আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর

৮৫ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা দুই এনজিও

দিশাহারা ২৫০ গ্রাহক

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার ছয় পৃথকস্থানে যৌথভাবে অফিস ভাড়া নিয়ে আর্থিক কার্যক্রম (ঋণদান ও আমানত গ্রহণ) পরিচালনা করছিলেন পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থা ও সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লি. নামের দুইটি প্রতিষ্ঠান। গত এক সপ্তাহ থেকে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের ওই ছয় কার্যালয় তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এতে আমানতের প্রায় ৮৫ কোটি টাকা নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রায় আড়াইশ গ্রাহক।

পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থার সাইনবোর্ড দিয়ে আওয়ালগাড়ী শাখা, গোপীনাথপুর শাখা, রায়কালী শাখা, মোহনপুর শাখা, চন্দদিঘী শাখা ও রামশালা শাখা নামে ছয়টি অফিস পরিচালনা করছিলেন তারা। সেখানেই পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থা ও সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ঋণদান ও আমানত গ্রহণ করা হত। তবে পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান কার্যালয় বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার সন্তাহারে অবস্থিত হলেও সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির প্রধান কার্যালয় আক্কেলপুর উপজেলার চন্দনদিঘীতে অবস্থিত। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, গত সাত থেকে আট বছর ধরে ওই দুইটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রামের সাধারণ মানুষকে ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন অংকের দীর্ঘমেয়াদি এককালীন আমানত ও স্থায়ী আমানত সংগ্রহ করেন।

গত ৫ জানুয়ারি পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থার চারটি শাখা কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মালিকের সঙ্গে বগুড়ার সান্তাহারে প্রধান কার্যালয়ে জরুরি সভা রয়েছে বলে জানিয়ে অফিসের সবাই চলে যায়। এরপর থেকেই চারটি শাখা কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই দিনের পর থেকে কেউই আর অফিসে আসেননি। গত বুধবার সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও একই কথা বলে চলে যান। সোমবার পর্যন্তু ওই দুটি এনজিও শাখা কার্যালয় তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা টাকা ফেরতের আশায় শাখা কার্যালয়ে ধর্না দিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এতে জামানতের প্রায় ৮৫ কোটি টাকা নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রায় আড়াইশ গ্রাহক।

শিয়ালা গ্রামের মোজাহার আলী জানান, আমি নিজে ও আমার দুই ছেলে সুমন ও উজ্জ্বল মিলে আমাদের ৬৮ লাখ টাকা চন্দনদিঘী সমতার শাখায় রেখেছি। আমরা দুই মাস ধরে মুনাফার টাকা পাইনি। আবার অফিস বন্ধ করে কর্মকর্তারা সবাই পালিয়েছেন।

উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. সরওয়ার হোসেন জানান, গোপীনাথপুর শাখার সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি নামের প্রতিষ্ঠানে ১৫ লাখ টাকা আমানত রেখেছিলেন। গত এক সপ্তাহ ধরে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অফিসে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হওয়াই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন পার করছি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থার উপপরিচালক নুরুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও বন্ধ পাওয়া যায়। একইসঙ্গে সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের কর্মকর্তারও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির এসব কার্যক্রমকে অবৈধ হিসেবে অবহিত করেন উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবু হাশেম মো. মোকারম হোসেন। তিনি বলেন, পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থা আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। তবে সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড আমরা নিয়ন্ত্রণ করি। তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে যে আমানত নিয়েছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি। এটা তারা করতে পারে না। তারা গ্রাহকদের লোভ দেখিয়ে প্রতারণা করেছে। বর্তমানে তাদের সব কার্যালয় তালাবদ্ধ রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমরাও যোগাযোগ করতে পারছি না। সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের বিরুদ্ধে সমবায় আইনবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি প্রতিবেদন পাঠাব। 

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় থানায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থা ও সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের দুটি এনজিওর শাখা কার্যালয়গুলো তালাবদ্ধ রয়েছে। অনেকে বেশি মুনাফার লোভে পড়ে এ দুটি এনজিওতে টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। তবে বিনিযোগকারীরা কেউ এখনো অভিযোগ করেননি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close