এম এ বাসেত, তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়)

  ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

তেঁতুলিয়ায় দেখা মিলছে মোহনীয় কাঞ্জনজঙ্ঘার

বাংলাদেশ থেকে দেখা মিলছে হিমালয় পাহাড়। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শৈল্যশহর দার্জিলিংয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার অবস্থান। আর বাংলাদেশের মধ্যে তেঁতুলিয়া দার্জিলিংয়ের সবচেয়ে নিকটবর্তী উপজেলা। বরফ আচ্ছাদিত কাঞ্জনজঙ্ঘা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। শীতের মেঘমুক্ত আকাশে এখন তেঁতুলিয়া থেকে স্পষ্ট দেখা দিয়েছে হিমালয় দুহিতা কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ। বাংলাদেশ থেকে হিমালয় দেখার সুযোগ যাতে হাতছাড়া না হয়, এজন্য ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় করছেন তেঁতুলিয়ায়। খালিচোখে খুব কাছাকাছি হিমালয় দেখার জন্য বেশকিছু পর্যটন স্পট গড়ে তোলা হয়েছে।

সারধারণত মেঘমুক্ত পরিষ্কার আকাশ থাকলে কমবেশি সব ঋতুতেই তেঁতুলিয়াসহ পঞ্চগড়ের সবখান থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। তবে অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আকাশ মেঘমুক্ত থাকে, এজন্য ওই সময় পরিস্কার দেখা যায়, কিন্তু ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে কুয়াশায় ঢেকে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসেও কাঞ্জনজঙ্ঘার দেখা মেলে। যদি আকাশ পরিস্কার না থাকে তবে দেখা যায় না।

সাধারণত ভোরে সূর্য উঠার সময় মহনীয় হয়ে ওঠে কাঞ্চনজঙ্ঘা। সাদা বরফে ভোরের সূর্যের সোনালী আলো ঠিকরে পড়ে লালচে রংয়ের এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। আবার দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যার আগ মুহূর্ত ধূসর বর্ণের রং ধারণ করে। এই অভাবনীয় মোহনীয় রূপ যে কাউকে আবিষ্ট করবে, সন্দেহ নেই।

নভেম্বরে ডিসেম্বরে তেঁতুলিয়া আসতে অতি অবশ্যই শীতের কাপড় আনতে হবে। কারণ সেখানে দেশের যেকোনো স্থানের চেয়ে সাধারণত বেশি শীত অনুভূত হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে আসতে যমুনা সেতু পার হওয়ার পরে উত্তরের দিকে যতই যাওয়া যাবে, ততই শীতের প্রকোপ বাড়বে।

তেঁতুলিয়ায় অন্যান্য দর্শনীয় স্থান : তেঁতুলিয়া সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর জিরোপয়েন্ট ও সাপ্তাহিক বিজিবি-বিএসএফের রিটট্রিট প্যারেড, তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো, তেঁতুলিয়া পুরাতন বাজার মহানন্দাপার্ক, বড় বিল্লা হাতিফাঁসা বোম, সমতলে চা বাগান, চা কারখানা, বোম্বাই বা কাঞ্জন বাঁশ, তেঁতুলিয়া মডেল মসজিদ, আইলাভ তেঁতুলিয়া রাবার বাগান, প্রাচীন শিব মন্দির, রওশনপুর মিনাবাজার প্রভৃতি। এছাড়া পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে পাথরের জাদুঘর বা রক্স মিউজিয়াম, হিমালয় পার্ক, সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে বোর্ড বাজার মহারাজার দিঘি, মির্জাপুর শাহী মসজিদ, আটোয়ারী বারো আউলিয়ার মাজার। এসব স্থানে স্বল্পভাড়ায় লোকাবাস ও ইজিবাইকে এবং ভ্যানযোগে যাতায়াত করা যায়। তবে ভ্যান ও ইজিবাইকে উঠার আগে স্থান ভেদে ভাড়া ঠিক করে নেওয়া ভালো।

তেঁতুলিয়া আসার যানবাহন : ঢাকা থেকে দূরপাল্লার নাইটকোচ হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলি এন্টারপ্রাইজ, ঢাকা এক্সপ্রেস, কান্তিপরিবহন, বুড়িমাড়ি স্লিপার, শেমলি স্লিপার কোচ, ঢাকা স্লিপার কোচ নিয়মিত বাংলাবান্ধা তেঁতুলিয়া যাতায়াত করে। এছাড়া কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনে পঞ্চগড় স্টেশনে নামে লোকাল বাসে তেঁতুলিয়ায় আসা যায়। তবে এখনো ঢাকা থেকে সরাসরি তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধা ডে কোচ বাস সার্ভিস চালু হয়নি। এসব নাইট কোচ ও স্লিপার বাসে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে ভাড়া দিয়ে আসা যায়। এছাড়া পঞ্চগড় শহর থেকে তেঁতুলিয়াগামী লোকাল বাসে ৮০ টাকা ভাড়া তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো পর্যন্ত পৌঁছানো যায়।

সাধারণ পর্যটকদের দাবি বাংলাবান্ধা-তেঁতুলিয়া-ঢাকা সরাসরি ডে কোচসহ বিআরটিসি অন্যান্য সার্ভিস চালু হলে পঞ্চগড়ে পর্যটন শিল্পের আরো বিকাশ লাভ করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

রাত যাপনে আবাসিক : তেঁতুলিয়ায় পর্যটকদের জন্য এখনো সরকারি ও বেসরকারিভাবে পর্যাপ্ত আবাসিক গড়ে উঠেনি। তবে জেলা পরিষদ পুরাতন ডাকবাংলো, পিকনিক কর্নার বাংলো, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বাংলো, তেঁতুলিয়া মডেল থানা বাংলো, বন বিটের বাংলো, বেরং কমপ্লেক্সসহ এসব সরকারি আবাসিক বাংলোতে রাত যাপনের জন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখেন। ফলে সাধারণ পর্যটকদের পক্ষে সেসব বাংলোতে থাকার সুযোগ কম। তবে বেসরকারিভাবে উন্নতমানের ইএসডিও মহানন্দা কর্টেজ, স্কয়ার আবাসিক, কাঠেরবাড়ি গেস্ট হাউস, দোয়েল আবাসিক, দার্জিলিং আবাসিক, কাঞ্জনজঙ্ঘা আবাসিক, স্বপ্নগেস্ট হাউস, হিমালয় আবাসিক, কাজী ব্রাদাস, হোটেল সীমান্তের পাড় সহ আরও বেশ কিছু স্থানীয়দের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা আছে। সব আবাসিক হোটেলের অবস্থান তেঁতুলিয়া সদরের আশপাশে।

তেঁতুলিয়া চৌরাস্তা বাজারের আশপাশে বেশকিছু রেস্টুরেন্ট ও চায়ের দোকান আছে। এদের মধ্যে বাংলা হোটেল, জান্নাত হোটেল, কিছুক্ষণ হোটেল অ্যান্ড রেস্টরেন্ট, শাপলা হোটেল, নুরজাহান হোটেলসহ আরো বেশকিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

তেঁতুলিয়া পর্যটকদের জন্য একটি নিরাপদ ভ্রমণের অঞ্চল। এখানকার সাধারণ মানুষ খুবই অতিথিপরায়ন। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাদা পোশাক ও খাকি পোশাক পরিহিত অবস্থায় সার্বক্ষণিক টহলে থাকে। এছাড়া পঞ্চগড় জোনের অধীনে একটি টুরিস্ট পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close