আব্দুর রহমান ইমন, চট্টগ্রাম

  ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল

তালিকায় ভুয়া ভোটারের নাম

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। হাসপাতালের ভোটার তালিকায় রয়েছে অফিসের পিয়ন, কাজের বুয়াসহ অসংখ্য ভুয়া সদস্য। এ নিয়ে হাসপাতালের অন্য সদস্যদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।

আসন্ন নির্বাচনে ভুয়া ডোনার ভোটার অন্তর্ভুক্ত করার এ অভিযোগ তোলেন হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার লায়ন মোহাম্মদ জাবেদ আবছার চৌধুরী। এ ব্যাপারে তিনি নির্বাচন কমিশনার নুরুল উল¬াহ নুরি বরাবর লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন এবং তদন্তপূর্বক ভুয়া ডোনার ভেটার বাতিলের আহ্বান জানান।

এছাড়াও তিনি অভিযোগে বলেন, হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আজাদ তার আত্মীয়স্বজন ও ব্যক্তিগত অফিস সহকারী, ঘরের বুয়া ও পিয়নসহ প্রায় ১১০ জনকে অবৈধভাবে ডোনার সদস্য বানিয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

ভোটার তালিকায় ১১০ জন ভুয়া সদস্যদের তালিকা হলো ১১৩ থেকে ১১৯ সাতজন, ১২১ থেকে ১২৩ নম্বরে ৩ জন ও ১৩৩ থেকে ১৫০ নম্বরে ১৮ জন, ২০৭ থেকে ২৩৯ নম্বরে ৩৩ জন, ২৫৪ থেকে ২৫৯ নম্বরে ৬ জন, ৩৩২ থেকে ৩৫০ নম্বরে ১৯ জন।

অভিযোগে তিনি আরো উলে¬খ করেন, প্রফেসর ডা. আবু তাহেরের অনুদান থেকে অনুমতি ছাড়া ৩৫১ থেকে ৩৭৪ নম্বরের ২৪ জনকে ডোনার সদস্য হিসেবে যুক্ত করেছে হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আজাদ। এছাড়াও দুজন মৃত সদস্যের নামও হাসপাতালের ভোটার তালিকায় রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে জাবেদ আবছার চৌধুরী জানান, এই ভুয়া ও মৃত ভোটারদের উপস্থিতি হাসপাতালের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অবাধ ও নিরপেক্ষ রাখার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, ন্যায় বিচার না পেলে উচ্চ আদালতে যাবো, প্রয়োজনে হাইকোর্টে রিট করব, ভুয়া ভোটারদের বিরুদ্ধে প্রতারনার মামলা করব।

মুঠোফোনে জাবেদ আবছার বলেন, বহুবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দাখিল করলেও এই ভুয়া সদস্যদের চিহ্নিত করতে কোনো পদক্ষেপ নেননি। এদিকে নাম মাত্র বেতনে যার সংসার চলে, সে পিয়ন কীভাবে ৫ লাখ টাকা নগদ ডোনেশনে সদস্য হয়! এই টাকার উৎস কি তা জানতে আগ্রহী অন্যান্য সদস্যরা। এ যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। এই ঘটনার প্রকৃত সত্য বের করতে এবং হাসপাতালটিকে রক্ষা করতে কঠোর তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন অন্যান্য সদস্যরা।

এছাড়াও হাসপাতালের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে রয়েছে দীর্ঘ দিনের দুর্নীতির অভিযোগ। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ মোরশেদ এবং সাধারণ সম্পাদক আজাদের শক্তিশালী ‘মামা-ভাগিনা’ সিন্ডিকেট হাসপাতালের আর্থিক তহবিলের অপব্যবহার করে নিজেদের ক্ষমতা সুসংহত করেছে। হাসপাতালের উন্নয়ন প্রকল্প, যন্ত্রপাতি কেনাকাটা এবং বিভিন্ন সেবা সংক্রান্ত অর্থ সংগ্রহের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের তহবিল পরিচালনা ও সরকারি অনুদান বরাদ্দের ক্ষেত্রে এই সিন্ডিকেট অবৈধ উপায়ে দুর্নীতি এবং অনিয়ম করছে। নানা ভাবে ‘বিবিধ খরচ’ দেখিয়ে অনুদানের টাকা তোলার নামে জনগণের অর্থ লুটপাট করছে এই সিন্ডিকেট।

হাসপাতালের অন্য সদস্যদের দাবি, হাসপাতালটি এক ধরনের ব্যক্তিগত জমিদারবাড়িতে পরিণত হয়েছে, যেখানে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি পদে থাকা ব্যক্তিরা সব ধরনের বিলাসবহুল সুবিধা ভোগ করছেন।

হাসপাতালের এই সব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে কঠোর অবস্থানে থাকার আহ্বান জানান হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার লায়ন মোহাম্মদ জাবেদ আবছার চৌধুরী। তিনি বলেন, এই হাসপাতাল কারো একার না, এটা সাধারণ জনগণের হাসপাতাল। এখানে কোনো দুর্নীতি চলবে না। দরকার পড়লে সব দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে মামলা করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close