আরিফ খান, বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা)
আরিচা-কাজিরহাট-বাঘাবাড়ী নৌচ্যানেল
ড্রেজিংয়েও নেই কাঙ্ক্ষিত উন্নতি পদ্মা-যমুনায় নাব্য অব্যাহত
মানিকগঞ্জের শিবালয়ের আরিচা থেকে পাবনার বেড়া-কাজিরহাট ও নগরবাড়ি নৌপথ সচল রাখতে ১৭ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার পলি অপসারণ করার পরও পদ্মা-যমুনায় নাব্যতা সংকট রয়ে গেছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এই নৌপথ। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ৬টি ড্রেজার দিয়ে রাত-দিন চলছে খনন। ড্রেজিংয়ে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সুফল। কিন্তু মাঝেমধ্যেই বেশ কদিন বন্ধ থাকছে ফেরি চলাচল।
স্থানীয়রা বলছেন, ড্রেজিংয়ে একদিকে যেমন সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে, অন্যদিকে কার্গোজাহাজ ও ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।
নৌপরিবহন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই নদীতে পানি কমে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়ে নৌ-চ্যানেল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে নৌ-ব্যবস্থাপনা পরিচালনা কর্তৃপক্ষ নভেম্বরে বাধ্য হয়ে তিনবার সাময়িকভাবে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখে। দ্রুত পানি কমায় নাব্যতা সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পানি কমার সঙ্গে বালুপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় চ্যানেলের অবস্থা দিন দিন শোচনীয় হয়ে পড়ছে। নৌ-চ্যানেলের বর্তমান যে অবস্থা, তাতে যেকোনো সময় কার্গোজাহাজ ও ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এদিকে ফারাক্কা ও গজলডোবা ব্যারাজের বিরূপ প্রভাবে পদ্মা ও যমুনায় দ্রুতগতিতে পানি হ্রাস এবং অপরিকল্পিত ড্রেজিংব্যবস্থার কারণেই আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে এই দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে নৌযান চালকরা মনে করছেন। চার মাসের বেশি সময় ধরে ৬টি ড্রেজার দিয়ে পলি অপসারণের পর কী কারণে নৌপথ সচল থাকছে না, এটাই এখন সবার প্রশ্ন।
খনন কাজে কোনো গাফিলতি ও অপরিকল্পনার অভাব আছে কিনা, তা ক্ষতিয়ে দেখা দরকার মনে করছে তারা।
জানা গেছে, আরিচা-কাজিরহাট-বাঘাবাড়ী নৌবন্দর নৌরুট সচল রাখতে চলতি বছরের ২৮ জুলাই থেকে চার মাসের বেশি সময় ধরে পদ্মা ও যমুনা নদীতে দিন-রাত পলি অপসারণ করা হচ্ছে। এতে বিআইডব্লিউটিএর (অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ) ড্রেজিং ইউনিটের নিজস্ব ৬টি ড্রেজার দিয়ে দিন-রাত কাজ করছে। এতে ব্যয় হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা, তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগের একটি সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের মিলিত প্রবাহ একসঙ্গে প্রবাহিত হয় যমুনা নদীতে। তবে উজানে পানি নিয়ন্ত্রণ করায় তিস্তা ও ব্রক্ষপুত্র নদের পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে যমুনায়। ফারাক্কা ব্যরাজের কারণে পদ্মা নদীতে পানিপ্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এতে পদ্মা ও যমুনায় নাব্যতা সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বেড়ার বাসিন্দা জাহিদ পাটোয়ারী বলেন, বিআইডাব্লিউএর যে আটটি ড্রেজার রয়েছে, তারা ঠিকমতো কাজ করছে না। যা করছে তাও আবার অপরিকল্পিত। ড্রেজিংয়ের পলি পাইপের সাহায্যে উজানে ফেলছে, সেই পলি ¯্রােতের টানে আবার ভাটিতে এসে জমা হচ্ছে। এভাবে অপরিকল্পিত ড্রেজিয়ের কারণেই নাব্যতা সংকট নিরসন হচ্ছে না বলে তিনি জানান।
অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডাব্লিউটিসি) আরিচাঘাটের ম্যানেজার আবু আব্দুল্লাহ বলেন, আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ঝুঁকি নিয়ে ফেরি চলাচল করছে। এভাবে কদিন চলবে, তা বলা মুশকিল। কারণ নাব্যতা সংকটের তেমন উন্নতি হয়নি। পানি কমে চ্যানেলে পলি পড়া অব্যাহত রয়েছে। বিগত চার মাসের বেশি সময় ধরে ড্রেজিং কাজ চলছে। কিন্তু এতে তেমন কোনো সুফল মিলছে না। এ অবস্থায় যেকোনো সময় আবার ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
বিআইডাব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, ‘আমাদের ড্রেজিং অব্যাহত রয়েছে। পুরান চ্যানেলের পাশে আমরা আরেকটি নতুন চ্যানেল খননের কাজ প্রায় শেষের পথে। গত বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আরিচা-কাজিরহাট-বাঘাবাড়ী পর্যন্ত পদ্মা যমুনায় প্রায় ১৭ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার পলিমাটি খনন করা হয়েছে। ড্রেজিংয়ে মূল সমস্যা হচ্ছে নদীতে প্রচণ্ড ¯্রােত। এ ¯্রােতের কারণে পলিমাটি কাটার পর উজান থেকে পলি বালু এসে আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে।’ ¯্রােত এবং অস্বাভাবিক মাত্রায় বালুরপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় কারণেই এবার ড্রেজিং করে নৌপথের নাব্যতা ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে তিনি জানান।
"