জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ
হাওরের পানি নামছে ধীরগতিতে চিন্তিত কৃষক
চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের ‘হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধ’ নির্মাণে জরিপকাজ শেষ করে ১ অক্টোবর উপজেলা কমিটির কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের কথা ছিল। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে জেলা কমিটির কাছে জরিপের প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা থাকলেও হাওরে পানি থাকায় জরিপকাজই শেষ করা যায়নি। এর ফলে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এতে হাওরের চাষাবাদও পিছিয়ে পড়বে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক।
সুনামগঞ্জ জেলার ৭৪ শতাংশ মানুষই বোরো ফসলের উপর নির্ভরশীল। নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই বোরো ধানের চারা রোপণ শুরু হয় প্রতিবছর। তবে এবার হাওরে এখনো পানি থাকায় চারা রোপণ করতে পারছে না কৃষকরা। নীতিমালা অনুযায়ী একমাত্র বোরো ফসল রক্ষায় হাওরে বাঁধের জরিপ কাজ শেষ করে অক্টোবরের শুরুতেই উপজেলা কমিটিতে ও ৩০ অক্টোবরের মধ্যে জেলা কমিটিতে প্রকল্প উপস্থাপন করার কথা। হাওরে এখনো জলাবদ্ধতা থাকার কারণে জরিপ কাজই এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। নীতিমালানুযায়ী হাওরে বাঁধের জরিপ কাজ শেষ করে ৩০ নভেম্বরের ভেতর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করার কথা। কিন্তু এখনো জরিপ কাজই শেষ না হওয়ায় এবার বাঁধের কাজ অনেক পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
প্রতিবছরই আগাম বন্যার হাত থেকে বোরো ফসল রক্ষায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে হাওরে বাঁধ করা হয়। হাওরে জরিপ কাজ শেষ করে ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু ও ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড হাওরে বাঁধ নির্মাণের জন্য জেলার কিছু এলাকায় সামান্য প্রাথমিক কাজ হিসেবে প্রকল্প প্রণয়ন ও ব্যয় নির্ধারণের জন্য জরিপ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তা একেবারেই কম। সময়মতো চাষাবাদ ও বাঁধের কাজ শেষ করতে পারলে আগাম বন্যার একটা শঙ্কা থাকে হাওরের কৃষকদের মাঝে।
জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওর পাড়ের কৃষক তপন কুমার দাস বলেন, অন্য বছর আমরা নভেম্বর মাসের শুরুতেই বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করি। কিন্তু হাওরের পানি এখনো না কমায় বীজতলা তৈরি করতে পারছি না।
হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় প্রতিবছর বাঁধ দেওয়া হয়। আর সেই বাঁধের মেরামত ও নতুন করে নির্মাণ করার জন্য প্রকল্প জরিপের কাজ শুরু হয় অক্টোবর মাস থেকে। কিন্তু এখনো হাওরে পানি থাকায় অধিকাংশ হাওরে পুরোদমে জরিপ কাজ শুরু করতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাহাদুর গ্রামের প্রদীপ বর্মণ বলেন, এবার হাওরে পানি থাকার কারণে এখনো বাঁধের কাজ শুরু করার কোন লক্ষণ দেখছি না। দ্রুত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ না হলেও আরেক দুশ্চিন্তা থাকে। পানি দ্রুত না নামলে বাঁধেও কাজ তড়িঘড়ি করে করা হয়। এতে বাঁধ টেকসই কম হয়। ফলে আগাম বন্যার ধাক্কা লাগে। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জে ১২৩টি হাওরে প্রায় ১১শ কিলোমিটার বাঁধের কাজের জরিপ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, এখনো হাওরে পানি তাই আমরা জরিপকাজ করতে পারছি না। তিনি বলেন, জরিপকাজ করার জন্য এরই মধ্যে বিষেশজ্ঞ দল সুনামগঞ্জে অবস্থান করছে। পানি নেমে গেলেই জরিপ কাজ শেষ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কাজ শেষ করে বাঁধের কাজ শুরু হবে।
"