প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
পিলখানা হত্যাকাণ্ড
পুনঃতদন্ত ও চাকরি পুনর্বহালের দাবি
পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিরপেক্ষভাবে পুনরায় তদন্ত, বিচার ও নির্দোষ বন্দিদের মুক্তি এবং তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে গতকাল বুধবার রাজশাহীর সাহেববাজারে, গাইবান্ধা ডিবি রোড গানাসার্স মার্কেটের সামনে, ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে এবং বাগেরহাটে মানববন্ধন করেছেন চাকরিচ্যুত বিডিআর ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রাজশাহী ব্যুরো : নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধন করে। তারা পুনরায় নিরপেক্ষ তদন্ত ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবি জানান। এ ব্যাপারে তারা প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, সেনা, নৌ, বিমান ও বিজিবি প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল সমন্বয়ক, সুশীল সমাজ ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০০৯ সালে তৎকালীন সরকারের ষড়যন্ত্রের কারণে আজ তাদের এই পরিণতি। ভারতীয় সৈন্য অনুপ্রবেশ করানোর মাধ্যমে সংগঠিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দায়ভার নির্দোষ বিডিআর জওয়ানদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন। জেল-জুলুমের অত্যাচারসহ চাকরিচ্যুত সদস্যরা বিগত ১৫ বছর ধরে চরম আর্থিক অভাব-অনটন আর ধারদেনা করে দিন কাটাচ্ছেন। পুনরায় সীমান্তরক্ষাকারী বাহিনী (বিজিবিতে) যোগদান করার সুযোগ দাবি করেন তারা।
বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত চাকরিচ্যুত কোনো বিডিআর সদস্য রাষ্ট্রবিরোধী, সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থি কোনো কাজে যুক্ত হয়নি। পুনঃতদন্ত ও চাকরি পুনর্বহালের দাবি বাস্তবায়নের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল বাহিনীসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী, সুশীল সমাজ ও সর্বস্তরের জনগণকে পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানান।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধা ডিবি রোড গানাসার্স মার্কেটের সামনে গতকাল বুধবার এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। বিডিআর কল্যাণ পরিষদ গাইবান্ধা জেলা এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এর আগে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের উদ্দেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। নায়েক আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন সংগঠনের জেলা সমন্বয়ক সি. ভিএম আবদুর রাজ্জাক, সিপাহী আসাদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, মাহফুজ আলম, ইলিয়াস হোসেন, ফিরোজা বেগম প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখিত ৯ দফা দাবিগুলো হচ্ছে ২০০৯ সালে ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংগঠিত সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে তথাকথিত বিদ্রোহ সংজ্ঞায়িত না করে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে অ্যাখায়িত করা, ওই ঘটনায় ঢাকাসহ সারাদেশে বিডিআর ব্যাটালিয়ন ও সেক্টরে গঠিত সকল প্রহসনের বিশেষ আদালতকে নির্বাহী আদেশে বাতিল, চাকরিচ্যুত সকল পদবীর বিডিআর সদস্যকে সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল, হাইকোর্টের বিচারকদের রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মোটিভ উদ্ধার ও কুশীলবদের শনাক্ত করে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন, হত্যাকাণ্ডে শাহাদাতবরণকারী ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া, ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা ট্র্যাজিডি দিবস হিসেবে ঘোষণা, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পরবর্তী তদন্ত/জিজ্ঞাসাবাদে নিরাপত্তা হেফাজতে যেসকল নিরীহ বিডিআর সদস্যদের নির্যাতনপূর্বক হত্যা করা হয়েছে তাদের তালিকা প্রকাশ, মৃত সকল পদবীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করা, তদন্ত/জিজ্ঞাসাবাদে নিযুক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যারা নিরীহ নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের নির্যাতনপূর্বক হত্যা করেছে তাদের শনাক্তপূর্বক বিচারের আওতায় আনা, বিশেষ আদালত কর্তৃক বিভিন্ন মেয়াদে সাজাভোগ শেষকারী বিডিআর সদস্যরা যারা প্রহসনের বিস্ফোরক মামলায় দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত কারা অন্তরীণ আছেন তাদের অনতিবিলম্বে জামিন ও মামলা থেকে অব্যাহতিপূর্বক মুক্ত করা।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে গতকাল দুপুরে শহরের পায়রা চত্বরে বিডিআর কল্যাণ পরিষদ ও জেলার ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর সদস্যদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেয়। বক্তব্য দেন, বিএম কামরুজ্জামান, হাবিলদার আলিফ হোসেন, মনিরুল ইসলামসহ সংগঠনটির অন্যান্য সদস্যরা।
বক্তারা বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সিমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার পরিকল্পিতভাবে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে। তাদের হত্যার পুনঃবিচার সেসময়ের চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনঃবহালের দাবি জানান।
বাগেরহাট : বাগেরহাট জেলা বিডিআর কল্যাণ পরিষদের আয়োজনে বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন হয়েছে। সেখানে বক্তারা বলেন, এটি তৎকালীন সরকারের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের একটি ঘটনা। ওই ঘটনায় আমরা ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন দেশপ্রেমিককে হারিয়েছি। প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে সহস্রাধিক বিডিআর সদস্যকে জেলে বন্দি রাখা হয়েছে। বর্তমান সরকারের নিকট সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় শাস্তি নিশ্চিত করা এবং নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের অনতিবিলম্বে জেল থেকে মুক্তির দাবি করছি।
"