চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর ও সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

  ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

তিন স্থলবন্দর হয়ে ফের পেঁয়াজ আমদানি

একদিন বন্ধ থাকার পর সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক ৫১টি ভারতীয় পেঁয়াজের ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকেছে। এখনো সীমান্তের ওপারে অপেক্ষায় আছে আরো তিন শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। গতকাল বুধবার দুপুর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ, দিনাজপুরের হিলি ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আবারো পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে।

সনাতন জাগরণ মঞ্চের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার আলু ও পেঁয়াজ রপ্তানিতে ট্রাকের অনলাইন স্লট বুকিং বন্ধ করে দেয়। এর ফলে বন্দরে দুদিন বন্ধ ছিল আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন সোনামসজিদ বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের অপারেশন ম্যানেজার কামাল খান, হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী ও ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ আসছে: কামাল খান জানান, গতকাল বুধবার দুপুর ২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এক ঘণ্টায় রেকর্ড ৫১ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ এবং ৯ ট্রাক আলু বন্দরে প্রবেশ করেছে। আমদানিকৃত পেঁয়াজের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২০ টন। এছাড়া আরো ২ শতাধিক ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য মোহদীপুরে অপেক্ষা করছে। তিনি বলেন, মূলত রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকদের আন্তরিকতার মাধ্যমেই কোনো পণ্য কী পরিমাণ বাংলাদেশে ঢুকবে তা নির্ধারণ হয়ে থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, এ কারণেই বেলা ২টা থেকে যেসব পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করছে তার ৯০ ভাগই পেঁয়াজের ট্রাক, ৫ ভাগ আলুর এবং অন্য পণ্যের ৫ ভাগ ট্রাক।

স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল বুধবার সারাদিনে ১০০ ট্রাকের বেশি আলু এবং ২ শতাধিক পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আরিশা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আলমগীর জুয়েল বলেন, আলু আমদানির বিষয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সারাদিনে ১০০ ট্রাকের বেশি আলু আমদানি হতে পারে।

সোনামসজিদের অন্যতম বৃহৎ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শুভ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইসমাইল হোসেন বলেন, চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই অন্য বন্দরের ন্যায় সোনামসজিদ বন্দরে এর প্রভাব পড়তে আরম্ভ করে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ ও আলুভর্তি কোনো ট্রাক প্রবেশ করেনি। তবে গতকাল বুধবার দুপুর থেকে আগের এলসি করা পেঁয়াজগুলো দিচ্ছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

ভারতের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আরআই এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইকবাল হোসেন ফোনে জানান, চলমান জটিলতায় ভারতের মোহদীপুর এলাকায় ২৫০টি পেঁয়াজের এবং ১০০টি আলুর ট্রাক আটকে রয়েছে। তবে ট্রাকের অনলাইন স্লট বুকিং বন্ধ থাকায় নতুন করে কোনো পণ্য ট্রাকে লোড করা হচ্ছে না। বেলা ১২টার পর থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য অপেক্ষায় থাকা এসব ট্রাক পাঠানো আরম্ভ হয়েছে। এদিকে দেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে গত ২৪ ঘণ্টায় কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত। আর আলু ৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বুধবার সকালে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম আরো ৫ টাকা।

শিবগঞ্জ কাঁচাবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রবিউল বলেন, গত সোমবার ৭৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনে ৮০ টাকায় বিক্রি করেছি। গত মঙ্গলবার কিনতে হয়েছে ৮০ টাকা কেজি। তাই বিকেল থেকে ৯৫ টাকা কেজি বিক্রি করছি। গতকাল বুধবার কয়েকজনের কাছে পেঁয়াজ না পাওয়ায় ৫ টাকা বেশি দিয়ে কিনলাম। তবে বন্দরে পেঁয়াজ আসার খবরে দাম না কমলেও স্থিতিশীল রয়েছে।

আতাউর রহমান নামে খুচরা আলু ব্যবসায়ী বলেন, পণ্য আমদানি স্বাভাবিক থাকলে হয়তো আবার কমবে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। এর আগে সোমবার বিকেলে ভারতে উৎপাদিত আলু ও পেঁয়াজ অন্য দেশে সরবরাহ করবে না বলে রপ্তানিতে স্লট বুকিং বন্ধ করে দেয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আলু ও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এই এলাকায় বৃদ্ধি পায় আলু ও পেঁয়াজের দাম।

এদিকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল বধুবার বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে পেঁয়াজ বোঝাই ৫টি ট্রাক প্রবেশ করে। এর মধ্য দিয়ে আবারো হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে পেঁয়াজ আমদানি হলেও আলু আমদানি বন্ধ রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী।

সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী বলেন, ভারত থেকে স্লট বুকিং বন্ধ থাকায় পেঁয়াজ, আলু রপ্তানি করতে পারেনি ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এতে করে তাদের অনেক লোকসান হয়। যার কারণে তারা সকল পণ্য রপ্তানি বন্ধ করেছিল। রাতে সমস্যার সমাধান হলে পুনরায় বুধবার সকাল থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। তবে এখনো আলু আমদানি হয়নি। সকল সমস্যা কাটিয়ে দ্রুত সব ধরনের পণ্য ভারত থেকে আমদানি হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ভারত থেকে আমদানি বন্ধের অজুহাতে বেড়েছে চাল, পেঁয়াজ ও আলুর দাম। তিন দিনের ব্যবধানে বেড়েছে জিরাশাইল ও সম্পাকাটারী চালের দাম। জিরাশাইল কেজিপ্রতি ২ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় এবং সম্পাকাটারী ২ টাকা বেড়ে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সেসঙ্গে বেড়েছে ভারতীয় পেঁয়াজ ও আলুর দাম। পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা এবং ভারতীয় আলু কেজিপ্রতি ১২ টাকা বেড়ে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

হিলি কাস্টমসের তথ্যমতে, চলতি সপ্তাহে ভারত থেকে ৫৫ ট্রাকে ২ হাজার ২০০ মেট্রিকটন চাল, ১৬৬ ট্রাকে ৪ হাজার ৭০০ মেট্রিকটন আলু এবং ৪৫ ট্রাকে ১ হাজার ৩০০ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে।

ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ ও আলুর আমদানি স্বাভাবিক: সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ ও আলুর আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৭ ট্রাক পেঁয়াজ ও ১৫ ট্রাক আলু বন্দরে প্রবেশ করেছে।

আমদানিকারক মো. মোহসিন বলেন, সকাল থেকে ভোমরা স্থলবন্দরে ২২ ট্রাক আলু ও পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এছাড়া ভারতীয় অংশে ঘোজাডাঙা বন্দরে এখনো ৩০ ট্রাক পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। সন্ধ্যার আগে এগুলো বাংলাদেশে আসতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমানে শুধু আগে থেকে এলসি করা ও স্লট বুকিংকৃত পণ্য আমদানি হচ্ছে। চলতি সপ্তাহ থেকে নতুন কোনো স্লট বুকিং করা যাচ্ছে না। এজন্য আগামী কয়েকদিন পর আমদানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা বলেন, এখন পর্যন্ত ভারত সরকার পেঁয়াজ ও আলু রপ্তানি বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এছাড়া এলসি খোলার ক্ষেত্রেও কোনো সমস্যা নেই। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন করে স্লট বুকিং বন্ধ রাখায় আমদানিতে প্রভাব পড়তে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close