বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
বেনাপোলে তৃতীয় দিনের মতো বাস বন্ধে ভোগান্তি
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে তৃতীয় দিনের মতো দূরপাল্লার সব পরিবহন বন্ধ থাকায় ভারতফেরত হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। যাত্রীদের গভীর রাতে পৌর বাস টার্মিনালে নামতে বাধ্য করার অভিযোগে গত শুক্রবার রাত থেকে বেনাপোলের দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ রেখেছে মালিক সমিতি।
গতকাল রবিবার প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পরও বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় বেনাপোল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ বাস চলাচল শুরু হবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না।
বেনাপোল পরিবহন ম্যানেজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের জন্য আজ (গতকাল) দুপুরে আমরা সব পরিবহনের ম্যানেজাররা যশোর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠকে জেলা প্রশাসক বলেছেন যে, উপদেষ্টার নির্দেশে এটা করা হয়েছে। উপদেষ্টার নির্দেশ ছাড়া কোনো কিছু করা সম্ভব না। পৌর টার্মিনাল থেকেই যাত্রী উঠাতে ও নামাতে হবে। আমাদের দাবি-দাওয়া না মানায় পরিবহন মালিকরা তাদের গাড়ি এই রুটে চালাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামীকাল থেকে সাতক্ষীরা রুটও বন্ধ করে রাখবে বলে মালিকরা জানিয়েছেন।’ এদিকে হঠাৎ করে বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ থাকায় আটকা পড়েছেন ভারত থেকে আসা হাজার হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী। গন্তব্যে যেতে তারা প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রেন, ইজিবাইক, জেএসএ, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নসিমন ব্যবহার করছেন। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি খরচও বেশি হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও ১২ কিলোমিটার দূরে নাভারন সাতক্ষীরা মোড় কিংবা যশোর থেকে ভারতফেরত অনেক পাসপোর্টধারী যাত্রী গাড়ি ধরে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন। ভারত থেকে ফিরে নাভারন সাতক্ষীরা মোড়ে সাতক্ষীরা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী বাসের অপেক্ষায় বসে আছেন ঢাকার মন্দিরা ঘোষ, দেলোয়ার হোসেন, নারায়ণগঞ্জের কাজল চন্দ্র দে, ফতুল্লার দেলোয়ার হোসেন তানিম ও খুলনার মনোতোষ বসু।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা বেণীমাধব বলেন, বেনাপোল থেকে বাস না ছাড়ায় বাধ্য হয়ে অটোরিকশায় নাভারন সাতক্ষীরা মোড়ে এসেছি। অপেক্ষা করছি, সাতক্ষীরা থেকে কখন বাস আসবে। কখন বাস আসবে এখানে কেউ বলতে পারছে না। ঢাকার বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ভারত থেকে ফিরে বেকায়দায় পড়েছি। বাস চলছে না, আগে জানলে ফিরতাম না।’
নারায়ণগঞ্জের দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি অসুস্থ মানুষ। চিকিৎসা নিতে ভারত গিয়েছিলাম। এখন ফিরে দেখছি দুশ্চিন্তায় আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছি।’ ভারত থেকে আসা ঢাকার শহীদুল্লাহ দেওয়ান নামের একজন যাত্রী জানান, পরিবারসহ ভারত গিয়েছিলেন। ফিরে শোনেন বাস বন্ধ। সে কারণে তিনি ট্রেনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অপর যাত্রী লিটন অধিকারী বলেন, ‘আমি প্রাইভেট কার ভাড়া করে যশোরে এক আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছি। ওখান থেকে পরে ঢাকায় যাব।’ এ ব্যাপারে বেনাপোল পৌর প্রশাসক ও শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী নাজিব হাসান বলেন, ‘আমরা তো চেকপোস্টের বাস টার্মিনাল বন্ধ করিনি। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী টার্মিনালের গেট বন্ধ রেখেছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেনের নির্দেশে এটি করা হয়েছে। তার নির্দেশনা ছাড়া আমাদের পক্ষে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়।’
"