রায়হান সিকদার, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)
লবণে পিচ্ছিল সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি
লবণে পিচ্ছিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা। দিনে সড়কটি ঠিক থাকলে সন্ধ্যার পর থেকে প্রতিদিন চলাচল করতে থাকে লবণবোঝাই শত শত ট্রাক। প্রতিদিন রাতে খোলা ট্রাকে করে লবণ পরিবহনের কারণে লবণগলা (নিঃসৃত) পানিতে পিচ্ছিল হয়ে ওঠেছে মহাসড়ক। পাশাপশি সড়কের বিটুমিন উঠে যাচ্ছে। এ পিচ্ছিল সড়কে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। এতে ওই সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে লোহাগাড়ার সীমানা চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকা থেকে ঠাকুরদিঘী পর্যন্ত সড়কে লবণের গাড়ি বেশি চলাচল করে। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়, পথচারী, পর্যটক ও অন্যরা পরিবহনের যাত্রীরা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক দিয়ে কক্সবাজার থেকে লবণের পানি বোঝাইকৃত বড় বড় ট্রাকে করে চট্টগ্রামের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে লোহাগাড়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ চুনতি জাঙ্গালিয়া স্থানসহ লোহাগাড়ার বিভিন্নস্থান, কেরানিহাট, চন্দনাইশ ও পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন কমবেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রতিনিয়ত গাড়ি খাদে পড়ে যাচ্ছে। গত ২৮ নভেম্বর রাত পৌনে ১০টার দিকে পিচ্ছিল হওয়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পদুয়াপাড়া এলাকায় মিনিবাসের ধাক্কায় বাইক থেকে ছিটকে পড়ে সাতকানিয়া কলেজ শিক্ষার্থী মো. রাকিব (২১) নামে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত ও আরেকজন মোটরসাইকেল আরোহী আরিফ আহত হন, তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ট্রাক থেকে লবণ নিঃসৃত পানিতে পিচ্ছিল সড়কে যানবাহন চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চালকদের।
গাড়িচালক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে গাড়ি চালাতে মন চায় না। ভয়ে ভয়ে পিচ্ছিল সড়কে গাড়ি চালাতে হয়। গাড়ি চালানোর সময় গাড়ি নিয়ন্ত্রণে ব্রেক ধরা মুশকিল হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
মোটরসাইকেল আরোহী, পদুয়া ইউপি সদস্য আমানুল হক বলেন, প্রতিদিন লবণবাহী ট্রাক থেকে পানি পড়ে মহাসড়ক পিচ্ছিল হওয়ার কারণে আমরা বাইক চালানোর সময় আতঙ্কে থাকি। গাড়ি স্লিপ করে বেশি, অনেক কষ্টে বাইক চালাতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
লোহাগাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ চৌধুরী জানান, প্রতিদিন লবণবাহী ট্রাক থেকে পানি পড়ে মহাসড়ক পিচ্ছিল হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত মহাসড়কে গাড়ি চালানো খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। দিন দিন দুর্ঘটনা বাড়ছে।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ লোহাগাড়া শাখার সভাপতি মোহাজিদ হোসাইন সাগর জানান, লবণবাহী ট্রাক থেকে নিঃসৃত পানি পড়ে রাস্তা পিচ্ছিল হওয়ার ফলে মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। এই মৌসুমে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পর্যটকবাহী গাড়ি কক্সবাজার যায়। তাদের নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ ভূমিকা দেখতে পাচ্ছি না। তাই লবণবাহী ট্রাক থেকে যাতে পানি নিঃসৃত না হয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরি।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে লবণবোঝাই ট্রাকের কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে। লবণের গাড়ি দেখলেই আমরা মামলা দিয়ে সতর্ক করছি, এরই মধ্যে লবণবোঝাই কিছু ট্রাক গাড়িকে মামলা দেওয়া হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রাম দক্ষিণের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, মহাসড়কে লবণবোঝাই ট্রাকের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। খোলা ট্রাকে করে পরিবহনের সময় লবণ পানি নিঃসৃত হয়ে মহাসড়কের বিটুমিনের কার্পেটিংয়ের প্রলেপ উঠে যাচ্ছে। সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।
"