প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
গণঅভ্যুত্থানগাথা
চিকিৎসার অভাবে ভেঙে পড়েছেন সিফায়েত
![](/assets/news_photos/2024/12/11/image-489419.jpg)
জেলার নড়াগাতী থানার চাপাইল গ্রামের সিফায়েত চৌধুরী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি এখন ভালো নেই। ঠিকমতো চিকিৎসা না পেয়ে ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছেন। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। জানা গেছে, নড়াইলের নড়াগাতী থানার চাপাইল গ্রামের আজাদ চৌধুরী ও মিনি বেগমের ছেলে সিফায়েত চৌধুরী (২৬) গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে চলতি বছর ডিগ্রি পাস করেছেন। দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন শুরু হলে গত ১৫ জুলাই ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় বোনের বাসায় যান। সেখান থেকে নবীনগরে নিয়মিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে অংশ নিতেন। প্রতিদিনের মতো গত ৫ আগস্টও তিনি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এদিন পুলিশের গুলিতে আহত হন সিফায়েত চৌধুরী। রাতে ফেসবুকে ছবি দেখে পরিবারের লোকজন জানতে পারে সিফায়েত গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে আছেন। তার বাম কানসহ মাথায় ও কাঁধে গুলি লাগে। সেখানে অপারেশন করে গুলি বের করা হয়। পরে সিএমএইচএ এক সপ্তাহ চিকিৎসা দেওয়া হয়।
গত ৩০ আগস্ট বাড়িতে নিয়ে আসা হয় তাকে। কিন্তু তিনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন। অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। তার উন্নত চিকিৎসার দরকার। সিফায়েতের গরিব বাবার পক্ষে যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
আহত সিফায়েত চৌধুরী বলেন, খুব বেশি কথা বলতে পারি না। তেমন কিছু মনেও নেই। তবে আন্দোলনে যাওয়ার কথা কেবল মনে আছে।
তিনি আরো বলেন, গত ৫ আগস্ট নবীনগরে আন্দোলনে গিয়েছিলাম। আরো অনেক লোক ছিল। আন্দোলনে পুলিশ ছররা গুলি ছোড়ে। পরে আর কিছুই মনে নেই আমার। সিফায়েত চৌধুরীর বড় ভাই রুবেল চৌধুরী বলেন, আমরা গরিব মানুষ। অনেক কষ্টে আমাদের সংসার চলে। ইমামতি করে সংসার চালাই কোনোরকম।
তিনি আরো বলেন, গত ৩০ আগস্ট সিএমএইচ থেকে সে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি আসে। এরই মধ্যে সিফায়েতের ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। আর্থিক সমস্যার কারণে ওষুধ কিনতে পারছি না। এ বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। সিফায়েত চৌধুরীর পিতা আজাদ চৌধুরী (৬৫) ছেলের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। কোনোমতে সংসার চলে। ঢাকায় ছেলের অপারেশনের পর যে ওষুধ আনা হয়েছিল তা শেষ হয়ে গেছে। তার শারীরিক অবস্থা এখনো অনেক খারাপ। কিছুটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে সে। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার।
তিনি আরো বলেন, আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে সন্তানের উন্নত চিকিৎসা করানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
সরকারের কাছে ছেলের উন্নত চিকিৎসার জোর দাবি জানান তিনি। চাচা ইউনুস চৌধুরী বলেন, সিফায়েত নিজে টিউশনি করে লেখাপড়া করেছে। পরিবারের আশা ছিল ভালো একটা চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু বিধিবাম। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে গুরুতর আহত হয় সিফায়েত। গুলির খবর পাওয়ার পর ঢাকা যাওয়ার জন্য আমরা সবাই মিলে টাকা যোগাড় করে ওর অন্য ভাইদের সেখানে পাঠাই। নড়াইলে কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মল্লিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সিফায়েত চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তাদের পক্ষে সিফায়েতের উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। তার শারীরিক অবস্থা দেখলে মনে হয় মানসিকভাবে ভারসম্যহীন হয়ে পড়েছে। যার কারণে এখনই তার উন্নত চিকিৎসা না করালে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তিনি সরকার ও বিত্তবানদের কাছে সিফায়েতের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।
"