নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪

অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে সরকার

ভিনদেশি যেসব নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, তাদের অবিলম্বে অবস্থানের বা কর্মরত থাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের জন্য অনুরোধ করেছে সরকার।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও প্রধান উপদেষ্টর বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরীর সই করা এক ‘সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’তে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে, অনেক ভিনদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন এবং অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। যেসব বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বা কর্মরত আছেন, তাদের অবিলম্বে বাংলাদেশে অবস্থানের বা কর্মরত থাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের জন্য অনুরোধ করা হলো।

‘এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্যও অনুরোধ করা হলো’ উল্লেখ করে ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, অন্যথায় অবৈধভাবে অবস্থানকারী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে, অনেক ভিনদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন এবং অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন।’ যে সব বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বা কর্মরত আছেন, তাদের অবিলম্বে বাংলাদেশে অবস্থানের বা কর্মরত থাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তর/প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্যও বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় অবৈধভাবে অবস্থানকারী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী।

সারা দেশে কতজন বিদেশি অবৈধভাবে বসবাস করছেন সেটার কোনো সঠিক হিসাব নেই। ২০২২ সালে পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিটের হিসাব অনুযায়ী জানা গেছে, ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশে অবস্থান করছেন ১২ হাজার ৯৮০ জন বিভিন্ন দেশের নাগরিক। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৫৪২ জনই লাপাত্তা ছিল ওই সময়। তবে অবৈধভাবে অবস্থান করা ওইসব বিদেশি নাগরিকদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছে সরকার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, অনেক ভিনদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন এবং অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। যেসব বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বা কর্মরত আছেন, তাদের অবিলম্বে বাংলাদেশে অবস্থানের বা কর্মরত থাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই বিজ্ঞপ্তির ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ও সরকারের অবস্থানও পরিষ্কার করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে আমরা পত্রিকায় একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। কোনো বিদেশিকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না।’

কোন দেশের কত নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘কতজন আছে, সেই পরিসংখ্যানটা এখন আমাদের কাছে নেই। এটা যদি থাকত তবে আমি বলে দিতাম এতজন আছে। অনেক দেশেরই আছে, আমি কোনো দেশের নাম উল্লেখ করতে চাচ্ছি না। তবে কোনো দেশেরই অবৈধ নাগরিকদের আমরা বাংলাদেশে থাকতে দেব না।’

যদিও এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা জড়িত নয় এবং হুট করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। যদিও পুলিশের ওই বিশেষ ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ বিদেশিদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, আরব আমিরাত ঘানা, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন, মিশর, ব্রুনাই ও তুরস্কের নাগরিক রয়েছেন। বাংলাদেশে কতজন বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বসবাস করছেন, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কাজ করছেন সেটা জানতে চেয়ে গত মাসেই পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসাইন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দিয়েছিল। তিন মাস সময় বেঁধে দিয়ে জানতে চেয়েছিল, দেশে বৈধ-অবৈধ বিদেশি কর্মীর সংখ্যা কত? সেইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যেসব পদে বিদেশি কর্মীরা কাজ করছেন, সেসব পদের বিপরীতে দেশে যোগ্যপ্রার্থীর সংখ্যা কত সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছিল।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও এটার সঠিক ও কার্যকরী বাস্তবায়ন চান ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান। এগুলো যেন বিগত সময়ের মতো ঘোষণাতেই আবদ্ধ না থাকে সেটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন একটা কাঠামো বাস্তবায়ন করতে হবে যাতে ভ্রমণে এসে কেউ কাজ করতে না পারেন কিংবা অবৈধভাবে থাকতে না পারেন। কেউ যেন মাদক বা কোনো অপরাধে জড়াতে না পারেন সেটাও দেখতে হবে। তবে যিনি বৈধ প্রক্রিয়া মেনে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে থাকতে চান বা কাজ করতে চান তার সেই প্রক্রিয়াটাও খুব সহজ করতে হবে। আমাদের দেশে উল্টোটা হয়। নিয়মকে জটিল করে অনিয়মের পথ সহজ করা হয়। এই যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে হয় কোনো বিদেশি নাগরিককে অবৈধভাবে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না, সেটাই তো হাস্যকর। অবৈধ বিদেশি থাকে কীভাবে? কোন কৌশলে এটি দেখভাল করা হবে। যাই হোক এমন একটা কৌশল ও কাঠামো বাস্তবায়ন হোক যাতে ভবিষ্যতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকেও এই একই কথা বলতে না হয় অতীতের মতো।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close