নিজস্ব প্রতিবেদক ও রাজশাহী প্রতিনিধি
পলাতক ওসি শাহ আলমকে ধরতে রেড অ্যালার্ট
সারদায় স্থগিত সমাপনী কুচকাওয়াজ কাল
রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক ওসি মো. শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সারা দেশের সব থানা ও বন্দরগুলোয় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান বলেন, পালিয়ে যাওয়া এ আসামিকে ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে রাজশাহীর সারদা পুলিশ ট্রেনিং একাডেমিতে স্থগিত কুচকাওয়াজ আগামীকাল রবিবার অনুষ্ঠিত হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের একটি মামলায় পরিদর্শক শাহ আলমকে কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বুধবার রাত ১২টার পর তাকে কুষ্টিয়া থেকে উত্তরা পূর্ব থানায় আনা হয়। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় তিনি থানা থেকে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় থানার একজন সহকারী উপপরিদর্শককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, আদালতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলাকালে মো. শাহ আলম কৌশলে পালিয়ে গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানার এএসআই মো. সাজ্জাদ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি থানা হেফাজত থেকে পালানোর ঘটনায় শাহ আলমের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের তৎপরতা ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে উত্তরা পূর্ব থানার ওসি ছিলেন মো. শাহ আলম (৪২)। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কুষ্টিয়ায় ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে পরিদর্শক হিসেবে তাকে বদলি করা হয়েছিল। এরপর থেকে তিনি সেখানেই কর্মরত ছিলেন। পুলিশ সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর উত্তরা পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। সেই মামলায় শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. লিটন শরীফ থানার সাবেক ওসি শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মো. শাহ আলম পালিয়েছেন উত্তরা পূর্ব থানার পরিদর্শকের (অপারেশন্স) কক্ষ থেকে। এ সময় থানার বর্তমান ওসি, পরিদর্শক (তদন্ত), মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও অন্য পুলিশ সদস্যরা থানায় উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্য থেকে পুলিশ পরিদর্শক শাহ আলম কীভাবে পালিয়ে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সারদা পুলিশ একাডেমিতে কনস্টেবলদের স্থগিত সমাপনী কুচকাওয়াজ কাল : রাজশাহীর চারঘাটে সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত কনস্টেবলদের সমাপনী কুচকাওয়াজ আগামীকাল রবিবার অনুষ্ঠিত হবে। এদিন ১৬৭তম ট্রেনিং রিক্রুট কনস্টেবলদের ৩৩৪ জনকে পাসিং আউট দেওয়া হবে। এর আগে ১৯ ডিসেম্বর তাদের সমাপনী কুচকাওয়াজ হওয়ার কথা ছিল। অনিবার্য কারণে তাদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়েছিল। সারদা পুলিশ একাডেমি সূত্রে জানা যায়, গত বছর ২৪ জুন থেকে ৬ মাস মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণে ৩৪২ কনস্টেবল সারদায় প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। গত ১৯ ডিসেম্বর তাদের প্রক্ষিক্ষণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে গত ৩ জানুয়ারি অজ্ঞাত কারণে আটজনকে একাডেমি থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে ১২ জানুয়ারি সমাপনী কুচকাওয়াজের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ওইদিন সকাল ৯টায় সমাপনী কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠান শুরু হবে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে সমাপনী অনুষ্ঠান শেষ হবে।
একাডেমির পুলিশ সুপার বেসিক (ট্রেনিং-২) মো. তানভীর সালেহীন ইমন বলেন, ৩৩৪ জন কনস্টেবলের রবিবার সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। সমাপনী কুচকাওয়াজের আগে আটজনকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। এর আগে ৪০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ৬২ জন সহকারী পুলিশ সুপারের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর ওই কর্মকর্তাদের এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ২০ অক্টোবর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এজন্য দেড় হাজারের বেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাজশাহীতেও এসেছিলেন। তবে আগের রাতে হঠাৎ করেই কুচকাওয়াজ স্থগিত করে দেওয়া হয়। এরপর আবার ২৪ নভেম্বর এ অনুষ্ঠানের জন্য দিন ঠিক করা হয়েছিল। পরে সেটিও স্থগিত করা হয়েছে। ৪০তম ক্যাডেট এসআই ব্যাচে প্রশিক্ষণের জন্য মোট ৮২৩ জন এসআই ছিলেন। তারা গত বছরের ৪ নভেম্বর থেকে সারদায় বনিয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু করেন। মাঠে ও ক্লাসে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তুলে চার ধাপে ৩২১ জন এসআইকে শোকজ করে একাডেমি। এরইমধ্যে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত ২১ অক্টোবর ২৫২ জন, ৪ নভেম্বর ৫৮, ১৮ নভেম্বর ৩ এবং সর্বশেষ ১ জানুয়ারি ৮ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
"