বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

  ২৯ নভেম্বর, ২০২৪

বেনাপোলে এক সপ্তাহ বাস বন্ধ

হাজারো যাত্রী দুর্ভোগে

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে সাত দিনের মতো দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ রয়েছে। এতদিন বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও ভারতফেরত অনেক যাত্রী ১২ কিলোমিটার দূরে নাভারণ-সাতক্ষীরা মোড় থেকে সাতক্ষীরা রুটের গাড়ি ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। গত সোমবার থেকে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। এতে হাজার হাজার যাত্রীর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

যাত্রীদের চেকপোস্টে না নিতে দিয়ে গভীর রাতে পৌরবাস টার্মিনালে নামাতে বাধ্য করার অভিযোগে গত ২২ নভেম্বর রাত থেকে বেনাপোলের দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ রেখেছে মালিক সমিতি।

পাসপোর্ট যাত্রীর সুবিধার্থে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বেনাপোল চেকপোস্টের ফুটবল মাঠটি অধিগ্রহণ করে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৭ টাকা ব্যয়ে স্থলবন্দর বাস টার্মিনাল নির্মাণ করেন। দুই তলা বাস টার্মিনালের নিচতলায় রয়েছে বিভিন্ন পরিবহনের ১২টি টিকিট কাউন্টার, ৩০ হাজার স্কয়ার ফুটের পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, দ্বিতীয়তলায় রয়েছে যাত্রীদের জন্য রেস্টরুম ও ২টি দোকান। ২০১৩ সালের ২৩ আগস্ট সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বন্দর বাস টার্মিনাল উদ্বোধন করেন। তখন থেকে টার্মিনালে ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাস অবস্থান করছে। ফলে ভারত থেকে আগত ও ভারতগামী পাসপোর্টযাত্রীরা এ টার্মিনালের মধ্যে পরিবহনে ওঠানামা করে আসছেন। আন্তঃজেলা বাসগুলো বাজার থেকে চলাচল করত। এখন চেকপোস্টের বন্দর বাস টার্মিনালটি বন্ধ করে দেওয়ায় বন্দরের বড় অংশের একটি রাজস্ব কমে আসছে। খাঁ খাঁ করছে বন্দরের টার্মিনালটি।

বেনাপোল পরিবহন ম্যানেজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘দাবি-দাওয়া না মানায় পরিবহন মালিকরা তাদের গাড়ি এ রুটে চালাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সোমবার থেকে সাতক্ষীরা রুটও বন্ধ করে দিয়েছে মালিক সমিতি।’

সাতক্ষীরা কে লাইন পরিবহনের জামতলা কাউন্টার প্রধান আনোয়ার হোসেন বিদ্যুৎ বলেন, ‘বেনাপোলের সমস্যার সমাধান না হওয়ায় সাতক্ষীরা থেকে দূরপাল্লার পরিবহনের সব বাস বন্ধ করে দিয়েছে মালিক সমিতি। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো টিকিট বিক্রি করছি না।’ বেনাপোল চেকপোস্টে শ্যামলী এনআর বাস কাউন্টারের স্টাফ মনজিল হোসেন বলেন, ‘যাত্রী ভোগান্তি এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ না থাকার কারণে ঢাকার মালিকদের নির্দেশে চারদিন ধরে বেনাপোল রুটে কোনো যাত্রীবাহী বাস ছাড়েনি। তারা পরবর্তীতে নির্দেশ দিলে পরিবহন সেবা আবারো শুরু করা হবে।’ বেনাপোলে যানজট নিরসনে পৌরবাস টার্মিনাল ব্যবহারে নির্দেশনা দেয় জেলা প্রশাসন।

পরিবহন কর্তৃপক্ষ এতে সহমত পোষণ করে দিনের বাসগুলো ছাড়ছিল সেখান থেকেই। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুবিধায় রাতের বাস চেকপোস্ট টার্মিনালে এসে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ফিরে যাচ্ছিল পৌর টার্মিনালে। এর মধ্যে ২২ নভেম্বর গভীর রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসের যাত্রীদের হঠাৎ করে পৌরবাস টার্মিনালে নামিয়ে নেওয়া হয়। চেকপোস্ট টার্মিনালে বাস প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে দূর পাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখে মালিক সমিতি।

ভারতফেরত যাত্রী ঢাকার মাসুম বিল্লা বলেন, ‘ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে দ্রুত ফিরতে হয়েছে। এখানে এসে দেখি, বাস বন্ধ। আরেক বিপদ, হাতে টাকা-পয়সা কম। তারপরও ট্রেনে যশোর যাচ্ছি, দেখি সেখান থেকে কীভাবে বাড়ি যাওয়া যায়। যশোর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন পাপ্পু বলেন, ‘বেনাপোল চেকপোস্টে বন্দর ভেহিক্যাল টার্মিনাল চালু হওয়ায় কমে গেছে গাড়ির জট। বাস চলাচলে কোনো যানজট হয় না। ভারত-বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকের কারণে সৃষ্টি হত যানজটের।’ দূরপাল্লার যাত্রীদের নিরাপত্তা ও দুর্ভোগের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিবেচনার দাবি জানান মুসলিম উদ্দিন পাপ্পু।

এদিকে টানা এক সপ্তাহ ধরে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারী যাত্রীরা পড়ছেন সীমাহীন ভোগান্তিতে।

গন্তব্যে যেতে তারা প্রাইভেটকার, মাইক্রো বাস, ট্রেন ব্যবহার করছেন। এতে ভোগান্তি, সময় অপচয়ের পাশাপাশি খরচও বেশি হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করছেন। বেনাপোল চেকপোস্টে কথা হয় ভারতফেরত যাত্রী নেত্রকোণার সুরঞ্জিত দে, নারায়ণগঞ্জের আসলাম আকন্দ, ঢাকার সাদ্দাম হোসেন ও বিজয়কৃষ্ণ পালের সঙ্গে। সুরঞ্জিত দে বলেন, ‘ভারত থেকে দেশে ফিরে এখন দেখছি দুর্ভোগের শেষ নেই। পরে তিনজন মিলে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে যশোর যাচ্ছি। সেখান থেকে বাস ধরে বাড়ি যাব।’

বেনাপোলে বাণিজ্য স্বাভাবিক: ইসকন নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা বাংলাদেশে সব পরিষেবা আটকে দেওয়ার হুমকির পরও স্বাভাবিক রয়েছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও যাতায়াত। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাভাবিক দেখা যায় বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। এছাড়া দিনভর পাসপোর্টধারী যাত্রীর যাতায়াতও স্বাভাবিক দেখা গেছে। চিন্ময় দাস গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার মুক্তির দাবিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের পরিষেবা বন্ধের হুমকি দেন। এতে দিনভর গুজব ছিল বাণিজ্য ও যাত্রীসেবা বন্ধের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close