ইবি প্রতিনিধি
দুই দফা সময় বাড়িয়েও কাজ বাকি ৪০ শতাংশ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৫৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল ২০১৮ সালে। অনুমোদনকালে এর মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরইমধ্যে প্রকল্পগুলোর মেয়াদ দুই দফা বাড়িয়ে অনুমোদনের সময় প্রায় ৬ বছর পেরোলেও এখনো পূর্ণতা পায়নি প্রকল্পগুলো। অথচ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর অতিরিক্ত সময় শেষ হতে চললেও প্রকল্পের কাজ বাকি রয়েছে আরো ৪০ শতাংশ। এরইমধ্যে তৃতীয় দফায় আবারও মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে মেগা প্রকল্পের তৃতীয় মেগা এপিসোডে প্রকল্পটি পূর্ণতা পাবে বলে আশাবাদী কর্তাব্যক্তিরা। এর আগে মেয়াদ দফায় দফায় বাড়িয়ে প্রকল্পের কাজের শেষ দেখা না গেলেও দেখা গিয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে, কনস্ট্রাকশন কাজে অনুমোদনহীন রড ব্যবহার ও কোটি টাকা আত্মসাতেরও।
প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, মেগা প্রকল্পের আওতায় আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবনসহ ৯টি ১০ তলা ভবন এবং ১১টি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। নতুন ভবনের মধ্যে দুটি ছাত্র ও দুটি ছাত্রী হল, একটি একাডেমিক ভবন, শিক্ষক, কর্মকর্তাদের জন্য ১টি, কর্মচারীদের জন্য ১টি, দ্বিতীয় প্রশাসন ভবন এবং শেখ রাসেল হলের দ্বিতীয় ব্লক নির্মাণ করা হবে। ১১টি ভবনের সম্প্রসারণের মধ্যে রয়েছে দ্বিতীয় প্রশাসন ভবন, মীর মোশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবন, ব্যবসা প্রশাসন অনুষদ ভবন, রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবন, দ্বিতীয় ডরমিটরি, পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া ভবন, চিকিৎসাকেন্দ্র, প্রভোস্ট কোয়ার্টার, টিএসসিসি, বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচতলার নতুন ভবন ও পুরাতন ভবনের সম্প্রসারণ এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নির্মাণাধীন ভবন।
এ ছাড়াও পানি সমস্যা দুরকরণে মেগা প্রকল্পের আওতায় গভীর নলকূপ ও রেইন ওয়াটার হারভেস্ট প্ল্যান্ট এবং বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে দুটি ৫০০ কেভিএ বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, সোলার প্যানেল স্থাপনও এ প্রকল্পের অধীনে রয়েছে।
জানা যায়, মেগা প্রকল্পের অনুমোদন ২০১৮ সালের জুন মাসে হলেও এর কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের জুলাই মাসে। কাজ শুরুর কিছু দিন পর নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণরত ৯টি ১০ তলা ভবনের মধ্যে ৮টি ভবনের কাজই বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দফায় দফায় চিঠি দেওয়ার কয়েক মাস পর কাজে ফেরে ঠিকাদাররা। ২০২২ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সেসময় সার্বিক কাজের অগ্রগতি ছিল মাত্র ৩২ শতাংশ। সেসময় ২০২২ সালে এর মেয়াদ শেষ হওয়ায় ১ বছর বাড়িয়ে ২০২৩ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। সেই সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ করতে না পারায় ২য় দফায় আরো ১ বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নিলেও এখন পর্যন্ত এর অগ্রগতি হয়েছে ৬০ শতাংশ। তবে ৯টি ১০তলা ভবনের কাজ শেষ না হলেও ভবন সম্প্রসারণের কাজগুলো এরইমধ্যে শেষ হয়েছে।
তবে মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ার কারণ হিসেবে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সময় লাগা, করোনার কারণ, প্রশাসনের রদবদল এবং দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল মালেক মিয়া। তিনি জানান, প্রজেক্টের কাজ ২০১৮ সালে পেলেও করোনার কারণে সেসময় শুরু করা সম্ভব হয়নি। এর পর তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারীর মেয়াদ শেষ হওয়া, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াসহ অনেকগুলো কারণে কাজ শুরু করা দেরি হয়েছে। তারপর টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কাগজপত্রের যাচাই-বাছাই করে ঠিকাদার নিয়োগ করার কারণেই কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। কাজ শুরুর পর দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় আবারও অনেকদিন কাজ বন্ধ ছিল। তবে গত ১ বছরে দ্রব্যমূল্যের দাম কম থাকায় কাজের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। সামনের বছরের মধ্যেই কাজগুলো শেষ করতে পারব আশা করি।
মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা আছে, এখন সেটা কার্যকর কখন হবে তারাই ভালো জানে। তবে মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্পের কাজ বন্ধ হবে না বলে আশাবাদী তিনি।
এদিকে মেগা প্রকল্পের উন্নয়নের কোনো নজির না থাকলেও অভিযোগ রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির। অভিযোগ রয়েছে ভবন নির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদিত পাঁচটি কোম্পানির বাইরের কোম্পানির রড ব্যবহারের। বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে তা তৎকালীন উপাচার্যের নির্দেশে পুনরায় ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
এ ছাড়াও গত ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়, রেজিস্ট্রারের কার্যালয়, বিভিন্ন দপ্তরসহ বিভিন্ন অফিসে মেগা প্রকল্পের আওতাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবনের পঞ্চম বিলে ছয় কোটি টাকার অধিক ভুয়া বিল তোলা হয়েছে বলে এক উড়ো চিঠি আসে। চিঠিতে সহযোগী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীসহ কয়েকজন প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক, শাখা ছাত্রলীগের ১নং সহসভাপতিসহ ৫ জন সহসভাপতি ও ১ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ সাবেক ও বর্তমান ৭ ছাত্রলীগ নেতার নাম উল্লেখ করে। সেসময় ঘটনাটির তদন্ত বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে দুদক পর্যন্ত গড়িয়েছিল।
এবিষয়ে কথা হয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক ড. নওয়াব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট ছিল এ বছরেই মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করা এবং সে অনযায়ীই কাজ চলছিল। কিন্তু নানা কারণে তা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি। এরইমধ্যে আমরা ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে দুই বছর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছি।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে একটু বেশি সময় লাগা স্বাভাবিক। তাছাড়া কাজ শুরু হতেও দেরি হয়েছে করোনাসহ নানা কারণে। এরইমধ্যে মেয়াদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি এ সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব।
মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, যারা দুর্নীতি করেছে তারা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্যকে কুঠারাঘাত করেছে। তাদের বিষয়ে অতিদ্রুত তদন্ত করা হবে। যদি তারা শাস্তি না পায় ভবিষ্যতে তারা আরো প্রশ্রয় পাবে।
"