আদালত প্রতিবেদক

  ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

উচ্চ আদালতের রায়

১৫ আগস্টের ছুটির রায় স্থগিত

১৫ আগস্টকে ‘জাতীয় শোক’ দিবস ও ছুটি ঘোষণাসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। এদিকে ‘জয় বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে- হাইকোর্টের এমন রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। গতকাল সোমবার এ তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়ে ১৫ আগস্ট সরকারি ছুটির বিষয়ে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে বলে সোমাবার সাংবাদিকদের জানান অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক। শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দিনটি ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। তবে ২০০২ সালে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় শোক দিবস এবং সরকারি ছুটির সিদ্ধান্তটি বাতিল করা হয়। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত তিনজন আইনজীবী রিট করলে হাইকোর্ট বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। সে রায়ের ফলে এখন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন এবং সরকারি ছুটির সিদ্ধান্ত বহাল হয়। সম্প্রতি হাইকোর্টের ওই রায়ে স্থগিত চেয়ে আপিলের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগানের রায় স্থগিত চায় রাষ্ট্রপক্ষ : ‘জয় বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে, হাইকোর্টের এমন রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত সূত্রে এ কথা জানা গেছে। আগামী রবিবার আপিল বিভাগে এ বিষয়ে শুনানি হবে। এ বিষয়ে জারি করা রুলের নিষ্পত্তি করে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। রায়ের দিন আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিট আবেদনকারী আইনজীবী ড. বশির আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আদালত বাংলায় রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার সময় আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘জয় বাংলা জাতীয় ঐক্যের স্লোগান। জয় বাংলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় স্লোগান এবং জয় বাংলা ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’ আদালত আরো বলেন, ‘আবেদনকারী সংবিধানের ৩ ও ৪ নম্বর অনুচ্ছেদের ধারাবাহিকতায় জাতীয় স্লোগান হিসেবে জয় বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন, এটা এ আদালতের এখতিয়ারবহির্ভূত। কারণ কোনো আইন প্রণয়ন করা এবং সংবিধান সংশোধন করার একমাত্র অধিকার জাতীয় সংসদের।’

তবে রাষ্ট্রপক্ষ এ রুলের সমর্থনে হলফনামা দিয়েছেন উল্লেখ করে আদালত রায়ে বলেন, আইন সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব জয়বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করায় একমত পোষণ করেছেন। এরপর আদালত রায়ের আদেশ অংশ ঘোষণা করেন। আদেশে আদালত বলেন, ক. আমরা ঘোষণা করছি যে, জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে। খ. সকল জাতীয় দিবসগুলোয় এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীরা এবং রাষ্ট্রীয় সব কর্মকর্তা সরকারি অনুষ্ঠানের বক্তব্য শেষে জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ যেন করেন, সে জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। গ. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি সমাপ্তির পরে ছাত্র শিক্ষকরা যেন জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করেন, তার জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আদালতের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন ৩ মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে দাখিলে নির্দেশ দেওয়া হয়।

২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। রুলে ‘জয় বাংলা’কে কেন জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে ৫ ডিসেম্বর থেকে এ রুলের শুনানি শুরু হয়। রুলের বিবাদীরা হলেন- মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব ও শিক্ষা সচিব। ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর আদেশের পরে বশির আহমেদ বলেছিলেন, জয় বাংলা হচ্ছে আমাদের জাতীয় প্রেরণার প্রতীক। পৃথিবীর ৬০টি দেশে জাতীয় স্লোগান আছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য যে আমরা আমাদের চেতনার সেই ‘জয় বাংলা’কে স্বাধীনতার এতদিন পরও জাতীয় স্লোগান হিসেবে পাইনি। তিনি বলেন, জয় বাংলা কোনো দলের স্লোগান নয়, কোনো ব্যক্তির স্লোগান নয়, এটা হচ্ছে আমাদের ন্যাশনাল ইউনিটি। এ স্লোগান দিয়ে একদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close