স্বাধীনতা, ভাতের অধিকার, সার্বভৌমত্ব অধিকার ফেরানোর জন্য আমরা কাজ করছে। কর্মী সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান। উল্লেখ্য, বিগত ২০ বছরে চুয়াডাঙ্গায় এত কর্মী সম্মেলন হয়নি। চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্যরা, জেলার ৫টি থানার অধিনে সাংগঠনিক ৮ জন জামায়াতের থানা আমীর, স্থানীয় জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মী এ কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close