প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪

গণঅভ্যুত্থান গাথা

‘মা, আমার এখন কী হবে’ প্রশ্ন আহত জিল্লুরের

দরিদ্র রাজমিস্ত্রি বাবার পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে লেখাপড়া শেষ করে ভালো একটা চাকরির স্বপ্ন দেখছিলেন জিল্লুর রহমান। চেয়েছিলেন পরিবারের হাল ধরতে। কিন্তু তিনি নিজেই যে এখন পরিবারের বোঝা। দিন কাটছে আতঙ্কে, অস্থিরতায়। জিল্লুর রহমান সাতক্ষীরা সিটি কলেজের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত জিল্লুর রহমানের সব স্বপ্ন আজ মরীচিকা হয়ে তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে সাতক্ষীরা শহরের খুলনা রোড মোড় এলাকায় অবস্থিত এসপি বাংলো থেকে ছোড়া পুলিশের এক বুলেট তার পেটের ডান দিকে বিদ্ধ হয়। এতে তার পেটের ৯টি নাড়ি ছিদ্র হয়ে যায়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরপর দুবার অপারেশনের পর তার সেই গুলি বের করেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একদল অভিজ্ঞ চিকিৎসক। গুরুতর অসুস্থ জিল্লুর রহমান নিজ বাড়িতে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এদিকে ছেলের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ জোগাড় করতে গিয়ে দরিদ্র রাজমিস্ত্রি বাবা আবদুল খালেক রীতিমতো চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন। কবে তার সন্তান সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে তাও জানেন না তিনি।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহা ইউনিয়নের পাঁচরকি গ্রামের দরিদ্র রাজমিস্ত্রি আবদুল খালেকের (৫৫) বড় ছেলে জিল্লুর রহমান (২৩)। তিনি সাতক্ষীরা সিটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। জিল্লুরের মায়ের নাম তফুরা বেগম (৪০)। তিনি পেশায় গৃহিণী। মেজো ভাই আসাদুজ্জামান (২৪) পেশায় একজন টাইলস মিস্ত্রি। আর ছোট ভাই রাশিদুজ্জামান (২০) পেশায় একজন রাজমিস্ত্রির সহকারী।

গুলিবিদ্ধ আহত জিল্লুর রহমান জানান, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমিসহ আমার বন্ধুরা যোগ দিয়েছিলাম। জোহরের নামাজ শেষে আমি ও আমার সহযোদ্ধারা এসপি বাংলোর দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় পুলিশ আমাদের লক্ষ করে আচমকা গুলি ছোড়ে। এতে আমার পেটে এবং আমার সহযোদ্ধা নাহিদের পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আমরা গুরুতর আহত হই। আমার পেটের ডান দিক থেকে ভেতরে গুলি ঢুকে ৯টি নাড়ি ছিদ্র হয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এ সময় আমার সহযোদ্ধাসহ স্থানীয় লোকজন আমাদের উদ্ধার করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন। সেখানে প্রায় দুই মাস চিকিৎসা নেই। পরপর দুবার অপারেশন শেষে আমার পেটের ভেতর থেকে গুলি বের করা হয় এবং ছিদ্র নাড়িগুলো জোড়া লাগানো হয়।

তিনি বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ গুলি ছুড়লেও আজও পর্যন্ত দোষী ওইসব পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সে দিনের সেই অজানা আতঙ্ক এখনো মনের মধ্যে বিরাজ করছে।

এ সময় জিল্লুর এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া শেষ করে ভালো একটা চাকরি করে দরিদ্র পরিবারের হাল ধরার। কিন্তু আজ তা নিরাশায় পরিণত হয়েছে। দরিদ্র বাবার পক্ষে আমার লেখাপড়া তো দূরের কথা চিকিৎসাভার বহন করাই এখন খুবই কষ্টসাধ্য বিষয়।

তিনি আরো বলেন, দিন যতই যাচ্ছে আমি যেন আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছি। গায়ে বল পাচ্ছি না। ঠিকমতো এখন খেতেও পারি না। তিনি এ সময় তার লেখাপড়া ও চিকিৎসাভার গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান।

জিল্লুরের মা তফুরা বেগম বলেন, অনেক কষ্ট করে বড় ছেলেটা লেখাপড়া শিখছিল। আর ছোট দুই ছেলের তো টাকার অভাবে লেখাপড়া অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছি। ঠিকমতো খাবার দিতে পারি না। ভালো কাপড়-চোপড়ও দিতে পারি না। তার ওপর লেখাপড়ার খরচ কীভাবে চালাব। তাই দুই ছেলের লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছি। আর বড় ছেলেটা সে নিজেই অনেক কষ্ট করে টিউশনি করিয়ে তার নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজেই চালাচ্ছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্ট ছেলে আমার কলেজে যাওয়ার নাম করে সাতক্ষীরা শহরে গেল। তারপর কী যে হলো তা বুঝলাম না। পুলিশ আমার নিরীহ ছেলেটাকে কেন যে গুলি করল তা তো জানতে পারলাম না। গুলিবিদ্ধ হয়ে সে দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। টাকার অভাবে তাকে ভালো-মন্দ খেতেও দিতে পারি না। কান্নাকাটি করে, ব্যথা ও যন্ত্রণায় এখনো ছটফট করে আর আল্লাহকে ডাকে। ছেলেটা এখন ঠিকমতো খেতেও পারে না। দিন যত যাচ্ছে ততই সে রোগা হয়ে যাচ্ছে। গায়ে কোনো বল পায় না। তিনি এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ছেলে আমার খুবই হতাশ হয়ে পড়েছে। আমাকে বারবার বলে, মা আমার এখন কী হবে। তিনি এসময় তার ছেলের জন্যে সরকারের কাছে একটি সরকারি চাকরির দাবি জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close