প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
গণঅভ্যুত্থানগাথা
গুলিবিদ্ধ পা অকেজো হওয়ার পথে, ভেঙে গেছে স্বপ্ন
![](/assets/news_photos/2024/12/07/image-488744.jpg)
রিয়াদ ঘিরেই ছিল পরিবারের সব স্বপ্ন। গত ৪ আগস্ট একটি বুলেট শুধু তার নয়, পুরো পরিবারেরই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবার। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় মাহবুবুল হক রিয়াদ। ছোট ভাই তানভীর হোসেন রিফাত ফেনী পলিটেকনিকের ইলেক্ট্রিকালে ৪র্থ সেমিস্টারে অধ্যয়নরত। গত ৪ আগস্ট ফেনী শহরের মহিপালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন রিয়াদ (২৮)। যেই বয়সে পরিবারের হাল ধরার কথা সেইসময়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যোগ দিয়ে এখন এক পা অকেজো হওয়ার পথে তার।
শহরের মহিপাল চৌধুরীবাড়ী সড়কের সুরুচী বেকারি সংলগ্ন আবদুল করিম ফরায়েজীবাড়ীর বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর ছেলে রিয়াদ। মা মাবিয়া খাতুন। রিয়াদের পিতার একটি চায়ের দোকান আছে। তা দিয়ে তিনি সংসার চালান। বাবার কাজে সহযোগিতা করতেন রিয়াদ। দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা নিয়ে এখন তিনি বাড়িতে রয়েছেন। সম্প্রতি বাড়িতে কথা হয় মাহবুবুল হক রিয়াদের সঙ্গে। তিনি জানান, গত ৪ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকজন সহপাঠী ও বন্ধুসহ মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।
জোহরের নামাজের আজান দেওয়ার পর সড়ক বিভাগের মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে বের হওয়ার সময় গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে পাশের সার্কিট হাউস রোডের পাসপোর্ট অফিসের দিকে চলে যান তিনি। কিন্তু রেহাই মিলেনি। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলি তার তলপেটে বিদ্ধ হয়। ছিঁড়ে যায় নাড়িভুঁড়ি। পরে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। রিয়াদ আরো জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেলে ২৯ দিন চিকিৎসা নেওয়ার সময় অপারেশন হয়েছিল। এরপর সিএমএইচে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তলপেটের ডানপাশে গুলি লেগেছে। এতে মেরুদণ্ডে আঘাত লাগে। যার ফলে ডান পা অবশ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। হাঁটু থেকে রান পর্যন্ত রগ টানটান হয়ে থাকে। এখনো পা ভাঁজ করে বসতে পারেন না। ডিসেম্বরের শেষে দিকে পুনরায় সিএমএইচে যেতে বলেছেন ডাক্তার। চিকিৎসার জন্য জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও অন্য সংস্থা ও ব্যক্তির পক্ষ থেকেও সহায়তা পেয়েছেন।
রিয়াদ আরো জানান, ফেনী সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে ২০২১-২২ সেশনে ব্যবস্থাপনা বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। বিভিন্ন স্থানে চাকরি খুঁজে না পেয়ে বাড়ির পাশে বাবার দোকানে সহযোগী হন। বছর তিনেক আগে বিয়েও করেছেন। রাইসা আফরিন নামে আড়াই বছর বয়সি তার এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
রিয়াদের বাবা মোহাম্মদ আলী জানান, রিয়াদ খুবই মেধাবী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে এখন তার এক পা অকেজো হওয়ার পথে। রিয়াদ সম্পূর্ণ সুস্থ হতে না পারলে পরিবারের সব স্বপ্ন ভেস্তে যাবে। একইসঙ্গে স্ত্রী-সন্তান ও মা-বাবার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। এজন্য তিনি সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।
"