বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
বীরগঞ্জের ইউএনও প্রত্যাহার দাবিতে বিক্ষোভ
দিনাজপুরের বীরগঞ্জের নির্বাহী কর্মকর্তা সেখানকার চৌধুরীহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন, এই বরখাস্তকে অন্যায় অভিহিত করে এর প্রতিবাদে ওই উপজেলার নির্বাহী অফিসার ইউএনও ফজলে এলাহির প্রত্যাহার দাবিতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষক, কর্মচারী ও সাধারণ জনতা। অবরোধের কারণে পুরো শহর অচল হয়ে যায়, যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। সড়কে আটকা পড়ে কয়েকশ যানবাহন।
গতকাল বুধবার সকালে বীরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষক পরিবার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির আয়োজনে বীরগঞ্জের বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী ও সাধারণ জনসাধারণ ইউএনওকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে তাকে প্রত্যাহার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অবরোধ চলে। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের দাবি পূরণের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয় এবং যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে, সকালে ইউএনও প্রত্যাহার দাবিতে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রবেশ কারতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধা অতিক্রম করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রবেশ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শুরু করেন। মানববন্ধন শেষে উপজেলা পরিষদের সামনে দিনাজপুর-পঞ্চগড় সড়ক অবরোধ করা হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়।
স্থানীয় শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক কবি নজরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন দিনাজপুর জেলা শিক্ষক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি মো. মিজানুর রহমান, কবিরাজহাট বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাকছুদা খাতুন, আমিনা করিম মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ কুমার সরকার, খামার খড়িকাদম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কাদের, আত্রাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। মানুষ গড়ার কারিগরদের হয়ে আমাদের রাজপথে আসতে হচ্ছে এটা দুঃখের কথা। ইউএনও শিক্ষক নির্যাতন, হয়রানির কারণে শিক্ষক সমাজ আজ রাজপথে। ইউএনও মো. ফজলে এলাহি যোগদানের পর থেকে ব্যাপক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, অসহনীয় ঘুষ দুর্নীতি এবং সব স্কুল প্রধানের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করেছেন। তার এসব আচরণ নিত্যদিনের কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে। শিক্ষক কর্মচারীদের ওপর তার সীমাহীন অত্যাচার বর্ণনাতীত।
তারা আরো অভিযোগ করেন, ক্ষমতার দম্ভে ইউএনও শিক্ষকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যজ্ঞান করেন। কথায় কথায় গালমন্দ করেন। কোনো প্রকার কারণ ছাড়াই অহেতুক শিক্ষক কর্মচারীর বিল বেতনে স্বাক্ষর না করে কালক্ষেপণ করেন। বীরগঞ্জের ইতিহাসে ইতোপূর্বে কোনো ইউএনও এ ধরনের খারাপ আচরণ ও ঘুষ দুর্নীতি করেন নাই।
তারা আরো বলেন, ইউএনও ফজলে এলাহি নিয়ম বহির্ভূত, একক ক্ষমতা বলে চৌধুরীহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রহমান খানকে অহেতুক বিধিবহির্ভুতভাবে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। কবিরাজহাট আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়সহ অন্য বিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করেছেন। বিভিন্ন কারণে বীরগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষাঙ্গনে চলছে চরম অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা। তার এসব আচরণে অতিষ্ঠ শিক্ষক কর্মচারীরা। এই ইউএনওকে দ্রুত প্রত্যাহার করা না হলে আমরা রাজপথ ছাড়ব না।
সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এসএস হাবিবুর হাসান ছুটে আসেন। তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনা শেষে দুপুর ২টায় অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক কবি নজরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম জানান, ইউএনও প্রত্যাহার আশ্বাসে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
দিনাজপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এসএস হাবিবুর হাসান জানান, বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
"